আগামী ২ বছরে বাংলাদেশকে কোথায় নিতে চান জেমি?
২৭ জুন ২০২০ ০১:২৯
ঢাকা: বাংলাদেশের সঙ্গে আরো দুই বছরের চুক্তি নবায়ন হয়েছে জেমি ডে’র। ডাগআউটে আরো দুটো বছর কোচের দায়িত্ব পালন করতে হবে এই ইংলিশ কোচকে। সামনে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের বাকী ম্যাচের মিশনতো থাকছেই। সঙ্গে এই দুই বছরে লাল-সবুজকে কোথায় নিতে চান জেমি সেই লক্ষ্যও নির্ধারণ করেছেন। তবে সেই লক্ষ্যে কিছুটা অপ্রত্যাশিত বাধাও দেখছেন এই কোচ।
সারবাংলার সঙ্গে সাক্ষাৎকারে সেই লক্ষ্যের কথা জানালেন জেমি। তার মতে, এই দুই বছরে বাংলাদেশকে ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১৭০ এর ঘরে নিয়ে আনতে চান। সঙ্গে সাফ বা বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ টুর্নামেন্টের একবার হলেও শিরোপা উপহার দিতে চান। তবে এই লক্ষ্য নির্ধারণে সামনে কিছু চ্যালেঞ্জও দেখতে পাচ্ছেন জেমি।
দুই সপ্তাহ আগে জেমি ডে’র সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে দুই বছরের চুক্তি নবায়ন করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। চলতি বছরের আগস্ট মাসের মাঝ থেকে ২০২২ সালের আগস্ট মাসের মাঝ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করবেন তিনি। এর মাধ্যমে লাল-সবুজদের ডাগআউটে সবচেয়ে বেশি সময় কোচিংয়ের দায়িত্ব থাকা বিদেশি কোচ হয়ে গেলেন জেমি ডে।
গেল দুই বছরে সাফ ও বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে ব্যর্থ জেমি ট্রফি উপহার দিতে চান এ দু বছরে। জেমির কথায়, ‘আমি চাইবো সামনের দুই বছরে অন্তত একটা ট্রফি জিততে। সেটা সাফ বা গোল্ডকাপ হোক।’
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে বিশেষ নজর দিতে চান জেমি। টার্গেট রেখেছেন অন্তত ১৭০ এর মধ্যে ঢোকার, ‘সত্যিকার অর্থে আপনি চাইলেই ফিফা র্যাঙ্কিয়ের কোন টার্গেট রাখতে পারবেন না যখন আপনি বিশ্বকাপ বাছাইয়ের মতো টুর্নামেন্টে অন্তর্ভুক্ত থাকবেন। তবে আমার লক্ষ্য হলো সামনের দু বছরে ১৭০ এর মধ্যে বাংলাদেশকে তুলে আনতে চাই।’
র্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির বিষয়ে যে বিষয়গুলো খেয়াল রাখতে হবে বলে জানালেন জেমি, ‘সেজন্য আমাদের সম পর্যায়ের দেশগুলোর সঙ্গে বেশি বেশি ম্যাচ খেলতে হবে। ধীরে ধীরে পয়েন্ট সংগ্রহ করে উপরে উঠতে হবে আমাদের।’
র্যাঙ্কিং বৃদ্ধির জন্য বেশি বেশি ম্যাচ খেলা প্রয়োজন বলে মনে করেন জেমি। তবে এখানে একটা অপ্রত্যাশিত বাধা দেখতে পাচ্ছেন তিনি, ‘সেটা কঠিন এই অবস্থায়। কেননা করোনা মহামারিতে পুরো বিশ্বের চিত্রই পাল্টে যাচ্ছে। ম্যাচ খেলার জন্য পরিবেশ থাকার ব্যাপার আছে। বিমান যোগাযোগ থেকে শুরু করে স্বাস্থ্য বিষয়ক নানান বিষয় বিবেচনা করে দলের অ্যাভেইলেবিলিটির ব্যাপার আছে। সেটা সম্ভব হলে টার্গেট পূরণ অসম্ভব নয়।’
তবে আপাতত বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব নিয়ে ব্যস্ত থাকতে চান এই ইংলিশ কোচ।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের মিশনে বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত স্বস্তিতে নেই। প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানের কাছে হেরে মিশন শুরু করে। এরপর ঢাকায় ২০২২ সালের বিশ্বকাপ আয়োজক দেশ কাতারের সঙ্গে লড়াই করে ২-০ ব্যবধানে দ্বিতীয় হারের স্বাদ পায়। তৃতীয় ম্যাচে কলকাতার সল্ট লেক স্টেডিয়ামে নজর কেড়ে ১-১ ব্যবধানে ড্র করে আশা জাগায়। চতুর্থ ম্যাচে গত বছরের নভেম্বরে ওমানের সঙ্গে ৪-১ ব্যবধানে সবশেষ ম্যাচটি হারে। চার ম্যাচে এখনও পর্যন্ত একটি পয়েন্ট অর্জন করতে পেরেছে বাংলাদেশ।
পয়েন্ট পাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকছে বাংলাদেশের সামনে। কেননা বাকী চার ম্যাচের তিনটিই ঘরের মাঠে। এএফসি ও ফিফার প্রস্তাবিত নতুন শিডিউলে অক্টোবরের ৮, নভেম্বরের ১২ ও ১৭ তারিখে বাংলাদেশের তিনটি হোম ম্যাচ যথাক্রমে আফগানিস্তান, ভারত ও ওমানের সঙ্গে। অ্যাওয়ে ম্যাচটি বাংলাদেশ খেলবে কাতারে ১৩ অক্টোবর। পাঁচ দলের ই গ্রুপে ১ পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ পয়েন্ট তালিকার তলানিতে।
এ যাবত জেমির অধীনে বাংলাদেশ ১৯ ম্যাচ খেলেছে। যেখানে জাতীয় দল ৮টিতে জয়, দুটিতে ড্র এবং ৯টিতে হেরেছে। অন্যদিকে তার অধীনে অনূর্ধ্ব-২৩ দল খেলেছে ১১টি ম্যাচ। যেখানে জিতেছে ৩টি, ড্র দুটি এবং হেরেছে ৬টিতে।
বিশ্বকাপ বাছাইয়ের প্রস্তুতির জন্য যথেষ্ট সুবিধা ও দক্ষ কোচিং স্টাফের সরবরাহ চান জেমি, ‘ছয় থেকে আট সপ্তাহ একটা দলকে প্রস্তুত করার জন্য যথেষ্ট। কিন্তু আমাদের জন্য ভালো সুযোগ-সুবিধা দেয়া হয় এবং দক্ষ কোচিং স্টাফ থাকে তাহলে আমরা কিছু ভালো ফল এনে দিতে পারবো।’
প্রাথমিকভাবে বাফুফে ৪৪ জন ফুটবলার ও কোচিং স্টাফদের নিয়ে আগামী সপ্তাহে একটি আইসোলেশন ক্যাম্প শুরু করবে। যেটা চলবে ১০ থেকে ১৫ দিন। করোনা পরীক্ষা করেই এখানে নেয়া হবে সবাইকে। তারপর সেই ক্যাম্প থেকে চূড়ান্ত ৩০ থেকে ৩৫ ফুটবলারকে বাছাই করা হবে চূড়ান্ত ক্যাম্পের জন্য। এই ক্যাম্প শুরু হবে আগস্টের মধ্য সময় থেকে।
এই ক্যাম্পটা করা হবে ঢাকার নিরাপদ কোন স্থানে বা ঢাকার বাইরে। জাতীয় দলের ফুটবলাররা লিগ বাতিলের পর থেকেই বহুদিন ধরে খেলার বাইরে। সেজন্য প্রস্তুতির অংশ হিসেবে বাফুফে বিদেশি দলের সঙ্গে ম্যাচ আয়োজনের চেষ্টা করবে বলে জানানো হয়।