তবুও ইতিবাচক মুমিনুল
২৭ জুন ২০২০ ১৩:৩৭
প্রাণঘাতি করোনা ছোবলে একে একে টাইগারদের সবকটি টেস্ট সিরিজই স্থগিত হয়ে গেল। প্রথমে করাচি টেস্ট, এরপর পর্যায়ক্রমে অস্ট্রেলিয়া সিরিজ (২টেস্ট), নিউজিল্যান্ড সিরিজ (২ টেস্ট) এবং সবশেষ শ্রীলঙ্কা সিরিজ (৩টেস্ট)। অর্থাৎ অদৃশ্য এই শত্রুর ভয়ে এক বছরে ৮টি টেস্ট ম্যাচ থেকে বঞ্চিত হলেন মুমিনুল হক অ্যান্ড কোং। এটা ঠিক যে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে আবার তা মাঠে ফেরানো হবে কিন্তু কবে? তা এই মুহুর্তে কেউ বলতে পারছে না। যে যাই বলুন না কেন এই স্থগিতাদেশের ফলে ক্ষতি যা হবার তা লাল সবুজের দলটিরই হয়েছে। কেননা বছরে যে দলটি কেবল দুই কি তিনটি টেস্ট খেলে অভ্যস্ত তাদের জন্য এক বছরে এতগুলো টেস্ট ম্যাচ! নিশ্চয়ই আশির্বাদ হয়ে এসেছিল। এক ক্যালেন্ডার বর্ষে এতগুলো ম্যাচ খেলতে পারলে এই ফরম্যাটে অনভ্যস্ত দলটি সন্দেহাতীতভাবেই খোলশ ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারত। বিধি বাম বলেই হয়ত সেটা হয়নি। এতে করে দলের অনেকের মধ্যেই হয়ত কম বেশি হতাশা কাজ করছে। ব্যতিক্রম নন বাংলাদেশের টেস্ট দলপতি মুমিনুল হকও। তবে আশার কথা হল তিনি এর মধ্যেও ইতিবাচকতা দেখছেন।
মুমিনুল ইতিবাচক এই অর্থে, যে করোনাকালের আবদ্ধ সময়টিতে তারা নিজেদের নিয়ে ভাবার সুযোগ পাবেন। কোথায় ভুল ছিল, কি করে সেগুলো থেকে বেরিয়ে আসা যায় এর সঙ্গে প্রতিপক্ষ বধের নীল নকশাও আরো নিখুঁত হাতে আঁকার সুযোগ তারা পাবেন। তবে তিনি অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন যেহেতু এবছর আর কোনো টেস্ট ম্যাচ নেই সেহেতু কিছুটা ক্ষতির সম্মুখীন তারা হবেনেই। কেননা লম্বা সময় স্কিলের প্রয়োগ থেকে তারা বঞ্চিত থাকবেন। বিশেষ করে তার মতো আরো দু একজন যারা শুধুই টেস্ট ম্যাচ খেলে থাকেন।
ঘরে বসে ফিটনেস হয়, স্কিল ট্রেনিং তো আর হয় না! পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অনুশীলনে ফিরে হয়ত স্কিল ট্রেনিং সারবেন কিন্তু ম্যাচ তো আর খেলা হবে না। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সান্তনা খুঁজতে তাকাতে হচ্ছে বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোর দিকে যাদের অবস্থা বাংলাদেশের মতোই। আবার মনের গহীন কোণে এই অনুধাবনও থাকছে যে নিজেরা তাদের মতো বড় দল নন এবং যত্রতত্র টেস্টও খেলেন না।
‘আমার কাছে যেটা মনে হয় যদি পিছিয়ে যাওয়ার কথা বলেন বিশ্বের অন্যান্য দেশগুলোও পিছিয়ে যাবে। তো ওদের পিছিয়ে যাওয়া ও আমাদের পিছিয়ে যাওয়ার মধ্যে পার্থক্য আছে। আমাদের জন্য হয়ত একটু ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। কারণ আমরা টেস্ট ক্রিকেটে ততটা ভালো না। তবুও এই বছর টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের তিনটা ম্যাচ ভালো খেলতে পারিনি। এই সময় খেলাটা বন্ধ যাওয়া অবশ্যই হতাশার বিষয়। এবং এটাই স্বাভাবিক। বরং আমি বলব না থাকাটা অস্বাভাবিক। কারণ আপনি যখন ধারাবাহিক খেলার মধ্যে থাকেন এবং সে সময় যদি খেলা বন্ধ হয়ে যায় সেটা নিশ্চয়ই হতাশার। তবে আমাদের একটা বিষয় মনে রাখতে হবে, এখন পরিস্থিতির কারণেই এটা হয়েছে এবং এটা মেনে নিয়েই নতুন করে পরিকল্পনা করতে হবে ও শুরু করতে হবে। আমার কাছে এমনই মনে হয়। কারণ এটা একটা বাঁধা হয়ে এসেছে। এবং সমস্যাটা সবার। আমি আবারও বলছি এতে বড় দলগুলোর তেমন কোনো সমস্যা হবে ও না। কিন্তু আমাদের দলগুলো যারা টেস্টে ধারাবাহিক না। কিন্তু যে পরিস্থিতি তাতে কিছুই করার নেই। পুরো বিশ্বেরই একই অবস্থা।’
শনিবার (২৭ জুন) সারাবাংলার সঙ্গে একান্তে আলাপকালে কথাগুলো বলেন বাংলাদেশ টেস্ট দলের অধিনায়ক মুমিনুল হক।
গেল বছরের নভেম্বরে ভারতের বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের টেস্ট দিয়ে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের যুগে পা রেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু শুরুটা প্রত্যাশিত রঙে রাঙাতে পারেনি মুমিনুল হকরা। পক্ষান্তরে সেই যাত্রায় ছিল নিদারুণ হতাশা ও ক্লেশের ছটা। যা শুধুই হারের মান দণ্ডে নয়, খেলার ধরনেও। হোয়াইটওয়াশ তো হয়েছেই পাশাপাশি দুটি ম্যাচই সমাপ্তি দেখেছে মাত্র তিন দিনে! ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিংয়ের ধরন, টেম্পারমেন্ট, বোলিং আক্রমণ; সবই ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। ফেব্রুয়ারিতে পাকিস্তান সফরেও শপ্ত হার পিছু ছাড়েনি। দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি ইনিংস ও ৪৪ রানে নিজেদের করে নিয়েছিলেন আজহার আলী ও তার দল।
অবশ্য ফেব্রুয়ারিতে সফরকারী জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে উড়ন্ত জয়ে (ইনিংস ও ১০৬ রান) সাদা পোশাকে প্রবল বিক্রমে ঘুরে দাঁড়িয়ে ভারত ও পাকিস্তানের কাছে হারের ক্ষতে কিছুটা প্রলেপ দিয়েছিল ডমিঙ্গো শিষ্যরা। এবং সেই জয়ের আত্মবিশ্বাসকে সঙ্গী করেই করাচি টেস্টে যেতে চেয়েছিলেন মুমিনুল-তামিমরা। কিন্তু সেটা আর হলো কই? টাইগারদের প্রতিশোধের যাত্রায় বাধ সাধল করোনা। এরপর একে একে সব সিরিজই স্থগিত হয়ে গেল। মুমিনুলদেরও ছন্দে ফেরা হলো না। তবে এগুলো বেশি ভেবে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পথ রুদ্ধ করার পক্ষপাতি নন টাইগার টেস্ট দলপতি।
‘জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে ভালো একটা অবস্থানে চলে এসেছিলাম। উন্নতির একটা সাইন দেখছিলাম তখন। কিন্তু এটা নিয়ে আবার বেশি ভাবা যাবে না। তাহলে সামনের দিকে যাওয়ার বা উন্নতির জায়গাটা থাকবে না। আসলে এটা নিয়ে বেশি ভাবাও উচিত না। সামনে আমাদের যে খেলাগুলো আছে বা নতুন কর শুরু হলে আমাদের আবার সুন্দর করে পরিকল্পনা নিয়ে আগাতে হবে। এই সময়টাতে আমরা বুঝতে পারব কি করে আরো উন্নতি করা যায় ও নতুন নতুন পরিকল্পনা করে এই ফরম্যাটে আরও শক্তিশালী হওয়া যায়. কোন কোন জায়গায় কাজ করতে হবে।’