বার্সার শহরেই পয়েন্ট ব্যবধান বাড়িয়ে লিগের শীর্ষে রিয়াল
২৯ জুন ২০২০ ০৪:২৬
ম্যাচ শুরুর আগেই কিছুটা হলেও স্বস্তিতে ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। কারণ, গত ম্যাচেই শিরোপা দৌড়ে থাকা বার্সেলোনা পয়েন্ট হারিয়েছে সেল্টা ভিগোর কাছে। আর তাই তো এই ম্যাচ জিতলেই বার্সার থেকে দুই পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে যাবে রিয়াল। কাতালান শহরে বার্সেলোনার নগরপ্রতিদ্বন্দী এস্পানিওলের বিপক্ষে ০-১ ব্যবধানে জয় ছিনিয়ে নিয়ে লা লিগার শীর্ষে উঠে এল রিয়াল।
খাতা কলমে ম্যাচ শুরুর আগে রিয়াল মাদ্রিদ লিগের দ্বিতীয় স্থানে আর এস্পানিওল তখনও ২০ নম্বরে। অর্থাৎ স্প্যানিশ ফার্স্ট ডিভিশন থেকে অবনমনের সম্ভবনায় থাকা এস্পানিওলের বিপক্ষে মাঠে নামবে রিয়াল। অনুমিতভাবেই পূর্ণ তিন পয়েন্টের জন্য খেলতে নামে রিয়াল। তবে অন্যদিকে চাতক পাখির মতো চেয়ে থাকা বার্সেলোনা সমর্থকদের আশা নগরপ্রতিদ্বন্দ্বীরা অন্ততপক্ষে ড্র করে হলেও পয়েন্ট ব্যবধান বাড়তে দেবে না।
তবে লস ব্ল্যাঙ্কোসদের কৌশল ছিল ভিন্ন। গত কয়েক ম্যাচে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা ভিনিসিয়াস জুনিয়রকে এদিন শুরুর একাদশেই রাখলেন না জিদান। মদ্রিচের অনুপস্থিতিতে ইস্কোকে দায়িত্ব দিলেন মধ্যমাঠ সামলানোর। অন্যদিকে এই মৌসুমেই তিন কোচকে ছাঁটাই করে ৪র্থ কোচের অধীনে প্রথম ম্যাচ খেলতে নামে এস্পানিওল। আর শুরুতেই রিয়ালকে চমকে দেয় তারা।
দুর্দান্ত ফুটবল খেলে ম্যাচের প্রথম দিকেই জানান দেয় কাতালান শহরে এসে লড়াই না করে পয়েন্ট নিয়ে যেতে পারবে না লস ব্ল্যাঙ্কোসরা। তবে জিনেদিন জিদানের অধীনে এবারের রিয়াল মাদ্রিদ শেষ বাঁশির আগ মুহূর্ত পর্যন্ত লড়াই করার মানসিকতা নিয়েই মাঠে নামে। আর তাই তো দলের দুই গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় লুকা মদ্রিচ আর ফারল্যান্ড মেন্ডিকে ছাড়া খেলতে নেমেও দুর্বার তারা।
কেবল প্রথমার্ধই নয়, পুরো ম্যাচ জুড়েই দুর্দান্ত খেলে এস্পানিওল, তবে প্রতিপক্ষ যখন রিয়াল মাদ্রিদ তখন সুযোগ পেলেই কাজে লাগিয়ে ফেলবে মুহুর্তের ভেতরেই। ম্যাচের নিয়ন্ত্রণে পুরো ম্যাচ জুড়ে ছিল রিয়ালের আধিপত্য। প্রায় ৬৯ শতাংশ বলের দখল জানান দেয় তারই। অবশ্য কেবল বল পায়ে রেখেই আধিপত্য বিস্তার করেনি জিদানের শিষ্যরা। সেই সঙ্গে এস্পানিওলের গোলপোস্টে ১৪টি শটও নিয়েছে বেনজেমা-হ্যাজার্ডরা।
আক্রমণের দিক দিয়েও বেশ এগিয়েও ছিল গ্যালাক্টিকরা। তবে ডি বক্সের ভেতরে যেন কোনোভাবেই নিজেদের জাত চেনাতে পারছিল না বেনজেমা, হ্যাজার্ডরা। প্রথমার্ধ শেষের মিনিট খানিক বাকি থাকতে ডান প্রান্ত থেকে উড়ে আসা বল বেনজেমা শট নিলে ঠেকিয়ে দেন রিয়ালের সাবেক এবং বর্তমান এস্পানিওলের গোলরক্ষক ডিয়েগো লোপেজ। বেনজেমার শট লোপেজ ফিরিয়ে দিলে বল পেয়ে যান ক্যাসেমিরো, আর শট নেন তিনিও। তবে এদিন যেন দৈব্যশক্তি ভর করেছিল লোপেজের ওপর। তাই তো ঠেকিয়ে দেন ক্যাসেমিরোর শটও, তবে এখানেই শেষ নয়। পুরোপুরি বল ডি বক্স থেকে ক্লিয়ার করতে ব্যর্থ হলে গোলপোস্টের ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে থাকা হ্যাজার্ডের পায়ে বল পড়ে। আর হ্যাজার্ড সজোরে হাঁকান শট, সেখানেও এস্পানিওলের ত্রাতা হয়ে আসেন লোপেজ। দুর্দান্ত এক সেভ দিয়ে রক্ষা করেন দলকে। মাত্র ১৫ সেকেন্ডের মধ্যেই তিন তিনটি সেভ দিয়ে এস্পানিওলকে ম্যাচে ধরে রাখেন।
তবে খুব বেশি সময় রিয়ালকে আটকে রাখতে পারেনি স্বাগতিকরা। লোপেজের দুর্দান্ত তিনটি সেভের ঠিক পরের মিনিটে করিমে বেনজেমার ব্যাক হিল পাসে বল পেয়ে যান ক্যাসেমিরো। আগেরবার ভুল করলেও এবার আর বল জালে জড়াতে ভুল করেননি এই ব্রাজিলিয়ান। বল পাঠিয়ে দেন জালে। আর প্রথমার্ধ শেষের মিনিট খানেক আগে কাতালান শহরে লিড নেয় রিয়াল।
দ্বিতীয়ার্ধে খেলতে নেমে আরও ভয়ংকর হয়ে ওঠে এস্পানিওল। রিয়াল বলের পজিশন ধরে রাখলেও বেশ কয়েকটি দুর্দান্ত আক্রমণ করে রিয়ালের রক্ষণে ভয় দেখান রিয়াল মাদ্রিদের সাবেক স্ট্রাইকার এবং বর্তমান এস্পানিওল স্ট্রাইকার রাউল ডে থমাস। এদিন রক্ষণে যেন পাহাড়সম দৃঢ়তা নিয়ে মাঠে নামেন সার্জিও রামোস এবং রাফায়েল ভারান। দুর্দান্ত পারফরম্যান্স করে এস্পানিওল ফরোয়ার্ডদের তেমন সুযোগই দেয়নি থিবো কোর্তোয়াকে বিপদে ফেলার। শেষ পর্যন্ত আর কোনোন গোল না হওয়ায় ১-০ গোলের জয় আর পূর্ণ তিন পয়েন্ট নিয়েই মাঠ ছাড়ে রিয়াল মাদ্রিদ।
লিগের ৩২ রাউন্ড শেষে ২১ জয়, ৮ ড্র এবং ৩ হারে ৭১ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষ স্থানে রিয়াল মাদ্রিদ। অন্যদিকে সমান ম্যাচে ২১ জয়, ৬ ড্র এবং ৫ হারে রিয়ালের থেকে ২ পয়েন্ট পিছিয়ে ৬৯ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বার্সেলোনা। কেবল পয়েন্ট টেবিলের দিক দিয়েই শীর্ষে নয় রিয়াল। সেই সঙ্গে রক্ষণের দিক দিয়েই শীর্ষে রিয়াল। লা লিগার এবারের মৌসুমে সর্বোচ্চ ১৬টি ক্লিনশিট রেখে জিদানের দল। অন্যদিকে ক্লিনশিট রাখার দিক দিয়ে দ্বিতীয় স্থানে আছে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ (১৪)।
রিয়াল মাদ্রিদ বনাম এস্পানিওল রিয়ালের জয় লিগের শীর্ষে স্প্যানিশ লা লিগা