ক্রিকেট ফিরেছে প্লাস্টিকে মুড়িয়ে
২ জুলাই ২০২০ ১৩:২৩
কত নাটকীয়তার শেষে অবশেষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মাঠে গড়াচ্ছে। ইংল্যান্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সফর দিয়েই ক্রিকেটের নতুন যাত্রা শুরু। জনপ্রিয় খেলাধুলার মধ্যে ক্রিকেটই ফিরতে একটু দেরি করে দিয়েছে। ফুটবল শুরু হয়েছে প্রায় এক মাস হতে চলল। অবশেষে ক্রিকেটও সেই পথ ধরে এগুচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ৮ জুলাই শুরু হবে ইংল্যান্ড এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের মধ্যকার প্রথম টেস্ট। তবে ইংল্যান্ডে ক্রিকেট জমে উঠেছে এখনই।
মাঠে ক্রিকেট ফিরলেও তা দেখে মনে হতেই পারে এ তো প্লাস্টিকে মোড়ানো। হ্যাঁ সত্যটাও তাইই। ক্রিকেট ফিরেছে তবে তা প্লাস্টিকে মুড়িয়েই। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর ক্রিকেটে পরিবর্তন আসবে একথা জানিয়েছিল ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা। তবে তা যে এভাবে আসবে হয়ত কল্পনা করেনি কেউই। কিংবা পরিবর্তনটা এভাবে আসলেও তা দেখতে এমনটা দেখাবে তা হয়ত বুঝতে পারেননি ক্রিকেট বিশ্লেষকরাও।
মানুষের লালার ড্রপলেট থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। আর তাই তো বহুল পুরাতন ক্রিকেট বলের এক পাশ উজ্জ্বল রাখার জন্য লালা ব্যবহারের নিয়ম নিষিদ্ধ করেছে আইসিসি। এছাড়া করোনা পরবর্তী ক্রিকেটে নানান পরিবর্তনের সুপারিশ করেছিলেন অনীল কুম্বলের নেতৃত্বাধীন আইসিসি’র ক্রিকেট কমিটি। ৯ জুন এই কমিটির সুপারিশ করা নিয়মের অনুমোদন চূড়ান্ত করেছে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা-আইসিসি।
- কভিড-১৯ বদলি
- বলে থুতু-লালার ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা
- নিরপেক্ষ আম্পায়ারের বদলে স্থানীয় আম্পায়ারদের ব্যবহার
- বাড়তি রিভিউ
- বাড়তি লোগো
তবে এগুলো তো ছিল ক্রিকেটের লিখিত আইন। এর বাইরেও কিছু অলিখিত আইনও চলে এসেছে। সাউদাম্পটনে প্রস্তুতি ম্যাচে ইংল্যান্ড দল দুই ভাগে ভাগ হয়ে খেলছে। আর সেই ম্যাচের ছবিতে স্পষ্টত ফুটে উঠেছে কীভাবে বদলে গেছে চিরচেনা সেই ক্রিকেট। স্টেডিয়ামের ভেতরেই বাউন্ডারির ওপাশে বসানো হয়েছে হাত জীবাণুমুক্ত করার জন্য হ্যান্ড স্যানিটাইজার। যদিও তা সকলের সুরক্ষার জন্যই দেওয়া হয়েছে তবে এত নতুন এক দৃশ্য চিরচেনা ক্রিকেটে।
সাধারণত ক্রিকেট বল আম্পায়ার এবং মাঠের খেলোয়াড়রা নিজেদের কাছে সংরক্ষণ করে। তবে বাড়তি সতর্কতার জন্য এবার থেকে আর তা নাও হতে পারে। এখানে দেখা যাচ্ছে বল সংরক্ষণ করা হচ্ছে পলিথিনের ব্যাগে। যাতে করে করোনার সংক্রমণের ভয় থেকে রক্ষা করা যায় ক্রিকেটারদের।
ক্রিকেটারদের মাঠে নামার সময় সবসময়ই দেখা মেলে একে অন্যের ঘাড়ে হাত রেখে কিংবা সতীর্থদের সঙ্গে অন্য কোনো দুষ্টামি করতে করতে মাঠে নামেন। কিন্তু এখন থেকে এই চিত্রের দেখা মিলবে বলেই মনে হচ্ছে। মহামারির কারণে দেখা যাচ্ছে হ্যান্ড গ্লভস পরে মাঠে নামছেন ইংলিশ ক্রিকেটার।
অবশ্য গ্লাভস পরে মাঠে নামাটা কেবল ক্রিকেটারদের জন্যই অলিখিত নিয়ম নয়। সেই সঙ্গে মাঠের বাইরেও যারা অবস্থান করবেন তারাও নিজেদের সুরক্ষার জন্য গ্লভস ব্যবহার করে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন। মাঠে খেলোয়াড়দের জন্য পানি নিয়ে আসা ইংল্যান্ডের ক্রিকেটার হাতে গ্লভস পরে আছেন সাবধানতার জন্য। সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করেই সতীর্থদের জন্য মাঠে পানি নিয়ে যাচ্ছেন আরেক ক্রিকেটার।
চরম উত্তেজনার মুহুর্তে বোলার প্রতিপক্ষের সেট ব্যাটসম্যানের উইকেটটা তুলে নিলেন আর সঙ্গে সঙ্গে সতীর্থরা তাকে জড়িয়ে ধরে বুনো উল্লাসে মাতলেন। না! এমন দৃশ্য অদূর ভবিষ্যতে আর দেখা নাও মিলতে পারে। কারণ অলিখিত নিয়ম অনুযায়ী খেলার মাঠেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার চেষ্টা করতে হবে ক্রিকেটারদের। আর তাই তো ম্যাচের যেকোনো উত্তেজনার মুহুর্তেও উইকেট তুলে নিলেও সতীর্থদের সঙ্গে তা বাধ ভাঙা উল্লাসে ভাগাভাগি করে নিতে পারবেন না। ক্রিকেটে এর থেকে কষ্টদায়ক দৃশ্য আর কিই বা হতে পারে? ভাবতে কষ্টকর মনে হলেও এটাই বাস্তবতা এখন। ক্রিকেট যেন মুড়িয়ে গেছে প্লাস্টিকে। যেখানে মানুষের জীবনটাই সব থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
তবে ক্রিকেট প্লাস্টিকে মুড়িয়ে ফিরলেও ক্রিকেটের সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখনই ফিরতে পারছেন না মাঠে। বলছিলাম দর্শকদের কথা। সকল ধরনের ক্রীড়া ইভেন্টেই এখন পর্যন্ত সাধারণ দর্শকরা নিষিদ্ধ। ক্রিকেটেও এর ব্যতিক্রম নয়। তাই তো আগামি ৭ জুলাই ইংল্যান্ডের সাউদাম্পটনে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ফিরলেও দর্শক সমর্থকদের জন্য তা ফিরছে কেবল টিভি সেটের সামনেই। এখনই স্টেডিয়াম খুলছে না সাধারণ দর্শকদের জন্য। আর নিঃসন্দেহে মাঠের ক্রিকেটাররা দর্শকের অনুউপস্থিতি অনুভব করবেন।
তবে সবকিছু বিপরীতে মনে হলেও ক্রিকেট ফিরছে। হোক না তা প্লাস্টিকে মুড়িয়ে, সামাজিক দূরত্ব মেনে কিংবা নিজ সতীর্থদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি না করতে পেরেও।
ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল ইংল্যান্ড বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ করোনাভাইরাস ক্রিকেট ফিরেছে টেস্ট সিরিজ