২০৩ ম্যাচে জিদানের ১৭৯টি নতুন একাদশ
২৫ জুন ২০২০ ১৫:০৮
অমলিন জিনেদিন জিদানের এই হাসির পেছনেই যেন প্রতিপক্ষের জন্য এক খলনায়ক অপেক্ষা করে। ফুটবল পায়ে যেমন জিদান অনিশ্চিত ছিলেন পরবর্তী মুহূর্তে কি করবেন, কোচ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করা জিদান যেন তারই প্রতিচ্ছবি। ফুটবল মাঠে বল পায়ে আসার পরবর্তী মুহূর্তে বল নিয়ে জিদান কি করবেন তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেননি হয়ত কেউই, আর ম্যানেজার হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করার পর প্রতিপক্ষের ম্যানেজারের ঘুম হারাম করেছেন একইভাবে। রিয়াল মাদ্রিদের ম্যানেজার হিসেবে এখন পর্যন্ত ২০৩টি ম্যাচে দায়িত্ব পালন করেছেন জিদান আর এই ম্যাচগুলোতে ১৭৯টি ভিন্ন ভিন্ন একাদশ দিয়ে ম্যাচ শুরু করেছেন।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে রিয়াল মাদ্রিদের ডাগ আউটের দায়িত্ব গ্রহণ করেন জিদান। এরপর আড়াই বছরে ইতিহাস গড়ে জিদানের নেতৃত্বের দলটি। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ নামকরণের পর যে শিরোপা কেউ টানা দুইবার জিততে পারেনি, জিদান তা জিতেছেন টানা তিনবার। তবে এর পেছনে যে কেবল ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, গ্যারেথ বেল, করিম বেনজেমা কিংবা সার্জিও রামোস, লুকা মদ্রিচরা নয়। তাদের একটি দল হিসেবে সাজিয়ে দুর্দান্ত ট্যাকটিসে প্রতিপক্ষকে বধ করেছেন জিনেদিন জিদান।
২০১৯ সালের মাঝামাঝি রিয়ালের দুঃসময়ে আবারও দলের ডাগ আউটে ফিরে আসেন জিদান। দলে পুনরায় প্রাণের সঞ্চারণ করেন। আর চলতি মৌসুমে লড়াই করে যাচ্ছেন স্প্যানিশ লা লিগা জয়ের জন্য। তবে এই সময়টাতেও জিদান অনিশ্চিত। এই ম্যাচে এক খেলোয়াড় দুর্দান্ত খেলছেন তো পরের ম্যাচে তাকেই সাইড লাইনে বসে খেলা দেখতে হচ্ছে। এতে করে প্রতিপক্ষের কোচ ভেবে পারছেন না আসলে কাকে ঘিরে ট্যাকটিস সাজাবেন।
প্রথম ধাপে রিয়ালের কোচ হিসেবে জিনেদিন জিদান সব থেকে বেশি ব্যবহার করেছেন, কেইলর নাভাস, পেপে, ড্যানি কার্ভাহাল, সার্জিও রামোস, মার্সেলো; ক্যাসেমিরো; লুকা মদ্রিচ; টনি ক্রুস; গ্যারেথ বেল; করিম বেনজেমা এবং ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোকে। কিন্তু এই দলটিও জিদানের অধীনে মাত্র ৭টি ম্যাচ খেলেছে। আর এটিই জিদানের সবথেকে প্রিয় দলের সবথেকে বেশি ম্যাচ খেলা। জিদানের আর কোনো একাদশ এর থেকে বেশি ম্যাচ খেলেনি। সব মিলিয়ে জিদানের রিয়াল মাদ্রিদের কোচ হিসেবে মোট ৪৮জন আলাদা আলাদা খেলোয়াড় শুরুর একাদশে সুযোগ পেয়েছেন।
আর দ্বিতীয় ধাপে রিয়ালের দায়িত্ব নেওয়ার পরেও পাল্টে যাননি জিদান। প্রতি ম্যাচেই চমকে দেন প্রতিপক্ষ কোচকে। এই তো মায়োর্কার বিপক্ষের ম্যাচের পূর্বে স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যমে গুঞ্জন হ্যাজার্ড এবং ভিনিসিয়াস কখনোই এক সঙ্গে খেলতে পারবেন না। কিন্তু কিসের কি? পরের ম্যাচেই জিদান দেখিয়ে দিলেই এই দুইজন এক সঙ্গে খেলতে পারেন এবং খেলবেন। মায়োর্কার বিপক্ষে শুরুর একাদশে দুইজনই।
করোনাভাইরাস পরবর্তী সময়ের ৪টি ম্যাচে ৪ ভিন্ন ভিন্ন একাদশ খেলিয়েছেন জিদান। আর এই ৪ ম্যাচে ১৬জন আলাদা আলাদা খেলোয়াড় শুরুর একাদশে জায়গা করে নিয়েছেন। ইনজুরিতে থাকা ইস্কো, নাচো ফার্নান্দেজ, লুকাস ভাস্কেজ, মারিয়ানো দিয়াজ এবং লুকা জোভিচ ছাড়া জিদানের শুরুর একাদশে জায়গা হয়নি কেবল এডার মিলিতাও, ব্রাহিম দিয়াজ, মার্কো অ্যাসেন্সিওর। অবশ্য অ্যাসেন্সিও সম্প্রতিই লিগামেন্ট ইনজুরি থেকে ফেরার কারণেই এখন পর্যন্ত শুরুর একাদশে জায়গা পাননি।
আর মায়োর্কার বিপক্ষের ম্যাচ দিয়ে টানা ১৬টি ম্যাচে জিদান একবারের জন্যও আগের কোনো একাদশ পুনরায় খেলাননি। অবশ্য লা লিগার চলতি মৌসুমের মোট ৩১টি ম্যাচে জিদান ৩১টি ভিন্ন ভিন্ন একাদশ দিয়ে ম্যাচ শুরু করেছেন। আর পুরো ৪ বছরের কোচিং ক্যারিয়ারে মাত্র ৭ ম্যাচেই একই একাদশ খেলিয়েছেন জিদান। এ যেন ইউরোপিয়ান ফুটবলে নতুন এক ট্যাকটিশিয়ান ম্যাজিশিয়ানের আবির্ভাব।