বৃথা মেসির ৭শ’তম, অ্যাটলেটিকোর সঙ্গে হার সমতুল্য ড্র বার্সার
১ জুলাই ২০২০ ০৪:৩২
ম্যাচের আগেই মানসিক চাপে বার্সেলোনা, লিগ হাত ফসকে বেরিয়ে যাচ্ছে চিরপ্রতিদ্বন্দী রিয়াল মাদ্রিদের কাছে। আর তা ঠেকাতে রিয়ালের নরগরপ্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদের বিপক্ষে জয়ের বিকল্প ছিল না বার্সেলোনার। তবে নানান নাটকীয়তার ম্যাচে শেষ পর্যন্ত হারের সমতূল্য ড্র নিয়েই নিয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে লিওনেল মেসিদের। তিন পেনাল্টির ম্যাচে ২-২ গোলের সময়তায় শেষ লড়াই।
অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে বার্সেলনার প্রাপ্তি এক পয়েন্ট, আর লিওনেল মেসির প্রাপ্তি পেশাদার ক্যারিয়ারের ৭০০তম গোল। তবে তার ৭শ’তম গোলটা বৃথাই গেল, কেননা দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে জয় আসেনি এই গোলের পরেও। পয়েন্ট ভাগাভাগি করে রিয়াল মাদ্রিদের থেকে পিছিয়ে পড়তে হলো কাতালানদের। অ্যাটলেটিকোর সঙ্গে ম্যাচ শুরুর আগে অবশ্য ন্যু ক্যাম্পে এগিয়ে ছিল বার্সায়, কারণ লা লিগায় শেষ ১০ বছরে একটি ম্যাচেও বার্সাকে হারাতে পারেনি অ্যাটলেটিকো। আর ন্যু ক্যাম্পে শেষবার বার্সাকে তারা হারিয়েছিল ১৪ বছর আগে ২০০৬ সালে।
পরিসংখ্যান কথা বলছিল বার্সার পক্ষেই, সেই সঙ্গে লিওনেল মেসি অ্যাটলেটির বিপক্ষে ৩১ ম্যাচে করেছেন ৪০টি গোলও। তবে বার্সার দুঃশ্চিন্তার কারণ নিজেদের সাম্প্রতিক ফর্ম, অন্যদিকে ভয়ের কারণ অ্যাটলেটির দুর্দান্ত ফর্ম। ন্যু ক্যাম্পের নাটকীয় ম্যাচে দুই দল পেয়েছে মোট তিনটি পেনাল্টি, অ্যাটলেটি একটি পেনাল্টি মিসও করেছে আবার সেই পেনাল্টি নতুন করে আবারও নিতে হয়েছে।
ম্যাচের ১৫তম মিনিটে ইয়ানিক ক্যারাস্কো দুর্দান্তভাবে জেরার্ড পিকেকে কাটিয়ে বল নিয়ে ঢুকে পড়েন বার্সার ডি বক্সে, আর তখনই আর্তুরো ভিদাল এসে ফাউল করেন তাকে। সঙ্গে সঙ্গে ভিডিও অ্যাসিস্ট্যান্ট রেফারির (ভিএআর) সহায়তায় পেনাল্টি দেওয়া হয় অ্যাটলেটিকে। প্রথম দফায় বল নিয়ে পেনাল্টি শট নিতে আসেন ডিয়েগো কস্টা। কস্টার পেনাল্টি শট রুখে দেন টার স্টেগান। তবে একি? শট নেওয়ার আগেই গোললাইন ছেড়ে এগিয়ে আসায় হলুদ কার্ড দেখেন স্টেগান আর আবারও পেনাল্টি নিতে নির্দেশ দেওয়া হয় অ্যাটলিকে। এর প্রতিবাদ করতে আসায় হলুদ কার্ড দেখেন জেরার্ড পিকেও।
এবার আর পেনাল্টির জন্য বল তুলে নেননি কস্টা, এবার বল তুলে নিলেন রিয়াল মাদ্রিদের একাডেমির খেলোয়ার সাউল নিগুয়েজ। সাউল আর ভুল করেননি, বল পাঠিয়ে দিয়েছেন সোজা জালে। আর তাতেই সমতায় ফেরে অ্যাটলেটি কারণ তার আগেই কর্নার থেকে মেসির নেওয়া শট কস্টার উরুতে লেগে বল চলে যায় জালে। ম্যাচের ১১ মিনিটে ন্যু ক্যাম্পে লিড নেয় বার্সা। এভাবে ১-১ সমতায় শেষ হয় ম্যাচের প্রথমার্ধ।
প্রথমার্ধ সমতায় শেষ হলেও ম্যাচের উত্তেজনা তখনও বাকি, বিরতি থেকে ফিরে ম্যাচ জিততে মরিয়া বার্সা। শুরুতেই আক্রমণাত্মক লিওনেল মেসিরা। বিরতি থেকে ফেরার মিনিট পাঁচেক পরেই ডি বক্সে নেলসন সেমেডোকে ফাউল করেন অ্যাটলেটির ডিফেন্ডার ফিলিপে। আর তাতেই রেফারি দেখিয়ে দেন পেনাল্টি স্পট। পেনাল্টি নিতে আসেন লিওনেল মেসি, দুই মাদ্রিদের সমর্থকরাই হয়ত সে সময় আঙুল কামড়ে মনে মনে বলছিলেন পেনাল্টি মিস করুক মেসি। তবে মেসি ভুল করেননি, পেনাল্টি স্পট থেকে গোল করে দলকে এনে দেন ২য় বারের মতো লিড আর সেই সঙ্গে পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের ৭০০তম গোলও।
তবে মেসির গোল খুব বেশি সময় এগিয়ে রাখতে পারেনি কাতালানদের। ম্যাচের ৬১তম মিনিটে নেলসন সেমেডোর করা ফাউলে ডি বক্সে পড়ে যান ইয়ানিক ক্যারাস্কো। আর তাতেই ম্যাচে ২য় পেনাল্টি পায় অ্যাটলেটি। সেখান থেকে আবারও গোল করেন সাউল আর দলকে ২য় বারের মতো সমতায় ফেরান। ম্যাচের বাকি সময় দুর্দান্ত আক্রমণ করে দু’দলই তবে গোলের দেখা পায়নি কেউই। এর মধ্যে আর্তুরো ভিদাল একটি সহজ হেড মিস করেন আর সিমিওনের শিষ্যদের মধ্যে কস্টা মিস করেন কয়েকটি সহজ সুযোগ। আর তাতেই শেষ পর্যন্ত ২-২ গোলের সমতায় শেষ হয় ম্যাচটি। আর পয়েন্ট ভাগাভাগি হওয়ায় খুশি রিয়াল মাদ্রিদও।
বার্সেলোনার এই ড্র’তে লাভবান হলো রিয়াল মাদ্রিদই, কারণ শিরোপার দৌড়ে থাকা বার্সেলোনা পয়েন্ট হারানোয় সামনের ম্যাচে জয় পেলেই ব্যবধান বেড়ে দাঁড়াবে ৪ পয়েন্টে। লা লিগার ৩৩ ম্যাচ শেষে ২১ জয়, ৭টি ড্র এবং ৫ হারে ৭০ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বার্সেলোনা। আর সমান ম্যাচে ১৫ জয়, ১৪ ড্র এবং ৪ হারে ৫৯ পয়েন্ট নিয়ে ৩য় স্থানে অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ। অন্যদিকে বার্সেলোনার থেকে এক ম্যাচ কম ৩২টি ম্যাচ খেলে ২১ জয় ৮টি ড্র এবং ৩টি ম্যাচে হেরে ৭১ পয়েন্ট নিয়ে লা লিগার পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে রিয়াল মাদ্রিদ।
৭০০তম গোল বার্সেলোনা বনাম অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ লিওনেল মেসি স্প্যানিশ লা লিগা