জীবনটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ: তাইজুল
১ জুলাই ২০২০ ১৫:৫৭
করোনাকালে ক্রিকেট নেই। নেই মানে? থাকবে না এটাই তো স্বাভাবিক। প্রতিদিনই যে দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যুর রেকর্ড হচ্ছে সে দেশে ক্রিকেট ফেরানোটা অপরিণামদর্শী সিদ্ধান্ত ছাড়া আর কি? খেলতে এসে কোনো ক্রিকেটার আক্রান্ত হলে এই দায়িত্ব কে নেবে? বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড অনেক আগেই একথা সাফ জানিয়ে দিয়েছে যে এই পরিস্থিতিতে তারা এই ঝুঁকি নিতে চাইছে না। তাছাড়া বিসিবি’র দায়িত্ব নেওয়ারই বা প্রশ্ন আসছে কেন? ভাবনাটি ক্রিকেটারদের ভেতরেই তো উদ্রেক হওয়ার কথা যে এই পরিস্থিতি তাদের খেলাটা ঠিক হবে কি না। আগে জীবন নাকি ক্রিকেট?
হ্যাঁ, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলাম ঠিক এভাবেই ভাবছেন। তার কাছে পেশার চাইতে জীবনটাই আগে। জীবন বিপন্ন করে খেলার পক্ষপাতি তিনি নন। বেঁচে থাকার অবলম্বন হিসেবে নিশ্চয়ই ক্রিকেট তার জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি জায়গা দখল করে আছে তাই বলে জীবনটাও কিন্তু তাদের কাছে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। তাছাড়া যেহেতু একে একে সব সিরিজই স্থগিত হয়ে গেছে কাজেই এখনই মাঠে যাওয়ার তাড়াও নেই। তবে বিসিবি যদি নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়ে ক্রিকেট ফেরাতে পারে তাহলে তিনি বা তার সতীর্থরা আপত্তি করবেন না। অর্থাৎ মাঠে ফেরা, না ফেরা, আউটডোর অনুশীলনে যাওয়া, না যাওয়া; এসবের জন্যই তিনি এবং জাতীয় দলের অন্যান্যরা বাংলাদশ ক্রিকেট বোর্ডের দিকে তাকিয়ে আছেন।
বুধবার (১ জুলাই) সারাবাংলাকে একথা জানালেন তাইজুল ইসলাম।
তিনি বললেন, ‘এখন যে অবস্থা তাতে জীবনটাও অনেক গুরুত্বপূর্ণ। জীবন যদি না থাকে খেলা নিয়ে চিন্তাই আসবে না। আসলে এখন অর্থনৈতিক অবস্থা দেখতে হবে আবার জীবনের কথাও চিন্তা করতে হবে। আমার কাছে মনে হয় এক্ষেত্রে বিসিবি যে সিদ্ধান্ত দেবে সেটাই ভালো হবে। কেননা আমি মনে করি ওনারা আমাদের ভালই চায়। ওনারা যেভাবে বলবে আমরা সেটাই মেনে নেব।’
ক্রিকেটের খোঁজ খবর কম বেশি যারা রাখেন তারা নিশ্চয়ই জানেন যে, করোনাকালেও বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশে ক্রিকেট ফিরেছে। চলতি মাসের ৮ তারিখ থেকে তো ইংল্যান্ড-ওয়েস্ট ইন্ডিজ টেস্ট সিরিজই শুরু হচ্ছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট খেলতে পাকিস্তানও ইতোমধ্যে ইংল্যান্ডে পৌঁছেছে। দক্ষিণ আফ্রিকা, আফগানিস্তানও অনুশীলন শুরু করেছে। ভারতের কয়েকজন প্লেয়ার ব্যক্তিগত অনুশীলনও শুরু করে দিয়েছেন। শ্রীলঙ্কা তো গত মাসেই অনুশীলন শুরু করে দিয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডও করোনাকালে অনুশীলন ফেরাতে সব ধরনের প্রস্তুতেই নিয়েছিল। আইসিসি’র গাইডলাইন মেনে গত মাসের শুরুতে মেডিকেল বিভাগকে দিয়েছিল অনুশীলন মডিউল তৈরির নির্দেশনা। বিসিবি মেডিকেল বিভাগ ও তদনুযায়ী ত্রিমুখী পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল। কিন্তু আচমকাই দেশের করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করলে সিদ্ধান্ত বদলায় লাল-সবুজের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ প্রশাসন। করোনার ক্রম ঊর্ধ্বগতিতে গত মাসেই স্থগিত হয়ে যায় নিউজিল্যান্ড ও শ্রীলঙ্কা সিরিজ।
তাহলে তো আর অনুশীলন নিয়ে তাড়াহুড়োর প্রয়োজনই নেই। সেপ্টেম্বরে এশিয়া কাপ অনুষ্ঠিত হলে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতি মাসের শেষে অনুশীলন ফেরালেও ক্ষতি নেই।
কিন্তু ক্রিকেট মানে তো শুধু জাতীয় দল নয়। ঘরোয়া ক্রিকেট লিগও প্রতিটি দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে অগ্রণী ভুমিকা পালন করে থাকে। তার কি হবে? সেই যে মার্চে প্রথম রাউন্ড শেষে অনির্দিষ্টকালের জন্য ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ বন্ধ ঘোষণা করা হলো, করোনার কারণে তা আর মাঠে ফেরেনি। কবে ফিরবে? পরিস্থিতির বিবেচনায় তাও বলা যাচ্ছে না। তাহলে ওই ক্রিকেটারদের কী হবে যাদের আয়ের উৎস শুধুই প্রিমিয়ার লিগ?
তাইজুল অকপটে স্বীকার করে নিয়েছেন যে সময়টি তাদের জন্য নিদারুণ কষ্টের। কিন্তু তবরু সর্বাগ্রে জীবনকেই এগিয়ে রাখলেন সাদা পোশাকে লাল সবুজের এই স্পিন কান্ডারি। ‘এটা ঠিক যে প্রিমিয়ার লিগ না হলে অনেক ক্রিকেটারই আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হবেন বা ইতোমধ্যেই হয়েছেন। এমনও আছে না খেয়ে থাকা লাগতে পারে। এমন একটা পরিস্থিতি। কিন্তু সবার আগে আপনাকে জীবন নিয়ে ভাবতে হবে। জীবনই যদি না থাকে তখন আপনি কি করবেন?’
তাইজুল ইসলাম বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) বাংলাদেশ জাতীয় কিকেট দল