বার্সেলোনার জাপানিজ মেসি খেলবেন রিয়ালে!
৪ জুলাই ২০২০ ১৯:২০
বার্সেলোনার মেসির থেকে অবশ্য জাপানিজ মেসি বলেই বেশি পরিচিত তাকেফুসা কুবো। ছিলেনও বার্সেলোনার একাডেমি লা মাসিয়াতে। সেখান থেকেই তার নাম নতুন মেসি। তবে পাশার দান পাল্টে গেছে, এখন সে বার্সেলোনার নতুন মেসি নয় কুবো হচ্ছেন রিয়াল মাদ্রিদের মেসি। চলতি মৌসুমের শুরুতে ২০১৯ সালে জাপানের এফসি টোকিও থেকে মাত্র ১০ লাখ ইউরোর বিনিময়ে রিয়ালে যোগ দেন কুবো।
কুবোর মেসি হয়ে ওঠার গল্পটা শুনতে বেশ সহজ মনে হলেও রাস্তাটা সহজ ছিল না। জাপানের কানাগাওয়া কাওয়াসাকিতে জন্ম ২০০১ সালে। মাত্র ৭ বছর বয়সে কুবো তার জন্মস্থান কাওয়াসাকির এফসি পেরেসিম্মনে যোগ দেন। ২০০৯ সালে বার্সেলোনা সকার ক্যাম্পে মাত্র ৮ বছর বয়সে সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হন কুবো।
সেই সকার ক্যাম্পে কুবোর ক্লাব তৃতীয় স্থানে থেকে শেষ করেছিল, তবে টুর্নামেন্ট জুড়ে তার জাদুতে মোহিত হয়ে অন্য কাউকে আর টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার দেওয়ার দৃষ্টতা করেনি আয়োজকরা। বেলজিয়ামে ইউরোপ সফর শেষে নিজ দেশে ফিরে কাওয়াসাকি ফ্রন্টেলের জুভেনাইল জুনিয়র দলের সঙ্গে অনুশীলন শুরু করেন কুবো। তবে বেশি আর সেখানে খেলতে হয়নি তাকে।
২০১১ সালে মাত্র ১০ বছর বয়সে বার্সেলোনার একাডেমি লা মাসিয়ায় যোগ দেওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয় কুবোকে। সেখানে পরীক্ষা শেষে লা মাসিয়ার অনূর্ধ্ব-১১ বার্সা আলেভি দলে জায়গা করে নেন কুবো। এই দলের হয়ে ২০১২/২০১৩ মৌসুমে মাত্র ৩০ ম্যাচে ৭৪ গোল করেন কুবো। পরের মোউসুমেই তাকে বার্সার অনূর্ধ্ব-১৪ দলে উন্নীত করা হয়। কিন্তু সেখানেই কুবোর জন্য কাল হয়ে দাঁড়ায় ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা-ফিফা।
নতুন মেসি আর বার্সেলোনার মাঝের দেওয়াল কাতালান ক্লাবটির নিয়ম ভঙ্গ। অনূর্ধ্ব-১৮ এর খেলোয়াড়দের চুক্তিবদ্ধ করার সময় ফিফার আইন ভঙ্গ করে বার্সেলোনা আর তাই তো শাস্তি পায় বার্সা। আর সেবারই নিয়মিত খেলার সময়ের জন্য ২০১৫ সালে বার্সেলোনার একাডেমি ছেড়ে আবারও জাপানে পাড়ি জমান কুবো। সেখানে এফসি টোকিও যুব দলে যোগ দেন তিনি।
অনূর্ধ্ব-১৮ দলে যোগ দিলেও পরের বছরেই তাকে এফসি টোকিওর মূল দলে উন্নীত করা হয়। যখন টোকিওর ক্লাবটির মূল দলে কুবোর অভিষেক হয় তখন খাতা কলমে তার বয়স মাত্র ১৫ বছর। জাপানিজ লিগে যা রেকর্ড কারণ এর আগে কুবোর থেকে কম বয়সে কোনো খেলোয়াড়েরই জাপানিজ লিগে অভিষেক হয়নি।
অবশ্য কেবল সবচেয়ে কম বয়সেই অভিষেকই হয়নি কুবোর সেই সঙ্গে সবচেয়ে কম বয়সে জাপানিজ লিগের গোলদাতা হিসেবেও রেকর্ড গড়েছেন তিনি। দুই বছর যেতে না যেতেই এফসি টোকিওর মূল দলের নিয়মিত খেলোয়াড় হয়ে উঠলেন কুবো। আর তখনই রিয়াল মাদ্রিদের চোখ পড়ে তার উপর। অবশ্য আগে থেকেই গ্যালাক্টিকদের স্কাউটস নজর রাখছিল এই জাপানিজ মেসির উপর।
২০১৯ সালের জুনের ১৪ লস ব্ল্যাঙ্কোসরা মাত্র ১ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে এফসি টোকিও থেকে উড়ে আনে স্পেনে। এফসি টোকিওর মূল দলে খেললেও রিয়াল কুবোকে নিজেদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের হয়ে চুক্তিবদ্ধ করে। রিয়ালের প্রাক মৌসুম প্রীতি ম্যাচে আমেরিকাতে এবং জার্মানিতে খেলেছিলেন কুবো। এরপরে নিয়মিত লা লিগার ম্যাচে খেলার সুযোগের জন্য তাকে মায়োর্কাতে লোনে পাঠায় রিয়াল।
আর মায়োর্কাতে যোগ দিয়েই দলের নিয়মিত খেলোয়াড় বনে গেছেন কুবো। চলতি মৌসুমে লা লিগায় ৩১টি ম্যাচ খেললেও ২০টি ম্যাচে ছিলেন শুরুর একাদশে। আর ১৮ বছর বয়সী কুবো তার প্রতিদানও দিয়েছেন। দুর্দান্ত পারফর্ম করে মায়োর্কার সর্বোচ্চ গোলের যোগানদাতাও তিনিই। অবশ্য কেবল গোলের যোগান দিতেই পারদর্শী নন তিনি সেই সঙ্গে বল জালে জড়াতেও মাহির কুবো। ইতোমধ্যেই স্প্যানিশ লা লিগায় ৩টি গোল করেছেন এই জাপানিজ।
লা লিগায় প্রতি ২৮৮ মিনিটে একটি গোলের সঙ্গে যুক্ত কুবো। তার দল মায়োর্কা যদিও রেলিগেশন জোনে অবস্থান করছে। তবে লা লিগায় দুর্দান্ত পারফর্ম করে চলেছেন নতুন এই মেসি।
কুবো কেবল ক্লাবেই দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন না, জাতীয় দলের হয়েও সমান ভাবে পারফর্ম করে চলেছেন। ২০১৮ বিশ্বকাপে ১৭ বছর বয়সেই সুযোগ পেয়েছিলেন। এছাড়াও খেলেছেন কোপা আমেরিকার গেল আসরে। যেখানে দক্ষিণ আমেরিকায় জাপান দলকে খেলার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল।
রিয়ালে নাম লেখানোর আগে অবশ্য সুযোগ ছিল পুনরায় বার্সেলোনায় যোগ দেওয়ার। তবে কাতালান ক্লাবের একাডেমির খেলোয়াড় হওয়া স্বত্বেও রিয়াল মাদ্রিদকে নিজের ভবিষ্যৎ হিসেবে বেছে নেন এই তরুণ। আর তাই তো তাকেই নিজেদের মেসি হিসেবে মনে করছেন রিয়াল মাদ্রিদের সমর্থকেরা। কেনই বা তাকে মেসির সঙ্গে তুলনা করা হচ্ছে?
এর কারণ অবশ্য কুবো নিজেই। ছোট বেলা থেকেই দুর্দান্ত ফুটবল পায়ে, ঠিক যেমন লিওনেল মেসি ছিলেন তার ছোটবেলায়। যেভাবে তিন-চারজনকে কাটিয়ে বল নিয়ে ঢুকে পড়তেন প্রতিপক্ষের ডেরায় সেভাবেই নিজেকে তৈরি করেছেন কুবো। অর্থাৎ লিওনেল মেসির খেলার ছায়ায় যেন কুবোর মধ্যে। এ কারণেই বিশ্বজুড়ে তার নাম নতুন মেসি কিংবা জাপানিজ মেসি।
স্প্যানিশ লা লিগায় ম্যাচ প্রতি সর্বোচ্চ সংখ্যক ড্রিব্লিংয়ে সবার উপরে লিওনেল মেসি এত অনুমিতই। আর নতুন মেসি অর্থাৎ কুবো আছেন ১২ নম্বরে। প্রতি ম্যাচেই গড়ে প্রায় দুইটি ড্রিব্লিং করেন কুবো। যেখানে বার্সেলোনার ডাচ মিডফিল্ডার ফ্র্যাঙ্কি ডি ইয়ং ম্যাচ প্রতি ১ দশমিক ৬টি ড্রিবল করেন। এছাড়াও ম্যাচ প্রতি ১টি করে কি পাসও দিয়ে থাকেন এই জাপানিজ। সব মিলিয়ে নিজের কক্ষপথেই আছেন তিনি।
এই মৌসুম শেষে ফিরবেন নিজ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে, সেখানেই নির্ধারিত হবে তার পরের মৌসুমের ভাগ্য। সামনের মৌসুমেও রিয়াল মাদ্রিদ চাইছে তাকে অন্য কোনো ক্লাবে লোনে পাঠাতে, যেখানে নিয়মিত খেলার সুযোগ পাবেন কুবো এবং সেই দলটি চ্যাম্পিয়নস লিগে খেললে তো সোনায় সোহাগা। এরই মধ্যে রিয়াল সোসিয়েদাদ, সেভিয়ার মতো ক্লাব কুবোকে লোনে নেওয়ার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। লস ব্ল্যাঙ্কোসদের লোন ডিপার্টমেন্ট এখনও এই সকল প্রস্তাব নিয়ে পর্যালোচনা করছেন।
জাপানিজ মেসি টাকেফুসো কুবো বার্সেলোনা মায়োর্কা রিয়াল মাদ্রিদ লা মাসিয়া লিওনেল মেসি স্পোর্টস স্পেশাল