ঢাকা: আগামী দুই বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন হয়েছে জাতীয় দলের প্রধান কোচ জেমি ডে’র। চুক্তির নবায়নে খুশিতে থাকা জেমির উদ্বেগ সামনের অক্টোবর ও নভেম্বর মাস। এসময় বিশ্বকাপ বাছাই ও এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের চার ম্যাচ আছে। তবে আপাতত ভাল ফলের আশাবাদী এই ইংলিশ কোচ জানান, বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব ও এএফসি এশিয়ান কাপের বাকী চার ম্যাচ থেকে কিছু পয়েন্ট নেয়া। সেজন্য দ্রুত ফুটবলারদের মাঠে ফেরাতে চান তিনি। ফিট করতে চান ম্যাচের জন্য।
এই চার ম্যাচে অন্তত কিছু পয়েন্টস আর জয় আশা করছে জেমি, ‘বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের চারটি কঠিন ম্যাচ আছে অক্টোবর ও নভেম্বরে। আমাদের ইতিবাচক থাকতে হবে। আমরা এই ম্যাচগুলো থেকে কিছু পয়েন্টস নেয়ার আশা করছি। কিন্তু প্রথমত প্রস্তুতি ক্যাম্পের মাধ্যমে খেলোয়াড়দের ফিট করাটা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মহামারিতে তারা বহুদিন থেকেই মাঠের বাইরে।’
এই কথাগুলো জেমি বৃহস্পতিবার এক ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সাংবাদিকদের বলেন।
জেমি ডে’র সঙ্গে গেল সপ্তাহে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই বছরের চুক্তি নবায়ন করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। চলতি বছরের আগস্ট মাসের মাঝ থেকে ২০২২ সালের আগস্ট মাসের মাঝ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। এর মাধ্যমে লাল-সবুজদের ডাগআউটে সবচেয়ে বেশি সময় কোচিংয়ের দায়িত্ব থাকা বিদেশি কোচ হয়ে গেলেন জেমি ডে।
অতীতের মতো সামনের দুই বছরেও ভালভাবে কাজ করার আশ্বাস দেন জেমি, ‘আমি বাফুফের সঙ্গে ভবিষ্যতে কাজ করার জন্য অধীর আগ্রহে ছিলাম। নতুন চুক্তি হওয়াতে আমি খুশি। আমি গত দুই বছর কাজ করে অনেক আনন্দ পেয়েছি। সামনের দু বছর তেমনই কাটাতে চাই।’
আপাতত বিশ্বকাপ বাছাই নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চান ৪০ বছর বয়সী এই কোচ, ‘এখন আমি ফুটবলারদের ক্যাম্পের জন্য প্রস্তুত করতে চাই। তাদের ফিট করতে চাই। বাফুফে ৪৪ জন ফুটবলারকে প্রাথমিক ক্যাম্পে ডাকবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমাদের ক্যাম্পের জন্য এতো প্লেয়ার দরকার নেই। আমি আসার পর ৩০-৩৫ জনের একটা লিস্ট করবো।’
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মিশনে বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত স্বস্তিতে নেই। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হেরে মিশন শুরু করে। এরপর ঢাকায় ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ কাতারের সঙ্গে লড়াই করে ২-০ ব্যবধানে দ্বিতীয় হারের স্বাদ পায়। তৃতীয় ম্যাচে কলকাতার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে নজর কেড়ে ১-১ ব্যবধানে ড্র করে আশা জাগায়। চতুর্থ ম্যাচে গত বছরের নভেম্বরে ওমানের সঙ্গে ৪-১ ব্যবধানে সবশেষ ম্যাচটি হারে। চার ম্যাচে এখনও পর্যন্ত একটি পয়েন্ট অর্জন করতে পেরেছে বাংলাদেশ।
পয়েন্ট পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকছে বাংলাদেশের সামনে। কেননা বাকী চার ম্যাচের তিনটিই ঘরের মাঠে। এএফসি ও ফিফার প্রস্তাবিত নতুন শিডিউলে অক্টোবরের ৮, নভেম্বরের ১২ ও ১৭ তারিখে বাংলাদেশের তিনটি হোম ম্যাচ যথাক্রমে আফগানিস্তান, ভারত ও ওমানের সঙ্গে। অ্যাওয়ে ম্যাচটি বাংলাদেশ খেলবে কাতারে ১৩ অক্টোবর। পাঁচ দলের ই গ্রুপে ১ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ পয়েন্ট তালিকার তলানিতে।
এ যাবত জেমির অধীনে বাংলাদেশ ১৯ ম্যাচ খেলেছে। যেখানে জাতীয় দল ৮টিতে জয়, দুটিতে ড্র এবং ৯টিতে হেরেছে। অন্যদিকে তার অধীনে অনূর্ধ্ব-২৩ দল খেলেছে ১১টি ম্যাচ। যেখানে জিতেছে ৩টি, ড্র দুটি এবং হেরেছে ৬টিতে।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সুবিধা ও দক্ষ কোচিং স্টাফের সরবরাহ চান জেমি, ‘ছয় থেকে আট সপ্তাহ একটা দলকে প্রস্তুত করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আমাদের জন্য ভালো সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় এবং দক্ষ কোচিং স্টাফ থাকে তাহলে আমরা কিছু ভালো ফল এনে দিতে পারবো।’
প্রথম ম্যাচে সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে না পারায় ১-০ গোলে হারের স্বাদ নিয়ে ফিরতে হয়েছে আফগানিস্তানের সঙ্গে। করোনা পরবর্তী প্রত্যাবর্তন হবে হোম ম্যাচ দিয়েই। আফগানিস্তানের বিপক্ষেই। জয়ের লক্ষ্য নিয়েই প্রস্তুতি শুরু করতে চান জেমি, ‘প্রথম ম্যাচ খেলবো আমরা আফনাস্তিানের সঙ্গে। তাদের ফুটবলাররা ইউরোপের বিভিন্ন লিগে খেলছে। কিন্তু আমি নিশ্চিত নই যে তারা এই সময়টাতে কোথায় খেলতে পারছে। যাইহোক আমাদের তিনটি হোম ম্যাচ আছে, সুতরাং আমাদের সমর্থকরাও আমাদের পাশে আছে। এটা আমাদের খেলোয়াড়দের অনুপ্রাণিত করবে। এবং তাদের ভাল করতে করতে সাহায্য করবে।’
সামনে আগস্টের প্রথম সপ্তাহে একটি আবাসিক ক্যাম্পের ব্যবস্থা করবে ফেডারেশন। করোনা পরীক্ষা করে একটি আইসোলেশন ক্যাম্প করা হবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে দেশের ফুটবলের সর্বোচ্চ অভিভাবক। গত জাতীয় দল কমিটির সভায় এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
প্রাথমিকভাবে বাফুফে ৪৪ জন ফুটবলার ও কোচিং স্টাফদের নিয়ে আগামী সপ্তাহে একটি আইসোলেশন ক্যাম্প শুরু করবে। যেটা চলবে ১০ থেকে ১৫ দিন। করোনা পরীক্ষা করেই এখানে নেয়া হবে সবাইকে। তারপর সেই ক্যাম্প থেকে চূড়ান্ত ৩০ থেকে ৩৫ ফুটবলারকে বাছাই করা হবে চূড়ান্ত ক্যাম্পের জন্য। এই ক্যাম্প শুরু হবে আগস্টের মধ্য সময় থেকে।
এই ক্যাম্পটা করা হবে ঢাকার নিরাপদ কোন স্থানে বা ঢাকার বাইরে। জাতীয় দলের ফুটবলাররা লিগ বাতিলের পর থেকেই বহুদিন ধরে খেলার বাইরে। সেজন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বাফুফে বিদেশি দলের সঙ্গে ম্যাচ আয়োজনের চেষ্টা করবে বলে জানানো হয়।
তবে দীর্ঘদিন ধরে লিগে বাইরে থাকা ফুটবলাররা কতটা সাবলীল থাকবেন সেটা প্রশ্নের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে জেমির আছে পূর্ণ বিশ্বাস, ‘লিগটা ফুটবলারদের জন্য গাইডলাইন। কিন্তু তারা অনেকদিন থেকেই লিগের বাইরে। সুতরাং ক্যাম্পের সময় আমাদের কিছু প্রস্তুতি ম্যাচ খেলা দরকার। এটা তাদের জন্য দরকার। যদি এটা সম্ভব না হয় তাহলে আমরা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাগি করে ম্যাচ খেলবো।’
আরেকটি সমস্যায় পড়তে হতে পারে ফেডারেশনকে। প্রায় একই সময়ে এএফসি কাপের ম্যাচও আছে বসুন্ধরা কিংসের। তারাও সেপ্টেম্বরে ক্যাম্প শুরু করতে চায়। জাতীয় দলের বেশিরভাগ ফুটবলার আবার কিংসের সদস্য। এটার সমাধান বাফুফেই বের করতে হবে বলে জানান জেমি, ‘একই সময়ে বসুন্ধরা কিংসের ম্যাচ আছে। তারা খেলোয়াড় নাও ছাড়তে পারে। সেজন্য বাফুফের তাদের সঙ্গে আলোচনা করার দরকার।’