অস্ট্রেলিয়া বধের দেড় দশক
১৮ জুন ২০২০ ২৩:২৮
কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনস- বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য স্মরণীয় এই স্টেডিয়াম। ২০১৭ সালে এই মাঠে নিউজিল্যান্ডকে উড়িয়ে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনালে তুলেছিলেন সাকিব আল হাসান, লিটন কুমার দাসরা। ২০০৫ সালে পুরো বাংলাদেশের উচ্ছ্বাসে মেতে উঠার সাক্ষী কার্ডিফ। মোহাম্মদ আশরাফুলের অসাধারণ এক সেঞ্চুরিতে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে অবিস্মরণীয় এক জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। স্মরণীয় সেই জয়ের দেড় দশক পূর্ণ হলো আজ। ২০০৫ সালের ১৮ জুন কার্ডিফে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে মহাকাব্য লিখছিলেন আশরাফুল-মাশরাফি-বাশাররা।
ত্রিদেশীয় সিরিজ খেলতে ইংল্যান্ডে গিয়েছিল বাংলাদেশ। সিরিজে তৃতীয় দেশ ছিল অস্ট্রেলিয়া। ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সফলতম দলটি তখন বিশ্ব-ক্রিকেট শাসন করছিল। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেইডেন, রিকি পন্টিং, মাইকেল ক্লার্ক, অ্যান্ড্রু সাইমন্ড, গ্লেন ম্যাকগ্রা, জেসন গিলেস্পিরা একসাথে অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলছিলেন। যাদের প্রতিজনকেই এখন ‘কিংবদন্তি’ বলা হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশের অবস্থা ছিল নাজুক।
তখন পর্যন্ত ১৯ বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে বাংলাদেশ জিততে পেরেছিল মাত্র ৯টি ম্যাচ। যার একটিও বড় কোন দলের বিপক্ষে নয়। সেই বাংলাদেশই কার্ডিফে স্তব্ধ করে দিয়েছিল অজিদের। ভিতটা গড়ে দিয়েছিলেন বোলাররাই।
সোফিয়া গার্ডেনসে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে সুবিধা করতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। মাশরাফি বিন মুর্তজার সঙ্গে তাপস বৈশ্য তাল মিলিয়ে অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডারকে সুবিধা করতে দেননি। ৫৩ রানের মধ্যেই ফিরিয়ে দিয়েছিলেন অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেইডেন ও রিকি পন্টিংকে। এরপর অবশ্য শুরুর ধাক্কা কাটিয়ে উঠার চেষ্টায় অনেকদূর এগিয়েছিলেন মাইকেল ক্লার্ক ও ড্যানিয়েল মার্টিন।
চতুর্থ উইকেটে ১০৯ রানের জুটি গড়েন দু’জন। শেষ দিকে ঝড় তোলেন মাইক হাসি ও অ্যান্ড্রু সাইমন্ড। যাতে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংস থামল গিয়ে ২৪৯ রানে। ম্যাকগ্রা, গিলেস্পিদের নিয়ে গড়া বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে বাংলাদেশের মতো দলের জন্য এই সংগ্রহ পাহাড়সমই। তাছাড়া জবাব দিতে নেমে বাংলাদেশের শুরুটা হলো হযবরল।
দলীয় রানের ফিফটি পূর্ণ হতেই লেগে যায় ১৫ ওভার। দলের ৭২ রানের সময় ওপেনার জাভেদ ওমর ফিরে যান ৫১ বলে মাত্র ১৯ রান করে। তারপরও কে ভেবেছিল ম্যাচ জিতবে বাংলাদেশ। মোহাম্মদ আশরাফুল সেই অভাবনীয় কাজটি করে দেখিয়েছিলেন। তারুণ্যে টগবগ ২০ বছর বয়সী আশরাফুল চারে নেমে ম্যাকগ্রা, গিলেস্পিদের শুধু নয়, বিস্মিত করেছিলেন পুরো ক্রিকেটবিশ্বকে।
ম্যাকগ্রাদের শাসন করে মাত্র ১০১ বলে ঠিক ১০০ রান করে আশরাফুল যখন ফিরছিলেন বাংলাদেশ তখন জয়ের অনেকটাই কাছে। শেষ দিকে আফতাব আহমেদ ১৩ বলে ২১ রানের দারুণ কার্যকার এক ইনিংস খেলে বাংলাদেশের অবিস্মরণীয় জয় নিশ্চিত করেছেন। চার বল হাতে রেখেই পাঁচ উইকেটের জয় নিশ্চিত করে ফেলে টাইগাররা। আশরাফুল ১০০ রান করেছিলেন ১১ চারের সাহায্যে। এছাড়া অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনের ব্যাট থেকে এসেছিল গুরুত্বপূর্ণ ৪৭ রান।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে কার্ডিফের সেই কাব্যিক জয়টি বাংলাদেশকে নতুন করে চিনেছিল বিশ্ব, বিশেষ করে মোহাম্মদ আশরাফুলকে। অমন জয় নিশ্চয় ভুলবে না ক্রিকেট। তবে অজি বধের দিনে একটা আক্ষেপ হয়তো নতুন করে পিড়া দেবে। কার্ডিফের সেই জয়ের পর ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে আর হারাতে পারেনি বাংলাদেশ। ওয়ানডেতে সেটাই অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র জয়। অবশ্য এরপর টেস্টে অজিদের হারিয়েছে টাইগাররা।