যোগ্য ছিলেন হ্যান্ডারসন?
২৫ জুলাই ২০২০ ১৩:১৭
ক্রীড়া লেখকদের ভোটে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ২০১৯/২০২০ মৌসুমের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতেছেন লিভারপুলের অধিনায়ক জর্ডান হ্যান্ডারসন। লিভারপুলের ১২তম ফুটবলার হিসেবে ফুটবলার রাইটার্স অ্যাসোসিয়েশনের (এফডব্লিউএ) বর্ষসেরা হলেন হ্যান্ডারসন। দু’বছর আগে ক্লাবটির হয়ে এই পুরস্কারটি জিতেছিলেন মোহাম্মদ সালাহ। তবে লিগ জিতলেই কি মৌসুমের সেরা খেলোয়াড় হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে যাওয়া যায়? পরিসংখ্যান কি বলছে? আসলেই কি যোগ্য খেলোয়াড় হিসেবেই এই পুরস্কার জিতলেন জর্ডান হ্যান্ডারসন?
৩০ বছরের আক্ষেপ মেটানো লিভারপুলের কেউ কি হবেন এবারের লিগ সেরা খেলোয়াড়? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিল বেশ কিছুদিন ধরে। অবশেষে ক্রীড়া লেখকদের ভোটে সে পুরস্কার জিতলেন লিভারপুলেরই একজন। এর আগে অবশ্য আরও কিছু প্রশ্ন ঘুরছিল। সেগুলোও নজর এড়ানোর মতো নয়, লিভারপুলের কেউ জিতলে সেই ‘কেউ’টা কে?— গোলের পর গোল করে যাওয়া সাদিও মানে? মোহাম্মদ সালাহ? নাকি ডি বক্সের ভেতর এভারেস্ট হয়ে প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগকে ভয় দেখানো ভার্জিল ভ্যান ডাইক? নাকি ভ্যান ডাইকের সঙ্গে রক্ষণভাগ সামলে আবার আক্রমণেও সমান অবদান রাখা ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আর্নল্ড? নাকি অলরেডদের অধিনায়ক এবং মিডফিল্ডের ইঞ্জিন জর্ডান হ্যান্ডারসন? নাকি এই মৌসুমেও ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে অমানবিক পারফর্ম করা কেভিন ডি ব্রুইন জিতে নেবেন লিগ সেরার তকমা?
আরও পড়ুন: বর্ষসেরা হ্যান্ডারসন
পরিসংখ্যান কী বলছে? আসলে এবার ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দাবি রাখে কে? এসব নিয়ে হয়েছে চুলচেরা বিশ্লেষণ।
গোল আর অ্যাসিস্টের বাইরেও মাঠের পারফরম্যান্সকে নেওয়া হচ্ছে বিবেচনায়। যেমন— একজন ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কিংবা সেন্ট্রাল মিডফিল্ডারের পক্ষে গোল করে কিংবা অ্যাসিস্ট করে দলকে সহায়তা করা সব সময় সম্ভব হয়ে ওঠে না। কিন্তু মাঠের খেলায় তাদের পারফরম্যান্সের ওপর ম্যাচের ভাগ্য অনেকটাই নির্ধারণ হয়ে যায়। এদিক দিয়ে লিভারপুল অধিনায়ক জর্ডান হ্যান্ডারসনকে ইপিএলের সেরা খেলোয়াড় হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে রেখেছিলেন অনেক ফুটবল বিশ্লেষক।
এর বাইরে যারা আলোচনায় ছিলেন, তাদের মধ্যে লিভারপুলের খেলোয়াড়ই বেশি ছিল। এই তালিকায় ছিলেন সাদিও মানে, ভার্জিল ভ্যান ডাইক, মোহাম্মদ সালাহ ও ট্রেন্ট আলেক্সান্ডার আর্নল্ড। লিভারপুলের বাইরে যাকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল তিনি ম্যানচেস্টার সিটির বেলজিয়ান তারকা মিড ফিল্ডার কেভিন ডি ব্রুইন।
জর্ডান হ্যান্ডারসন
লিভারপুলের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করেছেন মৌসুমজুড়ে। সেন্ট্রাল মিডফিল্ডার হলেও দলের প্রয়োজনে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হয়েও ১০টি ম্যাচ খেলেছেন অল রেডদের অধিনায়ক। চলতি মৌসুমে ইনজুরির কারণে ৮টি ম্যাচে খেলতে পারেননি তিনি। এছাড়া দলের হয়ে মোট ৩০টি ম্যাচ খেলেছেন এই ইংলিশ ফুটবলার।
অল রেডদের জার্সিতে ২৬টি ম্যাচ শুরু থেকে আর চারটি ম্যাচে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে মাঠে নেমেছেন হ্যান্ডারসন। আর ম্যাচ প্রতি ৭৬ মিনিট করেও গড়ে খেলেছেন তিনি। এর মধ্যে নামের পাশে ৪টি গোলের পাশাপাশি আছে ৫টি অ্যাসিস্টও।
তবে ওই যে একজন সেন্ট্রাল কিংবা ডিফেন্সিভ মিড ফিল্ডারকে গোল কিংবা অ্যাসিস্ট দিয়ে বিবেচনা করা সম্ভব নয়। কারণ মাঠে খেলা নিয়ন্ত্রণের দায়িত্বটাই থাকে সেন্ট্রাল মিড ফিল্ডারের ওপর। আর ডিফেন্সিভ মিড ফিল্ডারের তো গুরুদায়িত্বই রক্ষণভাগকে সাহায্য করা। আর এই মৌসুমে রেডদের হয়ে ১০টি ম্যাচে ডিফেন্সিভ মিড ফিল্ডার হিসেবে খেলতে হয়েছে হ্যান্ডারসনকে।
সব মিলিয়ে এবারের মৌসুমে লিভারপুলের লিগ জেতা এবং দুর্দান্ত পারফর্ম করার পেছনের অন্যতম কারিগর জর্ডান হ্যান্ডারসন। আর তাই তো জোর গুঞ্জন, প্রিমিয়ার লিগের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারটা হয়তো উঠবে তারই ঝুলিতেই।
ভোটাভুটিতে হ্যান্ডারসনের পরের অবস্থানে আছেন ম্যানচেস্টার সিটির বেলজিয়াম তারকা কেভিন ডি ব্রুইন। তাহলে দেখে নেওয়া যাক ডি ব্রুইনের পরিসংখ্যান কি বলছে-
কেভিন ডি ব্রুইন
চলতি ২০১৯/২০২০ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগজুড়ে লিভারপুলের খেলোয়াড়দেরই আধিপত্য, তবে তার ভেতরেও নিজের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন বেলজিয়ান সুপারস্টার কেভিন ডি ব্রুইন। এবারের মৌসুমে তার দল প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা ধরে রাখতে না পারলেও নিজের দুর্দান্ত ফর্মের এদিক ওদিক হতে দেননি ডি ব্রুইন।
২৯ বছর বয়সী এই অ্যাটাকিং মিড ফিল্ডার চলতি মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ সংখ্যক গোল এবং অ্যাসিস্টের যোগানদাতা। অর্থাৎ গোল এবং অ্যাসিস্ট মিলিয়ে তার সঙ্গে পেরে ওঠেনি কেউই। নামের পাশে ১১টি গোল আর ১৯টি অ্যাসিস্টই স্বাক্ষ্য দিচ্ছে ডি ব্রুইনের দুর্দান্ত ফর্মের। প্রিমিয়ার লিগে মোট ৩৪টি ম্যাচ খেলেছেন ডি ব্রুইন, যার মধ্যে ৩১ ম্যাচে শুরুর একাদশে থেকেই খেলেছেন তিনি আর বাকি তিনটি ম্যাচ খেলছেন বদলি হিসেবে।
আক্রমণভাগের খেলোয়াড় হিসেবে প্রায় সব পরিসংখ্যানই কথা বলছে ডি ব্রুইনের পক্ষে। যেদিকে মোহাম্মদ সালাহ ১৯ গোল এবং ১০ অ্যাসিস্টে মোট ২৯ গোলে অবদান রেখেছেন সেখানে ডি ব্রুইন তার থেকে একটি গোলে বেশি অবদান রেখেছেন। তার দল প্রিমিয়ার লিগের শিরোপা না জিতলেও দুর্দান্ত ফর্মে দলকে ঠিক কক্ষপথেই রেখেছিলেন তিনি।
শেষ পর্যন্ত অবশ্য ভোটাভুটিতে হ্যান্ডারসন পেছনে ফেলে দিয়েছেন ম্যানচেস্টার সিটির বেলজিয়ান তারকা কেভিন ডি ব্রুইন। সেরা পাঁচে বাকি তিনজন হলেন- লিভারপুলেরই অপর দুজন ফুটবলার সাদিও মানে ও ভার্জিল ভ্যান ডিউজ এবং ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের তরুণ মার্কাস রাশফোর্ড। খেলার মাঠে গোল কিংবা অ্যাসিস্ট করে দলের জয়ে ভূমিকা রাখায় অনেকে হয়ত এগিয়ে রাখবেন কেভিন ডি ব্রুইনকে। তবে সেই সঙ্গে মাঠের খেলায় অন্যান্য অবদানের কথাও ভুললে চলবে না। ৩০ বছর পর লিভারপুলকে শিরোপা জেতাতে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন হ্যান্ডারসন। আবার তার মাঠের পারফরম্যান্সও স্বাক্ষ্য দিচ্ছে দুর্দান্ত এক মৌসুম কাটিয়েছেন তিনি। সব মিলিয়ে তার হাতেই উঠেছে ক্রীড়া লেখকদের ভোটে ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ২০১৯/২০২০ মৌসুমের সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার।
বর্ষসেরার পুরস্কার জেতা হ্যান্ডারসন স্বাভাবিকভাবেই খুশি। তবে সতীর্থদের অবদানকে স্মরণ করতে ভুললেন না ৩০ বছর বয়সী তারকা। বলেছেন, ‘আমি অনেকের কাছেই ঋণি। আমার বর্তমান সতীর্থরা অবিশ্বাস্য। আমি পুরো দলের পক্ষ থেকে এই পুরস্কার গ্রহণ করছি। কারণ সতীর্থদের কারণেই আমি এটা পেয়েছি। এই ছেলেরা অনেক ভালো খেলোয়াড়। তারা আমাকে একজন দারুণ নেতা এবং উন্নত ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করেছে।’
ইপিএল ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ জর্ডান হ্যান্ডারসন লিভারপুল সেরা খেলোয়াড় স্পোর্টস স্পেশাল