দলের সবাই বিশ্বাস করত বাংলাদেশ বিশ্বকাপ জিতবে: আকবর
৩ জুন ২০২০ ২২:৪২
সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, তামিম ইকবালরা পারেননি। মেহেদি হাসান মিরাজের নেতৃত্বে ২০১৬ সালে দেশের মাটিতে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে সেমিতে থেমে যেতে হয়েছিল। ওই সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাওয়াটাই পুরুষ ক্রিকেটে যে কোন পর্যায়ে বাংলাদেশের সেরা সাফল্য ছিল। গত ফেব্রুয়ারিতে আকবর আলীর নেতৃত্বে সেই আক্ষেপ ঘুচেছে।
দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। আকবর আলী, পারভেজ হোসেন ইমন, শরিফুল ইসলাম, রাকিবুল ইসলামদের প্রথম বিশ্বকাপ শিরোপার দেখা পেয়েছে বাংলাদেশ। বিশ্বজয়ী দলের অধিনায়ক আকবর আলী বললেন, শিরোপা জয়ের বিষয়ে তার দল আগে থেকেই বিশ্বাসী ছিল।
ডিজিটাল প্লাটফর্ম র্যাবিটহোলের আয়োজন ‘ক্রিকাড্ডা’য় যুক্ত হয়ে এমন কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক। এক প্রশ্নের উত্তরে আকবর বলেন, ‘আমাদের দলের প্রত্যেক প্লেয়ারের মধ্যে এই বিশ্বাসটা ছিল যে, আগের ছয় মাসে যে ক্রিকেটটা খেলেছি সেটা ধরে রাখতে পারলে আমরা বিশ্বকাপ শিরোপা জিতব। এই বিশ্বাসটা দলের প্রতিটা ক্রিকেটারের মধ্যেই ছিল। আমি বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগেও গণমাধ্যমকে বলেছিলাম, আমরা ফাইনালের টার্গেট করতেই পারি।’
আকবর জানিয়েছেন, বিশ্বকাপে ড্রেসিংরুমের পরিবেশটা ছিল দারুণ ইতিবাচক, ‘আমাদের ড্রেসিংরুমের পরিবেশ আসলে খুবই স্বাভাবিক এবং ইতিবাচক ছিল। আমরা বাইরে যেভাবে কথা বলতাম ড্রেসিং রুমেও তেমন। চাপে পড়ে গেলে ড্রেসিংরুমের বেশি প্রভাব ফেলত না। সবাই আমরা মনে করতাম আর একজন গিয়ে ম্যাচ বের করে নিবে। এটা সাহায্য করেছে আমাদের। অধিনায়ক হিসেবে আমার কাজটাও সহজ করে দিয়েছে বিষয়টা।’
বাংলাদেশের বিশ্বকাপ জয়ের বিষয়টি যদি রূপকথা হয় তবে আকবর সেই গল্পের নায়ক। ফাইনালে কী অসাধারণ ধৈর্যের পরিচয়ই না দেখিয়েছিলেন তিনি।
ভারতীয় অলরাউন্ডার যশস্বী জয়সোয়ালের বলে সপ্তম ব্যাটসম্যান হিসেবে পারভেজ হোসেন ইমন যখন ফিরলেন ১৭০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করা বাংলাদেশের জয়ের জন্য তখনও ৩৫ রান প্রয়োজন। আকবর ছাড়া স্বীকৃতি কোন ব্যাটসম্যান ছিলেন না। ওদিকে ভারতের লেগ-স্পিনার রবি বিষনয়ের প্রতিটি বলই সাপের ফনার মতো এঁকেবেঁকে আসছিলো।
আকবর তখন অবলম্বন করেছিলেন অন্য কৌশল। হাতে প্রচুর বলে ছিল বলে রানের চিন্তা বাদ দিয়ে উইকেট পড়ে থাকতে চাইলেন। অপর দিক থেকে টুকটাক রান তুলছিলেন লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানরা। এভাবে শেষ পর্যন্ত ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশের শিরোপা নিশ্চিত করে তবেই মাঠ ছেড়েছেন আকবর।
সেই সময়কার গল্পও শুনিয়েছেন তরুণ ক্রিকেটার, ‘একটা জিনিস মনে হচ্ছিল যে নিচের দিকে আমাদের রাকিব ভালো ব্যাটিং করে। সাকিবও ভালো ব্যাটিং করে। ফলে আমার একটা বিশ্বাস ছিল যে সিঙ্গেল নিয়ে ওদের খেলালে ওরা রান করতে পারবে। আমার চিন্তা ছিল যে আমি আউট হবো না। আমার মনে হচ্ছিল, আমি অপরাজিত থাকতে পারলে ম্যাচ শেষ করতে পারব।’
এবারের প্রিমিয়ার লিগের জন্য গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের সঙ্গে চুক্তি করেছেন আকবর আলি। করোনাভাইরাসের কারণে লিগ বন্ধ হওয়ার আগে এক মাত্র ম্যাচ খেলেছেন বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক। খুব একটা সাফল্য অবশ্য পাননি। প্রথম ম্যাচে ৩১ রান করেছেন আকবর। তবে জানালেন, ড্রেসিংরুমে তার দারুণ সময় কেটেছে। এবার গাজী গ্রুপের হয়ে খেলছেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, মুমিনুর হক, সৌম্য সরকারের মতো জাতীয় দলের নিয়মিত ক্রিকেটাররা। মাহমুদুল্লাহরা দলে তাকে অল্পতেই আপন করে নিয়েছিলেন বলেও জানিয়েছেন আকবর।
তিনি বলেন, ‘আমি অনেক রোমাঞ্চিত ছিলাম যে রিয়াদ ভাই (মাহমুদুল্লাহ, সৌরভ ভাই (মুমিনুল হক), সৌম্য ভাইদের (সৌম্য সরকার) সঙ্গে ড্রেসিংরুম শেয়ার করব। আমাদের দলে জাতীয় দলের আরও অনেক ক্রিকেটারই ছিলেন, তাদের সঙ্গে ড্রেসিংরুমে থাকব, অভিজ্ঞতা নেব। তারা আমাকে খুব সহজেই গ্রহণ করেছেন। সহজেই তাদের সঙ্গে মিশতে পেরেছি আমি। অনেক ধন্যবাদ দিতে চাই তাদেরকে। শুধু আমি নয়, দলের তরুণদেরকেই দারুণভাবে গ্রহণ করেছিল তারা।’