সিটি বাঁচলেও সেবার নিষেধাজ্ঞায় পুড়েছিল এসি মিলান
১৪ জুলাই ২০২০ ১৪:৩৬
আর্থিক স্বচ্ছতার ধারা (ফাইন্যান্সিয়াল ফেয়ার প্লে-এফএফপি) ভঙ্গ ও ইউরোপিয়ান লিগের (উয়েফা) গর্ভনিং বডির প্রতি অনাস্থা জ্ঞাপনের অভিযোগে দুই বছরের জন্য ইউরোপের সর্বোচ্চ মর্যাদার টুর্নামেন্ট উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে নিষিদ্ধ হয়েছিল ম্যানচেস্টার সিটি। সোমবার (১৩ জুলাই) ম্যান সিটির করা আপিলের রায় প্রকাশিত হয়েছে। যেখানে তাদের নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে কোর্ট অব অ্যারবিট্রেশন ফর স্পোর্টস-সিএএস। অর্থাৎ সামনের মৌসুম থেকেই সাধারণভাবেই চ্যাম্পিয়নস লিগে খেলতে পারবে ম্যানচেস্টার সিটি। সিটিজেনদের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেলেও ঠিক এক বছর আগে নিষেধাজ্ঞায় পড়া এসি মিলান কিন্তু ঠিকই সাজা ভোগ করেছে এবং এখনও তা বহাল রয়েছে।
এফএফপি ভঙ্গ এবং উয়েফার তদন্তে সাহায্য না করায় গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দুই বছরের জন্য চ্যাম্পিয়নস লিগ থেকে নিষিদ্ধ করা হয় ম্যানচেস্টার সিটিকে। শুধু তাই নয়, ৩০ মিলিয়ন ইউরো জরিমানাও করা হয় এই ক্লাবকে।
সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত খেলাধুলাভিত্তিক সর্বোচ্চ আদালত ‘কোর্ট অব অ্যারবিট্রেশন ফর স্পোর্টস’ (সিএএস) সোমবার (১৩ জুলাই) সিটির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ খারিজ করে দেন। আর সেই সঙ্গে তাদের উপর আনিত নিষেধাজ্ঞাও তুলে নেওয়া হয়। এবং জরিমানা কমিয়ে ৩০ মিলিয়ন থেকে ১০ মিলিয়ন ঘোষণা করা হয়। এ ব্যাপারে কোর্টের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত, উয়েফা এই ব্যাপারে আর কোনো বক্তব্যও প্রদান করবে না বলেও জানা গেছে।
সিএএস এক বিবৃতিতে জানায়, ‘বিজ্ঞাপনদাতাদের থেকে প্রাপ্ত অর্থের হিসাবে কোনো গণ্ডগোল পাওয়া যায়নি। সিটির বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগগুলো কোনো নিয়ম ভাঙেনি। যেহেতু কোনো ধরনের নিয়ম ভাঙার প্রমাণ পাওয়া যায়নি তাই ম্যানচেস্টার সিটির ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়াও অনুচিত। তবে যেকোনো অনুসন্ধানে উয়েফাকে সাহায্য করা উচিৎ ছিল সিটির, কিন্তু তা করতে ব্যর্থ হওয়ায় তাদের জরিমানা করা অর্থের এক তৃতীয়াংশ প্রদান করতে হবে উয়েফাকে।’
ঠিক বছর খানেক আগে এফএফপি ভঙ্গ করায় এক বছরের জন্য ইউরোপিয়ান ফুটবলে নিষেধাজ্ঞায় পড়ে ইতালির জায়ান্ট ক্লাব এসি মিলান। গেল মৌসুম অর্থাৎ ২০১৮/২০১৯’এ ইতালিয়ান সিরি আ’র সেরা পাঁচে শেষ করলেও ইউরোপা লিগে খেলতে পারেনি নিষেধাজ্ঞার কারণে।
সুইজারল্যান্ডে অবস্থিত কোর্ট অব অ্যারবিট্রেশন ফর স্পোর্টস-সিএসএ সেবার রায় দিয়েছিল উয়েফার পক্ষেই আর এসি মিলান ইউরোপিয়ান ফুটবলে নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছিল। যদিও সিটির মতোই এফএফপি ভঙ্গের কারণে নিষিদ্ধ হয়েছিল মিলান।
উয়েফা জানিয়েছিল ২০১৫ থেকে ২০১৭ সালের ভেতরে অবৈধভাবে ক্লাব অর্থ খরচ করে। আর যা উয়েফার-এফএফপি ভঙ্গ করে তাই তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। এরপর এসি মিলান সিএসএ’র দ্বারস্ত হয়, তবে অপরাধ প্রমাণ হওয়ায় মিলানের ওপর নিষেধাজ্ঞা বহাল রেখেছিল সিএসএ।
উয়েফার কাছে দুই বছরের নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর সিএএস’তে আপিল করে মিলান। সে সময় মিলানের আপিল গ্রহণ করে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেয় সিএএস। তবে পরের বছর সিএএস আবারও মিলানকে উয়েফার ফাইনান্সিয়াল কমিটির দ্বারস্ত হওয়ার নির্দেশ দেয়। উয়েফার কমিটি মিলানকে ২০১৫ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত অতিরিক্ত অর্থ খরচের কারণে নিষেধাজ্ঞা দেয়। এই যাত্রায় মিলান উয়েফার সঙ্গে সমঝোতা করে নিষেধাজ্ঞার মেয়াদ এক বছরে কমিয়ে আনে।
তবে মিলানের বিরুদ্ধে দ্বিতীয়বার এফএফপি ভঙ্গ করার প্রমাণ মিললে সিএএস আবারও তাদের উয়েফার ফাইনান্সিয়াল কমিটির কাছে পাঠিয়ে দেয়। সে যাত্রায় মিলান বাধ্য হয়ে ওই এক বছরের নিষেধাজ্ঞা নিতে বাধ্য হয়। নতুবা উয়েফার সঙ্গে আপিলের লড়াইয়ে হেরে যাওয়ার সম্ভবনা তৈরি হয়েছিল তাদের। আর এই কারণেই শেষ পর্যন্ত উয়েফার সঙ্গে সমঝোতা করে এক বছরের নিষেধাজ্ঞা গ্রহণ করতে হয় এসি মিলানকে।
অবশ্য ম্যানচেস্টার সিটির ক্ষেত্রে ব্যাপারটি ছিল পুরোপুরি ভিন্ন। তারা উয়েফার আনিত অভিযোগ পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে এবং নিজেদের নির্দোষ বলে দাবি করে। সিটি সিএএসকে উপযুক্ত তথ্য প্রদান করে নিজেদের নির্দোষ প্রমাণ করতে সফল হয়। এবং শেষ পর্যন্ত সিএএস উয়েফার দেওয়া দুই বছরের ইউরোপিয়ান ফুটবলে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়ার নির্দেষ দেয়। তবে অনুসন্ধানে উয়েফাকে সাহায্য না করার কারণে সিএএস সিটিকে করা ৩০ মিলিয়ন ইউরোর জরিমানা কমিয়ে ১০ মিলিয়ন করার নির্দেশ দেয়।