৫-১০ বছরও নিষিদ্ধ হতে পারতাম: সাকিব
২৪ জুন ২০২০ ১৩:২০
গত বছরের নভেম্বরে বাংলাদেশের ক্রিকেট আকাশে দুর্যোগের ঘনঘটা। বিশ্বকাপে দুর্দান্ত পারফর্ম করে আসা সাকিব কেবলই বিরতি শেষে ক্রিকেট ফিরেছেন, আর তারপরেই আইসিসি কর্তৃক নিষিদ্ধ হলেন দুই বছরের জন্য যার মধ্যে এক বছর স্থগিতাদেশসহ। চলতি বছরের অক্টোবরে আবারও ক্রিকেটে ফেরার কথা রয়েছে সাকিবের। সম্প্রতি ক্রিকবাজকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে সাকিব জানালেন তার অপরাধের কারণে ৫-১০ বছরের নিষেধাজ্ঞাও আসতে পারত, তবে জানালেন কীভাবে এত বড় নিষেধাজ্ঞা থেকে রেহাই মিলেছিল তার।
জুয়াড়ির কাছ থেকে একবার নয়, দুবার নয় তিন তিনবার ম্যাচ পাতানোর প্রস্তাব পাওয়ার পরেও তা গোপন করেছিলেন সাকিব আল হাসান। বিষয়টি সাকিব এড়িয়ে গেলেও, দৃষ্টি এড়ানি আইসিসি’র দুর্নীতি দমন কমিশনের। তারা ঠিকই খোঁজ পেয়েছেন সাকিবের তথ্য লুকানোর। আর তাই তো সব তথ্য প্রমাণ একত্রিত করে সাকিবকে চেপে ধরলেন। আর সাকিবকে সব ধরনের ক্রিকেট কার্যক্রম থেকে ২৯ অক্টোবর ২০২০ সাল পর্যন্ত নিষিদ্ধ করল।
তবে প্রায় ১৫ বছর ক্রিকেট খেলা সাকিব এত অভিজ্ঞ হওয়ার পরেও কেনই বা জুয়াড়ির প্রস্তাব দেওয়ার ব্যাপারটি আইসিসি অথবা বিসিবিকে অবহিত করেননি? ভক্তকুল থেকে শুরু করে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞ এবং সাধারণ মানুষের কাছেও রহস্যময় ছিল। অবশেষে সেই রহস্যের খোলাসা করলেন সাকিব নিজেই।
জনপ্রিয় ক্রিকেট ধারাভাষ্যকার হার্শা ভোগলের সঙ্গে ক্রিকেবাজে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন সাকিব, সেখানেই জানালেন, জুয়াড়ির সঙ্গে যে কথা হয়েছিল তা গুরুত্বই দেননি। আর এ কারণেই আইসিসিকে জানানোর প্রয়োজন মনে করেননি। তবে তিনি যে অনেক বড় ভুল করে ফেলেছেন সেটা বুঝতে পেরেছেন। আর তা অকপটে স্বীকারও করে নিয়েছেন।
‘আমার মনে হয়, আমি এটা একটু বেশিই হালকাভাবে (ক্যাজুয়ালি) নিয়েছিলাম। অবশ্যই আমি এই প্ল্যাটফর্মে বিস্তারিত সবকিছু আলোচনা করতে চাই না। আমি যখন দুর্নীতি দমন কর্মকর্তার সঙ্গে দেখা করলাম এবং বললাম, তারা সবকিছু জানে, সব প্রমাণ দিলাম, ভেতরে-বাইরের সবকিছু তারা খুঁটিনাটি সব জানে, সত্যি কথা বলতে, এই কারণেই মাত্র ১ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হয়েছি। নইলে ৫-১০ বছরের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারতাম।’
সাকিব আরও ল্বলেন, ‘আমার মনে হয়, বোকার মতো ভুল করেছিলাম। কারণ যে অভিজ্ঞতা আমার আছে, যে পরিমাণ আন্তর্জাতিক ম্যাচ আমি খেলেছি এবং দুর্নীতি দমন ধারা নিয়ে যতগুলি ক্লাস করেছি, আমার ওই ভুল করা উচিত হয়নি। সেটা নিয়ে আমি অনুতপ্ত।’
আইসিসি’র দুর্নীতি দমন কমিশনকে কেন জুয়াড়ির কথা জানাননি? সেই প্রশ্নের জবাবও দিয়েছেন সাকিব। এই প্রশ্নের জবাবে সাকিব জানান তিনি আসলে বিষয়টাকে এমন হালকাভাবে নিয়েছিলেন যে ঘটনাটি ভুলেই গিয়েছিলেন।
সাকিব বলেন, ‘দেখুন, আমরা হাজারও ফোনকল পাই, ম্যাসেজ পাই, কয়টা আর মনে থাকে! একটা উদাহরণ আমি দিতে পারি, ওই লোকটি যখন শেষবার ম্যাসেজ পাঠিয়েছিল, আমি জবাব দিয়েছিলাম, ‘সরি, কার সঙ্গে কথা বলছি?’ তার মানে, আমার মনেও ছিল না, কার সঙ্গে কথা বলছি। তার সঙ্গে আগে কথা বলেছি ২-৩ বছর আগের। ওই সময় আমি জানতামও না লোকটা কে। ওই সময় তার নম্বরও আমার কাছে ছিল না।’
নিজে ভুল করে সেই ভুলের কারণে অনুতপ্ত তিনি। আর সেই সঙ্গে অন্যদেরও জানালেন এমন কোনো ভুল না করার কথা। এ বিষয়ে সাকিব বলেন, ‘যাই হোক, তারা যখন (আইসিসি দুর্নীতি দমন বিভাগ) তদন্ত করেছে, এসব তারা জানত এবং পরিস্থিতি বুঝেছে। তবে আসলে এই বিষয়টি কারোরই হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়। ওই ধরনের কোনো ম্যাসেজ বা কল কারও হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয় বা ওভাবেই ফেলে রাখা উচিত নয়। দুর্নীতি দমন কর্তাদের জানানো উচিত নিরাপদে থাকতে হলে। এই শিক্ষা আমি পেয়েছি, বড় শিক্ষা এটি।’
আইসিসির নিষেধাজ্ঞা ক্রিকবাজে সাক্ষাৎকার নিষিধাজ্ঞায় সাকিব আল হাসান