ওই ম্যাচের পরেই আমরা সম্মান পেতে শুরু করি: হাবিবুল বাশার
১৮ জুন ২০২০ ১৯:৩১
ঢাকা: ঠিক ১৫ বছর আগের কথা। ২০০৫ সালের ১৮ জুন ন্যাটওয়েস্ট সিরিজে কার্ডিফের সবুজে ঘেরা সোফিয়া গার্ডেনসে এক রূপকথা লিখেছিল বাংলাদেশ। রূপকথার নায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলের দাপুটে ব্যাটিং সেদিন খড়কুটোর মত উড়ে নিয়ে গিয়েছিল রিকি পন্টিংয়ের ‘অজেয়’ অস্ট্রেলিয়া। গোটা ক্রিকেট বিশ্বই সে জয় অপার বিস্ময়ে দেখেছে। অনেকের চোখ উল্টে গেছে, কপালে পড়েছে ভাঁজ।
অবশ্য তা না হওয়ার কোন কারণও নেই। কেননা তখনকার ক্রিকেটে এটি নিয়মিত কোনো ঘটনা নয় বরং অনেক বড় অঘটন। সেই অজেয় অস্ট্রেলিয়ার সামনে বাংলাদেশ। সে তো নস্যি! কিন্তু বিধি বাম। একেবারে উল্টো ঘটনাটি ঘটে গেল। আশরাফুলের উইলোবাজ ব্যাটিং সেদিন এ দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে গেল ইতিহাসের এক বিশেষ পাতায়। মূলত এই জয়ের পরেই বিশ্ব ক্রিকেটে বদলে যায় বাংলাদেশের অবস্থান। বিশেষ করে ৫০ ওভারের ক্রিকেটে বাংলাদেশকে ‘আন্ডার ডগ’ ধরে নিয়ে আর কেউই ২২ গজের লড়াইয়ে নামার নামার স্পর্ধা দেখায় না।
ওই ম্যাচের দলপতি হাবিবুল বাশার সুমনের মতে এই জয়ের পরেই বিশ্ব অঙ্গনে বাংলাদেশ সম্মান পেতে শুরু করে যা আগে কখনো পায়নি। বলে রাখা ভাল ‘কুলীন’ অজিদের বিপক্ষে এটিই প্রথম জয় এবং বাংলাদেশের ওয়ানডে ইতিহাসে একমাত্র। কেননা এরপরে আর একটি জয়ও লাল সবুজের দলে ধরা দেয়নি। সঙ্গত কারণেই টাইগার অধিনায়কের কাছে এই জয়টি সবসময় বিশেষ একটি জায়গা দখল করে আছে।
সারাবাংলার সঙ্গে ঐতিহাসিক সেই জয়ের স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ওই অস্ট্রেলিয়াকে হারানো অবশ্যই বিশেষ কিছু। ওরকম অস্ট্রেলিয়া হয়ত আর কোনদিনও হবে না। এক সঙ্গে এতগুলো গ্রেট প্লেয়ার এবং তাদের হারানো যে কোন প্লেয়ার ও দেশের জন্যই বিশেষ পাওয়া আমি বলব। কেননা একে তো দলটি অস্ট্রেলিয়া আর ইংলিশ কন্ডিশন। সবকিছুই আসলে ভাল গিয়েছিল। দিনটিও আমাদের পক্ষে ছিল। তাছাড়া আমরা সবাই ভাল খেলেছিলাম। ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিং সব বিভাগেই আমরা ভালো করেছিলাম। দল হিসেবে ওই জয়টাও আমাদের জন্য দরকার ছিল। কেননা তার আগে আমরা ভাল খেলছিলাম ঠিকই কিন্তু খেলতে খেলতেও হেরে যাচ্ছিলাম। এমন একটি অবস্থা আমাদের যাচ্ছিল। আমরা আমাদের প্রাপ্য সম্মানটুকু পাচ্ছিলাম না। ওই ম্যাচের পরেই আমরা সম্মান পেতে শুরু করি।’
সেদিন টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা অস্ট্রেলিয়া ৫০ ওভারে ৫ উইকেটের খরচায় স্কোরবোর্ডে তুলেছিল ২৪৯ রান। জয়ের জন্য ২৫০ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নেমে ৭২ রান তুলতেই টপ অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারায় বাংলাদেশ। চারে নামা আশরাফুল আগের ম্যাচে ওভালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম বলেই আউট হয়েছিলেন। ফলে আত্মবিশ্বাস ছিল একেবারেই তলানিতে। কিন্তু উইকেটে এসে যখন বুঝতে পারলেন পুরো দস্তুর ব্যাটিং উইকেট তখনই ব্যাটের লাগাম খুলে দিলেন।
‘সত্যি বলতে ম্যাচের শুরুতে আত্মবিশ্বাস ডাউন ছিল। কারণ প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের সাথে প্রথম বলেই আউট হয়ে গিয়েছিলাম। মাঠে যখন গেলাম তিনটা চার মারার পরে মনে হল আজকের উইকেট ভাল, বল ব্যাটে আসছে। যতক্ষণ আছি ব্যাট চালিয়ে যাই। আর সুমন ভাই যখন এলেন এবং যখন আমার ২৮ রান হয়ে গেছে তখন মনে করলাম যে না আজকে আমার দলকে জেতাতেই হবে। ওইভাবে খেলা শুরু করলাম। প্রতিটি ওভারে বাউন্ডারি মারছিলাম, রান রেটও খেয়াল রাখছিলাম যেন ওপরে যায়। যেভাবে চাচ্ছিলাম সেভাবেই খেলতে পারছিলাম।’ বলছিলেন আশরাফুল।
ততে কাজও হল বিস্তর। অবিস্মরণীয় এক জয় ধরা দিল হাবিবুল বাশারদের দলে, লেখা হল নতুন এক ইতিহাস আর বাংলাদেশের ক্রিকেটও উঠে এল অনন্য এক উচ্চতায়। জয়টি নিয়ে আশরাফুলের গর্ব ও ভাল লাগার শেষ নেই। তবে এর পেছনে নিজেকে একার কৃতিত্ব দেখছেন না লাল সবুজের এই ব্যাটিং বিস্ময়। বরং দেখেছেনে টিম গেম হিসেবেই। বিশেষ করে দলের ওই বিপদের মুহূর্তে হাবিবুল বাশারের ব্যক্তিগত রানের ইনিংস ও তার সঙ্গে ১৩২ রানের জুটিই জয়ের পথ সুগম করেছে বলে মত তার।
আশরাফুল আরও বললেন, ‘এটা আসলে পুরো টিম গেম ছিল। আমাদের বোলাররা অসাধারণ বোলিং করেছিল। জাভেদ ভাই, তুষার ভাই ছোট একটা ছোট কিন্তু কার্যকর ইনিংস খেলেছিল। এরপর আমি, সুমন ভাই একটা জুটি করলাম। এটাই মূলত আমাদের ব্যাটিংয়ে টার্নিং পয়েনট ছিল। এরপরে রফিক ভাই এল। তাছাড়া আমিও সেঞ্চুরি করেছিলাম। ওই সময়ের অস্ট্রেলিয়া দল আসলেই শক্তিশালী ছিল। কিন্তু ওই দলকেও আমরা ইংল্যান্ডের মাটিতে হারাতে পেরেছি। ওই দলের সদস্য হতে পেরে নিজেকে অনেক ভাগ্যবান মনে করি। আজ পর্যন্ত ওঅ একটাই জয়। যদিও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে আমাদের খুব বেশি খেলাও হয়নি।’