লাখ টাকার ফুটবলার রুবেল এখন পিয়ন
২৪ জুলাই ২০২০ ১৯:০৪
ঢাকা: করোনায় থমকে গেছে ফুটবল। প্রায় চার মাস ধরে ফুটবলে নেই কোলাহল। স্থবির হয়ে আছে ফুটবলারদেরও জীবিকার চাকাও। তবে থেমে নেই পেটের সংগ্রাম। করোনার এই কঠিন সময়ে দেশের অনেক ফুটবলারকে দেখতে হচ্ছে কঠিন বাস্তবতা। করোনা ও অনিয়মিত লিগ ফুটবলের বলি দেশের তেমনই একজন ফুটবলার।
লাখ টাকার ফুটবলার এখন জীবিকা নির্বাহের তাগিদে ঝাড়ু হাতে নিয়েছেন। পায়ে ফুটবল নিয়ে ম্যাজিক করা ফুটবলার রুবেল রাহমান এখন হাতে তুলে নিয়েছেন ঝাড়ু। মা-বাবাহীন এই ফুটবলার এখন ছেলে-স্ত্রীকে নিয়ে অসহায় হয়ে পেটের দায়ে অফিসের পিয়নের কাজ করছেন।
রহমতগঞ্জের সাবেক ফুটবলার গেল মৌসুমে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবের হয়ে খেলেছেন রুবেল রাহমান। করোনার কারণে ফার্স্ট ডিভিশনসহ ফুটবলের সকল টুর্নামেন্ট স্থগিত হয়ে যাওয়ায় জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে যায় রুবেলের।
আয়ের একমাত্র উৎস বন্ধ হওয়ায় পিয়নের কাজ শুরু করতে হয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের এই ফুটবলারকে। করোনার সঙ্গে ছিল অনিয়মিত লিগের নিয়তি। ফুটবল ছেড়ে পিয়ন হওয়ার গল্পটা জানালেন ২৮ বছর বয়সী এই মিডফিল্ডার, ‘আমি ফার্স্ট ডিভিশনে খেলছি। করোনার কারণে লিগ বন্ধ হয়ে যায়। আমিও অসহায় হয়ে যাই। বাসায় স্ত্রী-ছেলে আছে। আমি না খেলেও তাদের খাওয়াতে হবে। ভীষণ অসহায় বোধ করছিলাম। বিভিন্ন মানুষকে বলে একটা মোটরবাইক সেন্টারে পিয়নের কাজ পাই।’
লিগে লাখ টাকা পাওয়া রুবেল খ্যাপ খেলেও সংসারে অর্থের যোগান দিতেন। করোনায় সেই পথটাও বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নিরুপায় রুবেল বেছে নেন মাসিক ৪-৫ হাজার টাকার পিয়নের চাকরি। এই টাকায় তিনজনের সংসার টেনে হেচড়ে চালাতে হচ্ছে রুবেলকে, ‘নাই মামার থেকে কানা মামা ভাল। বসে থাকার থেকে কিছু টাকাতো আসছে। এতেই কষ্ট করে হলেও চলে যাচ্ছে।’
২০১০ সালে টিএনটি ক্লাব দিয়ে পেশাদার ফুটবল শুরু করা রুবেল ২০১২ সালে ঢাকা ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে যোগ দেন। এক বছর কাটিয়ে পরে চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে পা রাখেন এই মিডফিল্ডার। এরপর ২০১৪ সালের মৌসুমে একই লিগে রহমতগঞ্জ এমএফসিকে চ্যাম্পিয়ন করিয়ে পেশাদার লিগের সর্বোচ্চ লিগে তোলেন রুবেল। রহমতগঞ্জ প্রিমিয়ার লিগে পা দিলেও রুবেলকে থেকেই যেতে হয় চ্যাম্পিয়নশিপ লিগে। এরপর থেকেই ফার্স্ট ডিভিশনে খেলছেন এই ফুটবলার। ২০০৭-০৮ বছরের দিকে একবার জাতীয় বয়সভিত্তিক দলের ক্যাম্পেও সুযোগ পেয়েছিলেন রুবেল। অনিয়মিত লিগের সঙ্গে করোনার কালো থাবা এই ফুটবলারের জীবন দাঁড় করিয়ে দেয় কঠিন বাস্তবতার সামনে।
অনিয়মিত লিগ আর করোনার কারণেই এমন অসহায় হয়ে পড়েছেন অভিজ্ঞ এই ফুটবলার। রুবেলের কণ্ঠে, ‘প্রতিবছর লিগ হতো তাহলে সমস্যা হতো না। টাকার ফ্লো থাকতো। লিগ হয় আবার দুই বছর বন্ধ থাকে। খ্যাপ-ট্যাপ খেলে সংসার চলে। মা-বাবা মারা গেছেন। বিয়ে করেছি বাচ্চা আছে। ছেলে আছে। একাই ইনকাম করতে হয় একাই সংসার চালাতে হতো।’
সেই থেকে পিয়নের কাজ শুরু করেন রুবেল, ‘রোজা থেকে কাজ শুরু করছি। মাসিক সাড়ে চার বা ৫ হাজার টাকা। এতেই কোনমতে কষ্ট করে সংসার চলছে। কিন্তু ফুটবলে ফিরতে চাই। ফুটবল আমার জীবন। আমার সম্বল।’
মাঝে দুস্থ ফুটবলারদের অনুদানও পৌঁছেনি ফুটবলারের হাতে। সেই আক্ষেপও ঝড়লো রুবেলের কণ্ঠে, ‘প্রধানমন্ত্রী অনেক অনুদান দিয়েছে। আমাকে একজনেও দেয়নি। সব প্লেয়াররা পাচ্ছে আমরা পাচ্ছি না।’
ফুটবলে ফিরতে চান রুবেল। সেজন্য সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি, ‘ফুটবলে ফিরতে চাই। লিগটা যদি ফার্স্ট ডিভিশন নিয়মিত হলে এই লাইনে আসতে হতো না। সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানাই। আমি ফুটবলে ফিরতে চাই।’
করোনা চাঁপাইনবাবগঞ্জ পিয়ন ফুটবলার রহমতগঞ্জ রুবেল রাহমান লাখ টাকা স্পোর্টস স্পেশাল