Tuesday 03 Jun 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বর্ণালী সাফল্যের দিন আজ


১০ জুন ২০২০ ১৬:৫৬ | আপডেট: ১০ জুন ২০২০ ১৮:৪৮
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইতিহাস গড়তে শেষ বলে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ২ রান। মিডল-স্ট্যাম্পে পড়ে হারমানপ্রিত কাউরের লাফিয়ে উঠা বলটা ডাউন দ্য উইকেটে এসে চালিয়েছিলেন জাহানারা আলম। মিড-উইকেটে ফিল্ডারের হাতে জমা পড়ল, কোনো মতেই ২ রান হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু দিনটা যে ছিল টাইগ্রেসদের ইতিহাস গড়বার! বল ধরতে গড়বড় করে ফেললেন ভারতীয় উইকেটরক্ষক তানিয়া ভাটিয়া। ওদিকে দুর্দান্ত এক ড্রাইভ দিয়ে ক্রিজে পৌঁছুলেন জাহানারা। ২ রান পূর্ণ হলো আর রচিত হলো বাংলাদেশের ইতিহাস।

ভারতকে হারিয়ে বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দলের এশিয়া কাপ জয়ের দ্বিতীয়বর্ষপূর্তি আজ। ২০১৮ সালের আজকের দিনেই ইতিহাস গড়েছিলেন জাহানারা আলম, সালমা খাতুন, রুমানা আহমেদরা।

বিজ্ঞাপন

আইসিসি ট্রফি জিতে নতুন অধ্যায়ে প্রবেশ করেছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট। তবে প্রথম কোনো শিরোপার দেখা মিলেছে সালমাদের হাত ধরেই। ২০১৮ সালে নারী দলের এশিয়া কাপ জয়ের আগে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের বাইরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে কোনো শিরোপাই জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ছেলে, মেয়ে কোনো ক্রিকেটেই তিন বা তার বেশি দল খেলেছে এমন টুর্নামেন্ট জয়ের স্বাদ বাংলাদেশ প্রথম পেয়েছিল সালমাদের হাত ধরেই।

অথচ কে ভেবেছিল সেবার এমন ইতিহাস গড়বে বাংলাদেশের মেয়েরা? এশিয়া কাপের আগে দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে টানা আট ম্যাচ হারতে হয়েছিল। এশিয়া কাপের শুরুটাও হয়েছিল বাজে। প্রথম ম্যাচে তুলনামূলক কম শক্তিশালী শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারতে হয়েছিল বাজেভাবে। পরে ভারত, পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ ছিল বলে গ্রুপ পর্ব পেরুনোর চিন্তা করেননি অনেকেই। দুই দলই যে বাংলাদেশ দলের ‘জম’। এশিয়া কাপের আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে চার বছর আগে জিততে পেরেছিল বাংলাদেশ। ভারত তখনও বাংলাদেশের বিপক্ষে অপরাজেয়।

তাছাড়া ২০১৮ সালের আগের প্রতি আসরেই এশিয়া কাপ চ্যাম্পিয়ন ছিল ভারত। বাজে ফর্ম নিয়ে সেই ভারতকে দুবার এবং পাকিস্তানকে একবার হারিয়ে শিরোপা জিতবে বাংলাদেশ সেটা কেই-বা ভেবেছিল। ফাইনালে বাংলাদেশি মেয়েদের শরীরী ভাষা বলছিল, যে কোনো মূল্যে জিততে চাই। কিন্তু কাজটা কী আর এত সহজ! শক্তিশালী আর আত্মবিশ্বাসে টইটুম্বুর ভারত প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে ৩২ রানে চার উইকেট হারিয়ে ফেললেও দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন অধিনায়ক হারমানপ্রিত কাউর। দারুণ এক অর্ধশতকে দলকে ১১২ রানের সংগ্রহ এনে দিয়েছিলেন অভিজ্ঞ এই ক্রিকেটার। টি-টোয়েন্টিতে ভারতের মতো প্রতিপক্ষের বিপক্ষে এই রান তাড়া করা চাট্টিখানি কথা নয়।

জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে টাইগ্রেসদের কেউই বেশিক্ষণ টিকতে পারছিলেন না। বড় জুটি হচ্ছিল না। তবুও দাঁতে দাঁত চেপে ‘দশে মিলে করি কাজ’ পন্থায় এগিয়ে ভারতকে ডিঙিয়ে যান বাংলাদেশি মেয়েরা। নিগার সুলতানা (২৭), রুমানা হক (২৩) মিডল অর্ডারে দলকে টেনেছেন। তবে ইতিহাস গড়ার দিনে বেশি উল্লাস হয়েছিল জাহানারাকে নিয়ে।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ৯ রান। হারমানপ্রিতের প্রথম বলে সিঙ্গেল নিয়ে রুমানাকে স্ট্রাইক দিয়েছিলেন সানজিদা। পরের দুই বলে পাঁচ রান নিয়ে বাংলাদেশকে শিরোপার কাছে নিয়ে যান রুমানা। কিন্তু তারপরই ছন্দপতন! শেষ ওভারের চতুর্থ ও পঞ্চম বলে সানজিদা ও রুমানার উইকেট হারালো বাংলাদেশ। ৫ম বলে দ্বিতীয় রান নিতে গিয়ে কাটা পড়েন রুমানা। আর তাতেই সমীকরণ দাঁড়ায় শেষ বলে ২ রান। তারপরই জাহানারার মিড-উইকেটে শট, ভারতীয় উইকেটরক্ষকের ভুল, জাহানারার অবিস্মরণীয় সেই ড্রাইভ আর বাংলাদেশের ইতিহাস।

ইতিহাসের কথা মনে করিয়ে দিতেই রুমানা আহমেদ সারাবাংলাকে বললেন, ভারতকে দু’বার পাকিস্তানকে একবার হারিয়ে ইতিহাস গড়ার বিষয়টি ছিল অপ্রতাশিত। তবে সেই জয়টা বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য বিশেষ কিছু, ‘সত্যি কথা বলতে আমি আমরা ক্রিকেট শুরু করেছি ২০০৮ সালে। আমাদের নারী দল আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের মর্যাদা পেয়েছে ২০১১ সালে। কিন্তু আমাদের ক্রিকেটের মূল ফোকাসটা এসেছে ২০১৮ সালের পর থেকে। বিশেষ করে এশিয়া কাপ জয়ের পর। এশিয়া কাপ আমাদের জন্য সবচাইতে মর্যাদার বলতে পারেন। অপ্রত্যাশিতভাবেই এটা আমরা পেয়েছি সত্যি তবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের ইতিহাসে এটা প্রথম ছিল। আমরা নিজেদের খুবই ভাগ্যবান মনে করি এবং এশিয়া কাপ জিতে আমরা খুবই সন্তুষ্ট।’

এশিয়া কাপ এশিয়া চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ নারী ক্রিকেট দল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর