ইংলিশ লিগের সেরা খেলোয়াড় কে হচ্ছেন এবার?
৭ জুলাই ২০২০ ১২:১৪
ইংলিশ লিগের শিরোপা এরই মধ্যে নিশ্চিত হয়ে গেছে। ৩০ বছর এবং ১১ হাজারেরও বেশি দিন পর শিরোপা উল্লাসে মেতেছে লিভারপুল। ৭ ম্যাচ আগে শিরোপা নিশ্চিত করা লিভারপুল পরের ম্যাচে গত মৌসুমের শিরোপাজয়ী ম্যানচেস্টার সিটির কাছ থেকে পেয়েছিল গার্ড অব অনার। এসব তো গেল শিরোপা আর শিরোপাজয়ী দলের কথা। সে বিষয়টি যেহেতু নির্ধারিত হয়েই গেছে, তাই এবার আলোচনার মূল বিষয়বস্তু পরিণত হয়েছে অন্যদিকে— কে হবেন এ মৌসুমে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়?
এ আলোচনাতেও ফোকাস রয়েছে অনেকের দিকেই। ৩০ বছরের আক্ষেপ মেটানো লিভারপুলের কেউ কি হবেন এবারের লিগ সেরা? লিভারপুলের কেউ জিতলে সেই ‘কেউ’টা কে?— গোলের পর গোল করে যাওয়া সাদিও মানে? মোহাম্মদ সালাহ? নাকি ডি বক্সের ভেতর এভারেস্ট হয়ে প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগকে ভয় দেখানো ভার্জিল ভ্যান ডাইক? নাকি ভ্যান ডাইকের সঙ্গে রক্ষণভাগ সামলে আবার আক্রমণেও সমান অবদান রাখা ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আর্নল্ড? নাকি অলরেডদের অধিনায়ক এবং মিডফিল্ডের ইঞ্জিন জর্ডান হ্যান্ডারসন? নাকি এই মৌসুমেও ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে অমানবিক পারফর্ম করা কেভিন ডি ব্রুইন জিতে নেবেন লিগ সেরার তকমা?
পরিসংখ্যান কী বলছে? আসলে এবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দাবি রাখে কে? এসব নিয়ে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
গোল আর অ্যাসিস্টের বাইরেও মাঠের পারফরম্যান্স নেওয়া হচ্ছে বিবেচনায়। যেমন— একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কিংবা সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের পক্ষে গোল করে কিংবা অ্যাসিস্ট করে দলকে সহায়তা করা সম্ভব হয় না। কিন্তু মাঠের খেলায় তাদের পারফরম্যান্সের ওপর ম্যাচের ভাগ্য অনেকটাই নির্ধারিত হয়ে যায়। এদিক দিয়ে লিভারপুল অধিনায়ক জর্ডান হ্যান্ডারসনকে ইপিএলের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রাখছেন অনেক ফুটবল বিশ্লেষক।
এর বাইরে যারা আলোচনায় আছেন, তাদের মধ্যে লিভারপুলের খেলোয়াড়ই বেশি। এই তালিকায় আছেন সাদিও মানে, ভার্জিল ভ্যান ডাইক, মোহাম্মদ সালাহ ও ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আর্নল্ড। লিভারপুলের বাইরে যাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তিনি হচ্ছে ম্যানচেস্টার সিটির বেলজিয়ান তারকা মিড ফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইন। একে একে দেখে নেওয়া যাক এই তালিকার খেলোয়াড়দের পরিসংখ্যান।
জর্ডান হ্যান্ডারসন
লিভারপুলের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন মৌসুমজুড়ে। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হলেও দলের প্রয়োজনে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হয়েও ১০টি ম্যাচ খেলেছেন অল রেডদের অধিনায়ক। চলতি মৌসুমে ইনজুরির কারণে মাত্র ৩টি ম্যাচে খেলতে পারেননি তিনি। এছাড়া দলের হয়ে মোট ২৯টি ম্যাচ খেলেছেন এই ইংলিশ ফুটবলার।
অল রেডদের জার্সিতে চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত (সোমবার-৬ জুলাই) ২৫টি ম্যাচ শুরু থেকে আর চারটি ম্যাচে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমেছেন হ্যান্ডারসন। আর ম্যাচ প্রতি ৭৬ মিনিট করেও গড়ে খেলেছেন তিনি। এর মধ্যে নামের পাশে ৩টি গোলের পাশাপাশি আছে ৫টি অ্যাসিস্টও।
তবে ওই যে একজন সেন্ট্রাল কিংবা ডিফেন্সিভ মিড ফিল্ডারকে গোল কিংবা অ্যাসিস্ট দিয়ে বিবেচনা করা সম্ভব নয়। কারণ মাঠে খেলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বটাই থাকে সেন্ট্রাল মিড ফিল্ডারের ওপর। আর ডিফেন্সিভ মিড ফিল্ডারের তো গুরুদায়িত্বই রক্ষণভাগকে সাহায্য করা। আর এই মৌসুমে রেডদের হয়ে ১০টি ম্যাচে ডিফেন্সিভ মিড ফিল্ডার হিসেবে খেলতে হয়েছে হ্যান্ডারসনকে।
সব মিলিয়ে এবারের মৌসুমে লিভারপুলের লিগ জেতা এবং দুর্দান্ত পারফর্ম করার পেছনের অন্যতম কারিগর জর্ডান হ্যান্ডারসন। আর তাই তো জোর গুঞ্জন, প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা হয়তো উঠবে তারই ঝুলিতেই।
সাদিও মানে
২০১৬ সালে লিভারপুলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই নিজেকে মেলে ধরতে শুরু করেন সেনেগালের এই ফরোয়ার্ড। টানা চার মৌসুমেই দুর্দান্ত পারফর্ম করে দলের সেরা খেলোয়াড়দের একজনে পরিণত হয়েছেন তিনি। চলতি মৌসুমেও এর ব্যতিক্রম হয়নি। অলরেডদের হয়ে এবারের মৌসুমে এখন পর্যন্ত (সোমবার-৬ জুলাই) ২৮টি ম্যাচের শুরুর একাদশে ছিলেন তিনি আর দু’টি ম্যাচ খেলেছেন বদলি খেলোয়াড় হিসেবে।
চলতি মৌসুমে এ পর্যন্ত মানের গোল সংখ্যা ১৬টি, সেই সঙ্গে আছে ৭টি অ্যাসিস্টও। গেল মৌসুমে মানের গোল সংখ্যা ছিল ২২টি তবে সেবার অ্যাসিস্ট ছিল মাত্র একটি। এবার গোলের সংখ্যা কমলেও অ্যাসিস্ট সংখ্যা বেড়েছে তার। এখনও অবশ্য গেলবারের গোল সংখ্যা স্পর্শ করার সুযোগ থাকছে মানের সামনে। কেননা লিগের এখনও বাকি রয়েছে ৬টি ম্যাচ। তাই গোল সংখ্যা বাড়ানোর সুযোগ তো থাকছেই তার সামনে। সবকিছু মিলিয়ে তাই তো ২৮ বছর বয়সী সাদিও মানেও রয়েছেন ইপিএলের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জেতার দৌড়ে।
মোহাম্মদ সালাহ
২০১৭/২০১৮ মৌসুমে এএস রোমা থেকে লিভারপুলে যোগ দেন মোহাম্মদ সালাহ। আর সেই মৌসুমেই জিতে নেন ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়ের ট্রফি। ওই মৌসুমে লিভারপুল লিগের ৪র্থ হয়ে শেষ করে। তবে লিগে সর্বোচ্চ ৩২ গোল করে সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জেতার ক্ষেত্রে কোনো দ্বিধা রাখেননি ইজিপশিয়ান এই ফরোয়ার্ড।
পরের মৌসুমেও দলের হয়ে সাদিও মানের সঙ্গে যৌথভাবে করেন ২২ গোল। গোলের ধারা অব্যহত রেখেছেন এই মৌসুমেও। এই মৌসুমে মোহাম্মদ সালাহ এখন পর্যন্ত (সোমবার-৬ জুলাই) ১৭ গোল করেছেন আর সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন ৮টি গোলও। লিগে ২৯টি ম্যাচ খেলেছেন সালাহ।
গেল মৌসুমের থেকে এখনও ৫ গোলে পিছিয়ে আছেন তিনি। তবে সামনে বাকি থাকা ছয় ম্যাচে থাকছে গেল সিজনের নিজেকে স্পর্শ করার। চলতি মৌসুমে দলকে শিরোপা জেতাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি আর তাই তো দ্বিতীয়বারের মতো প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দৌড়ে এখনও বেশ এগিয়ে আছেন মোহাম্মদ সালাহ।
ভার্জিল ভ্যান ডাইক
সাউদাম্পটন থেকে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে লিভারপুলে নাম লেখান ভার্জিল ভ্যান ডাইক। আর সেবারই পরের মৌসুমেই জিতে নেন প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাবটি। ২০০৪/০৫ মৌসুমে জন টেরির পর প্রথম কোনো ডিফেন্ডার হিসেবে প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জিতেছিলেন ভ্যান ডাইক। এবারের মৌসুমেও আছে তার এই ব্যক্তিগত শিরোপা জয়ের সম্ভবনা। চলতি মৌসুমে কেবল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগেরই নয়, ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার ভ্যান ডাইক।
ডিফেন্ডার হলেও কেবল রক্ষণের দিকেই নজর নয় এই ডাচের, সেই সঙ্গে আক্রমণেও দলকে সাহায্য করেছেন মৌসুমজুড়ে। প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত (সোমবার-৬ জুলাই) লিভারপুলের হয়ে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলছেন তিনি। লিগের ৩৩টি ম্যাচের মধ্যে সবক’টিতেই দলের প্রথম একাদশে থেকে শুরু করেছেন তিনি। আর তার দুর্দান্ত রক্ষণেই প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ ১৫ ম্যাচে ক্লিনশিট রাখতে পেরেছে তার দল। যার প্রত্যেকটিতেই অবদান রয়েছে ভ্যান ডাইকের।
চলতি মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত (রোববার-৫ জুলাই) লিভারপুল মাত্র ২৫টি গোল হজম করেছে। এত কম গোল হজমের সিংহভাগ কৃতিত্বই যায় ভ্যান ডাইকের কাঁধে। আর তাই তো টানা দ্বিতীয়বারের মতো প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জয়ের দৌড়ে বেশ ভালোভাবেই আছেন ভার্জিল ভ্যান ডাইক।
ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আর্নল্ড
চলতি মৌসুমটা যেন স্বপ্নের মতো কাটাচ্ছেন ২১ বছর বয়সী ইংলিশ ফুলব্যাক ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আর্নল্ড। গেল মৌসুমের তুলনায় এ মৌসুমে আরও পরিপক্ক তিনি, আরও আক্রমণাত্মক এবং আরও রক্ষণাত্মক। লিগে লিগে এখন পর্যন্ত (সোমবার-৬ জুলাই) ৩৩টি ম্যাচের মধ্যে ৩২টি ম্যাচেই খেলেছেন শুরুর একাদশে, আর একটি ম্যাচে মাঠে নেমেছেন বলদি খেলোয়াড় হিসেবে।
আর্নল্ড এবারের মৌসুমে সাদিও মানে এবং মোহাম্মদ সালাহর পর লিভারপুলের সর্বোচ্চ গোলের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। আর্নল্ড এই মৌসুমে মোট ১৫টি গোলে সম্পৃক্ত। এর মধ্যে ৩টি গোল নিজে করেছেন এবং সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন মোট ১২টি। গত মৌসুমে ১২টি অ্যাসিস্ট ছিল তার, এই মৌসুমে অবশ্য এই সংখ্যা বাকি ছয় ম্যাচে বাড়ানোর সম্ভবনাও থাকছে।
অবশ্য কেবল আক্রমণভাগেই দুর্দান্ত ছিলেন না আর্নল্ড, সেই সঙ্গে রক্ষণভাগেও ছিলেন অসামান্য। দলের ১৫টি ক্লিনশিট পাওয়া ম্যাচের প্রত্যেকটিতেই মাথে থেকে সাহায্য করেছেন দলকে। তাই তো ২১ বছর বয়সী এই তরুণ ফুলব্যাকের সামনে থাকছে প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জয়ের সম্ভবনা।
কেভিন ডি ব্রুইন
চলতি ২০১৯/২০২০ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগজুড়ে লিভারপুলের খেলোয়াড়দেরই আধিপত্য, তবে তার ভেতরেও নিজের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন বেলজিয়ান সুপারস্টার কেভিন ডি ব্রুইন। এবারের মৌসুমে তার দল প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা ধরে রাখতে না পারলেও নিজের দুর্দান্ত ফর্মের এদিক ওদিক হতে দেননি ডি ব্রুইন।
২৯ বছর বয়সী এই অ্যাটাকিং মিড ফিল্ডার চলতি মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ সংখ্যক গোল এবং অ্যাসিস্টের যোগানদাতা। অর্থাৎ গোল এবং অ্যাসিস্ট মিলিয়ে তার সঙ্গে পেরে ওঠেনি কেউই। নামের পাশে ১১টি গোল আর ১৭টি অ্যাসিস্টই স্বাক্ষ্য দিচ্ছে ডি ব্রুইনের দুর্দান্ত ফর্মের। প্রিমিয়ার লিগে এখন পর্যন্ত (সোমবার-৬ জুলাই) মোট ৩১টি ম্যাচ খেলেছেন ডি ব্রুইন, যার মধ্যে ২৮ ম্যাচে শুরু একাদশে থেকেই খেলেছেন তিনি আর বাকি তিনটি ম্যাচ খেলছেন বদলি হিসেবে।
আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে প্রায় সব পরিসংখ্যানই কথা বলছে ডি ব্রুইনের পক্ষে। যেদিকে মোহাম্মদ সালাহ ১৭ গোল এবং ৭ অ্যাসিস্টে মোট ২৪ গোলে অবদান রেখেছেন সেখানে ডি ব্রুইন তার থেকে ৪টি গোলে বেশি অবদান রেখেছেন। তার দল প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা না জিতলেও দুর্দান্ত ফর্মে দলকে ঠিক কক্ষপথেই রেখেছিলেন তিনি।
পারফরম্যান্সের বিচারে এখন পর্যন্ত এই ছয় খেলোয়াড়ই প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জয়ের দৌড়ে আছেন। শেষ পর্যন্ত যার থলিতেই খেতাবটি উঠুক না কেন যোগ্য হিসেবেই জয় করবেন তিনি।
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ কেভিন ডি ব্রুইন জর্ডান হ্যান্ডারসন ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আর্নল্ড পিএফএ প্লেয়ার অব দ্য ইয়ার ভার্জিল ভ্যান ডাইক মোহাম্মদ সালাহ লিভারপুল সাদিও মানে স্পোর্টস স্পেশাল