ফিফা-এএফসির দ্বারস্থের হুমকি ক্লাব-সংস্থার
৮ জুন ২০২০ ২০:৪৬
স্পোর্টস করেসপন্ডেন্ট
ঢাকা: যত দিন গড়াচ্ছে ততই নির্বাচন নিয়ে তোড়জোড় বাড়ছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। খেলাধুলা বন্ধ থাকায় আলোচনার কেন্দ্রে আছে বাফুফে। এরই মধ্যে নির্বাচন প্রক্রিয়া নিয়ে নানান অভিযোগ আসছে। ডেলিগেট নিয়ে অস্বচ্ছতা ও গঠনতন্ত্র বহির্ভূত নির্বাচন যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগপত্রও এসেছে। আজ অভিযোগসহ বাফুফের বিপক্ষে নিজেদের ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বঞ্চিতরা।
আজ সোমবার বিকেলে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন সংক্রান্ত অভিযোগ নিয়ে কথা বলেন বঞ্চিত ডেলিগেটসহ ক্লাব সংস্থার কর্মকর্তারা। অভিযোগ খতিয়ে ব্যবস্থা না নেয়া হলে এ বিষয়ে ফিফা ও এএফসির দ্বারস্থ হবে বলেও হুমকি দেন তারা।
এদিকে গত ৭ জুন (রবিবার) ডেলিগেট ফরম জমা দেয়ার শেষ কার্যদিবস ছিল।
সংবাদ সম্মেলন করে বঞ্চিতের অভিযোগ- ডেলিগেট ফরম যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করেছে ফেডারেশন। বৈধ ডেলিগেটকে ফরম না দিয়ে; তাদের বঞ্চিত করে অবৈধ যাচাই-বাছাই কমিটির লোকেরা তাদের পছন্দের লোকদের হাতে তুলে দিয়েছে ডেলিগেট ফরম। এছাড়া গঠনতন্ত্র ভঙ্গ করে নির্বাচন যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করেছে ফেডারেশন। এতে ক্লাব-সংস্থার কর্তারা ক্ষোভ, অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। গণমাধ্যমের সামনে বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। বাফুফের গঠনতন্ত্র মেনে বৈধ ব্যক্তিদের ডেলিগেট ফরম ফিরিয়ে দেয়ার আহবান জানিয়েছেন বঞ্চিত ক্লাব-সংস্থার কর্তারা।
ডেলিগেট নিয়ে নানান জটিলতা সৃষ্টি করছে ফেডারেশন এমন দাবি করে তারা জানান, গঠনতন্ত্র মেনে ক্লাব কমিটি গঠন, বাফুফের সমস্ত নিয়মকানুন মেনে রেজ্যুলেশন তৈরি, বৈধ কমিটির কাগজ-পত্র প্রদান করার পরও বেশ কয়েকটি ক্লাব-সংস্থাকে ডেলিগেট ফরম দেয়নি বাফুফে। যার মধ্যে নবাবপুর ক্রীড়া চক্রের বৈধ সভাপতি আলিমুজ্জামান আলম, টাঙ্গাইল ফুটবল একাডেমির নবনির্বাচিত কমিটির স্পোর্টস সেক্রেটারি এক সময়ের মাঠ কাঁপানো ফুটবলার জাতীয় ক্রীড়াপুরস্কারপ্রাপ্ত হাসানুজ্জামান খান বাবলু, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবের শাহিনুর রহমান শাহিন, ঢাকা বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শাহিনুল ইসলাম ভূঁইয়াসহ আরো অনেক ক্লাব-সংস্থার কর্তারা রয়েছেন।
ব্যক্তিগত আক্রোশ আর বাফুফের অনৈতিক-অবৈধ প্রস্তাবের বিরোধিতা করাতেই মূলত এসব বৈধ ক্লাব/সংস্থার কর্তাদের বাদ দিয়ে তাদের পরিবর্তে নিজেদের পছন্দের ব্যক্তিদের হাতে ডেলিগেট ফরম তুলে দিয়েছে বাফুফে এমন দাবি করেন তারা।
নবাবপুর ক্রীড়া চক্র ক্লাবের হয়ে বৈধতা থাকা সত্ত্বেও মনোনয়ন পাচ্ছে বলে অভিযোগ ক্লাবটির সভাপতি আলিমুজ্জামান আলমের। তার দাবি, নিয়মতান্ত্রিক উপায়ে এবং বাফুফের গঠনতন্ত্র মেনে কাগজ-পত্র নিয়ে (ডেলিগেট ফরম) দ্বারে দ্বারে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। বাফুফে ভবনেই তাকে ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। একটা ক্লাবের সভাপতি হয়েও বাফুফের কর্তারা তার ফোন ধরছেন না। ভবনের গেট থেকেই সিকিউরিটি দিয়ে তাকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেয়া হয়েছে- এমন অভিযোগ আলিমুজ্জামানের।
ডেলিগেট ফরম না পেয়ে এবং তার পরিবর্তে অবৈধ ব্যক্তিদের হাতে ডেলিগেট ফরম তুলে দেয়ায় আইনের আশ্রয় নিয়েছেন আলিমুজ্জামান। এ বিষয়ে থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন বলে জানিয়েছেন আলিম।
দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক শাহীনুর রহমান শাহীন বলেন, ‘বাফুফের কর্তারা আমাদের সঙ্গে যে ধরনের আচরণ করছেন সত্যিই দুঃখজনক। আমরা কিন্তু স্ব-স্ব স্থানে সম্মানিত। কিন্তু ডেলিগেট ফরম নিয়ে রীতিমতো নাটক করছে বাফুফে। আমাদের বৈধ কমিটিকে বঞ্চিত করে নিজেদের পছন্দের লোককে ডেলিগেট ফরম দিয়েছে। শুধু বাফুফের কর্তাদের কথায় রাজি না হওয়ায়।’
শাহীন বলেন, জাবের বিন আনসারী (বাফুফে ম্যানেজার কম্পিটিশন) লকডাউনের মধ্যে আমাকে বাফুফে ভবনে ডেকে নেন। বলেন আমাদের কমিটিকে তারা অনুমোদন দেয়া হবে; যদি তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে কাউন্সিলর করানো হয়। আমি জাবের সাহেবকে বললাম এই প্রস্তাব কি আপনার। ওনি বললেন সোহাগ (আবু নাঈম সোহাগ) সাহেব আপনাকে এই প্রস্তাব দিতে বলেছেন। আমি বলেছি এই প্রস্তাব মেনে নেয়া সম্ভব নয়। আমাকে ক্লাব গভর্নিং বডির সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তারা আমাকে বাদ দিয়ে যারা রেলিগেটেট তাদেরকে ডেলিগেট ফরম দিয়েছে। এইভাবে চলতে থাকলে দেশের ফুটবল কখনই এগুবে না। আরো ধ্বংসের পথে এগিয়ে যাবে। আমরা বাফুফেকে এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ড করতে দেব না। প্রয়োজনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবো।’
ডেলিগেট গ্রহণে টাকার প্রলোভন দেয়া হয়েছে বলে দাবি করেছেন টাঙ্গাইল ফুটবল একাডেমির সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান খান জামিল। জামিলের দাবি, ৮ লাখ টাকায় ডেলিগেট ফরম বাফুফের সাধারণ সম্পাদক আবু নাঈম সোহাগের কাছে বিক্রি করে দিতে বলা হয়েছিল। সোহাগের সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন বলে দাবি জামালের।
এসময় আরো দাবি করা হয়, টাঙ্গাইল ফুটবল একাডেমি তাদের ডেলিগেট হিসেবে সাবেক ফুটবলার ক্লাবটির স্পোর্টস সেক্রেটারি হাসানুজ্জামান খান বাবলুর নাম প্রস্তাব করেছিলেন। কিন্তু সোহাগ এতে রাজি হননি। বলেছেন বাবলুকে সরিয়ে অন্য নাম দিতে। জামিল বলেন, আমি এ পর্যন্ত ১০-১২ জাতীয় ফুটবলার তৈরি করেছি। বাফুফের চেয়ারে বসে যারা দায়িত্ব পালন করছেন; তারা কতজন ফুটবলার তৈরি করেছেন। অনেকের তো ক্লাবই নেই।
ঢাকা বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের নবনির্বাচিত সভাপতি শাহীনুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন, নির্বাচন সামনে রেখে অবৈধ কর্মকাণ্ড করে যাচ্ছে বাফুফে। ডেলিগেট ফরম নিয়ে তো রীতিমতো দুর্নীতি, অনিয়ম করেছে। বাফুফের সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদীর দিকে ইশারা করেন শাহীনুল।
তিনি জানান, ঢাকা বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের ডেলিগেট কে হবেন সেটা সালাম মুর্শেদী ঠিক করে দেবেন এবং সেই দাবি মেনে নিতে বলেন। দাবি মেনে না নেয়াতে বাফুফে তার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। শাহীনুলের বৈধ কমিটিকে কোনো ধরনের সহযোগিতাই করছে না বলে দাবি করা হয়। বাফুফের ঢাকা বিভাগীয় ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের বর্তমান বৈধ কমিটিকে বাদ দেয়ার হুমকি প্রেক্ষিতে আইনের আশ্রয়ের কথাও জানিয়েছেন শাহীনুল ভুঁইয়া।
কিছুদিন আগে গঠনতন্ত্র মেনে নিরপেক্ষ লোকদের নিয়ে ডেলিগেট ফরম যাচাই-বাছাই কমিটি গঠনের আহবান জানিয়েছেন বিডিডিএফএ এবং বিএফসিএ’র নেতা রুহুল আমিন। গত ১ জুন একই দাবি জানিয়ে বাফুফের সভাপতি কাজী সালাহউদ্দীন বরাবর চিঠি দেন বাফুফের সহ-সভাপতি বাদল রায়ও।
সারাবাংলা/জেএইচ