ঘরে বসে থেকে স্কিলে ‘মরিচা’
৪ জুলাই ২০২০ ১৭:১১
করোনাভাইরাসের কারণে চার মাস হতে চলল ঘরে বসে ক্রিকেটাররা। নেহায়াৎ প্রয়োজন না হলে কেউই ঘরের বাইরে যাচ্ছেন না। যাবেনই বা কেন? একে একে টাইগারদের সব সিরিজই তো স্থগিত হয়ে গেল। তাছাড়া দেশের করোনা পরিস্থিতিও ক্রমেই বিরুপ আকার ধারণ করছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে তারা ঘরে বসে থাকাই শ্রেয়তর মনে করছেন। যদিও কেউই হাত-পা গুটিয়ে বসে নেই। বিসিবি’র মেডিকেল বিভাগ থেকে নির্দেশিত ফিটনেস ট্রেনিং বেশ জোরেসোরেই চালিয়ে যাচ্ছেন। যেটা হচ্ছে না সেটা হলো, স্কিল (ব্যাটি, বোলিং, ফিল্ডিং) ট্রেনিং। এতে করে তাদের স্কিলে মরিচা ধরে যাচ্ছে বলে মনে করছেন দেশ সেরা ক্রিকেট কোচ, বিশ্লেষক ও বোদ্ধা নাজমুল আবেদীন ফাহিম।
ঘরের চৌহর্দিতে ফিটনেস ট্রেনিং করে তারা হয়ত শারীরিকভাবে ফিট থাকতে পারছেন কিন্তু স্কিল ফিটনেস তাদের একবারেই হচ্ছে না। ব্যায়াম করে শরীরের ও মনের উন্নতি হয়ত সম্ভব কিন্তু ম্যাচ দক্ষতা উন্নয়ন তো আর সম্ভব নয়। ম্যাচের দক্ষতা বাড়াতে চাই স্কিল ট্রেনিং। যেখানে ঘণ্টার পর ঘণ্টা ব্যাটে-বলে ঘাম ঝরিয়ে নিজেদের ঝালিয়ে নেবেন ক্রিকেটাররা। সেটা আর হচ্ছে কই? আর হচ্ছে না বলেই তাদের স্কিলে মরিচা ধরতে শুরু করেছে। যার পরিণাম ভয়াবহ বলে মনে করছেন ফাহিম।
ভয়াবহ এই অর্থে যে টিম বাংলাদেশ যখন করোনার ভয়ে ঘরে বসে যখন শুধুই ফিটনেস ট্রেনিং গুলো করে যাচ্ছেন বিশ্বের প্রায় প্রতিটি ক্রিকেট খেলুড়ে দেশই তখন মাঠে ক্রিকেট ফিরিয়েছে। হয়ত তারা খেলায় ফেরেনি কিন্তু অনুশীলন তো শুরু করেছেন। করোনাভীতি তুচ্ছজ্ঞান করে মাঠে চালিয়ে যাচ্ছেন হাড় ভাঙা স্কিল অনুশীলন। এক্ষত্রে ব্যতিক্রম কেবল ভারত। ব্যতিক্রম তো আর উদাহরণ হতে পারে না। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি বাংলাদেশ সম্ভবত ভারতকেই অনুসরণ করছে। এতে করে তামিম-মুশফিকরা আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় ঢের পিছিয়ে পড়ছেন বলে মত ফাহিমের এবং অনুমিতভাবেই অদূর ভবিষ্যতে এই ভুলের মাশুল তাদের বেশ চওড়া দামে দিতে হবে।
উদ্ভুত পরিস্থিতিতে দলগত অনুশীলন না হলেও অন্তত ব্যক্তিগত অনুশীলন ফেরানোর তাগিদ দিলেন বিসিবি’র সাবেক এই ন্যাশনাল গেম ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার ও বর্তমান বিকেএসপির এই নন্দিত কোচ।
‘পিছিয়ে যাওয়াটা তুলনামুলক ব্যাপার। অন্যরা যদি কাজগুলো না করে আমরা কিন্তু পিছিয়ে যাই না। কিন্তু যদি অন্যরা কাজগুলো শুরু করে এবং আমরা না করি তাহলে তো অবশ্যই পিছিয়ে যাই। সমস্যাটা অন্যান্য দেশ ইতোমধ্যেই কাজ শুরু দিয়েছে। এবং আমার বিশ্বাস ওদের ব্যক্তিগত অনুশীলনের ব্যবস্থাও আছে। ওরা চাইলে বোলিং মেশিনে ব্যাটিং অনুশীলন করছে কিংবা বোলার দিয়েই করছে। যেটা আমাদের এখানে একেবারেই হয়নি। হয়ত আমাদের এখানে করোনা পরিস্থিতি ভালো না। কিন্তু আমরা যদি ব্যক্তিগত অনুশীলনের ব্যবস্থাও তৈরি করে দিতে পারি তাহলে ওই অনুশীলনটা অন্তত তারা করতে পারবে। কারণ এটা না করতে না করতে ওদের স্কিলে মরিচা পড়ে যাচ্ছে।’
গত বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবি জানিয়েছে করোনায় স্থবির ক্রিকেট ফেরাতে তাদের অধীনে দেশের ভেন্যুগুলো প্রস্তুত। করোনাকালে একশরও বেশি গ্রাউন্ডসম্যানের নিরলস প্রচেষ্টায় দেশের আটটি ভেন্যুর পিচ, আাউটফিল্ডসহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধাদি তৈরির কাজ শেষ। বিসিবি’র এই বিজ্ঞপ্তিতে একটি ইঙ্গিত সুস্পষ্ট যে মার্চ থেকে বন্ধ হওয়া ক্রিকেট পুনারায় সচল হতে যাচ্ছে। যার শুরুটা হবে অনুশীলন দিয়েই। কিন্তু কবে? সেটা এখনো নিশ্চিত করেনি লাল সবুজের ক্রিকেটের সর্বোচ্চ এই প্রশাসন।
ফাহিমের মতে বিসিবি অনুশীলন ফেরালেও ক্রিকেটারদের স্কিল ফিটনেস ফিরে পেতে সময় লাগবে। কেননা স্কিল ফিটনেস সময় সাপেক্ষ একটি বিষয়।
‘স্কিল ফিটনেস ফিরে পাওয়া সময় সাপেক্ষ ব্যাপার হবে। এতদিন মাঠের বাইরে থাকার কারণে স্কিলের কোন অংশ ব্যবহার না করার কারণে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট অ্যাকশান অ্যাবিলিটি এবং রিফ্লেক্স ক্ষতিগ্রস্থ হবে। সেখানে ফিরে আসতে সময় লাগবে। প্রথমে হয়ত তারা ফিটনেস ট্রেনিং করবে এরপর আস্তে আস্তে ফিরবে। কিছুটা সময়তো লাগবেই।’
করোনাভাইরাস ক্রিকেট কোচ ক্রিকেটারদের স্কিলে মরচে ক্রিকেটেরদের অনুশীলন বন্ধ নাজমুল আবেদীন ফাহিম বিশ্লেষক ও বোদ্ধা