Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

জুভেন্টাস ছাড়ছেন, করোনা জয়; দিবালা সিরি আ’র সেরা খেলোয়াড়-


৫ আগস্ট ২০২০ ১২:৪৬

“পাওলো দিবালা ইজ ক্লোজ টু লিভিং জুভেন্টাস” গেল বছরের জুলাইয়ের গ্রীষ্মকালীন দলবদলের মৌসুমের দিকে ঠিক এমন শিরোনাম ইউরোপিয়ান গণমাধ্যমগুলোতে ছেয়ে গিয়েছিল। আর এর ঠিক মাস ছয়েক পর ২০২০ সালের জানুয়ারিতে যখন জুভেন্টাসের হয়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করছিলেন আর্জেন্টাইন এই তারকা ফরোয়ার্ড, ঠিক সে সময়ই মাথা চাড়া দিয়ে ওঠে একটু ভিন্নধর্মী শিরোনাম। এবার নতুন শিরোনাম-“পাওলো দিবালা ওয়াজ ক্লোজ টু লিভিং জুভেন্টাস”।

বিজ্ঞাপন

আর এই দুই শিরোনামের মধ্যে পার্থক্য কেবল মাস ছয়েকের। ছয় মাসের ব্যবধানে পাশার দান উলটে দিয়েছিলেন দিবালা। আর তারও প্রায় আট মাস পর ইতালিয়ান সিরি আ’র বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতলেন। সেটিও কিনা সতীর্থ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুটজয়ী চিরো ইম্মোবিলকে হারিয়ে।

পাওলো দিবালা থামেননি, দমে যাননি, তিনি যেন ফিনিক্স। ‘পুড়িয়া ছাই হইয়া যাওয়ার পর সেই ছাই হতে উত্থিত পাখি’ অথবা কোনো ছোট গল্প, যার ‘শেষ হইয়াও হইলো না শেষে!’

সদ্য সমাপ্ত হওয়া মৌসুমের আগে ২০১৮/২০১৯ মৌসুমের শেষ দিকে এসে সাবেক হয়ে যাওয়া কোচ অ্যালেগ্রির দল থেকে বাদ পড়তে হয়েছিল দিবালাকে। আর পরের মৌসুম অর্থাৎ ২০১৯/২০ মৌসুমে জুভেন্টাসের নতুন কোচ মাউরিজিও সারির দলেই নাকি জায়গা পাচ্ছিলেন না দিবালা। সারির দলের খেলার ধরনের সঙ্গে নাকি দিবালার ধরনের কোনো মিল নেই। আর তাই তো প্রাক প্রস্তুতি ম্যাচের শুরু থেকেই উপেক্ষিত দিবালা। আর দলের খেলার ধরনের সঙ্গে দিবালার খেলার ধরন না মেলায় তাকে দল থেকেই বের করে দিতে চেয়েছিল জুভেন্টাস ম্যানেজমেন্ট।

তবে দিবালা একজন যোদ্ধা। যুদ্ধ করেছেন নিজের ঘরের বিরুদ্ধে। যখন ইউরোপিয়ান জায়ান্টরা টাকার বস্তা নিয়ে তুরিনের বুড়িদের দরজায় এসেছে তখনও দিবালা পায়ে ঠেলে ফেলেছিলেন সেই সুযোগ। কেবল দিবালার একটি হ্যাঁ’র অপেক্ষা ছিল। কিন্তু তিনি দমে যাওয়ার পাত্র নন, তাই তো জুভেন্টাসের বেঞ্চে বসেও সময় কাটাতে দ্বিধাবোধ করেননি। আর শেষ পর্যন্ত ধৈর্য্য ধারণ করা দিবালায় জয়ী।

মৌসুমের শুরুর দিকে মাউরিজিও সারির দলে নিয়মিত সুযোগ পাননি দিবালা। কাটাতে হয়েছে বেঞ্চে বসে সময়। আর সুযোগ মিলেছে বদলি খেলোয়াড় হিসেবে খেলার। তাই তো পরিসংখ্যান বলছে যেখানে দুই মৌসুম আগেও যখন বয়স ছিল মাত্র ২৩ তখনও জুভেদের হয়ে ২৬টি ম্যাচ শুরু থেকেই খেলেছিলেন দিবালা। আর ক্যারিয়ারের সেরা ফর্মে যখন তখনও জুভেদের হয়ে ৩৩টি ম্যাচের মধ্যে শুরুর থেকে খেলেছেন মাত্র ২৫টি ম্যাচ। আর বাজিমাৎ এই ৩৩টি ম্যাচেই।

বিজ্ঞাপন

জানুয়ারিতে জুভেন্টাসের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকারে দিবালা জানান তার ক্লাব ছাড়ার সম্ভবনার কথা। জানান গ্রীষ্মের দলবদলের মৌসুমে প্রায় ক্লাব ছাড়া হয়েছিলেন তিনি। দিবালা বলেন, ‘গেল গ্রীষ্মে? হ্যাঁ এটা সত্য যে আমি ক্লাব ছাড়ার অনেক কাছে ছিলাম ওই সময়ে। সেটা ক্লাবের ভাবনা ছিল। ক্লাব আমাকে ছাড়তে চেয়েছিল। কিন্তু একদম শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত আমি অপেক্ষা করছিলাম। আমার দুই বছরের চুক্তি এখনও বাকি রয়েছে। এটা ছোট কোনো সময় নয়। কিন্তু আবার খুব বেশি সময়ও না। আমরা অপেক্ষা করব জুভেন্টাস কি সিদ্ধান্ত জানায় তার ওপর।’

দিবালা আরও যোগ করেন, ‘ক্লাব যদি এরপরেও মনে করে আমাকে প্রয়োজন নেই তাহলে তারা সিদ্ধান্ত নেবে। আর যদি ক্লাব মনে করে আমাকে দলের প্রয়োজন আছে তবে আমি জুভেন্টাসেই থাকব। এটা ক্লাবের সিদ্ধান্ত। কিন্তু এটা আমার জন্য অনেক কষ্টকর। আমি জুভেন্টাসে অনেক ভালো আছি। আমি এখানে থাকতে পেরে খুশি।।’

জুভেন্টাসে ইতোমধ্যেই পাঁচটি মৌসুম খেলে ফেলেছেন দিবালা। যার মধ্যে পাঁচ মৌসুমেই লিগ শিরোপা জিতেছেন তিনি। জানুয়ারিতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দিবালা বলেন, ‘এটা আসলে পাগলামি। কিছুদিন আগেই আমি জুভেন্টাসের হয়ে ২০০তম ম্যাচ খেলে ফেললাম। কিন্তু আমার মনে হয় এই তো সেদিন আমি এখানে এলাম। আমি আগে চারটা লিগ, তিনটা কাপ এবং চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালও খেলেছি। যা আসলেই অকল্পনীয়।’

মার্চে করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হয় বিশ্বজুড়ে। আর ইতালি যেন তখন মৃত্যুপুরীতে রুপান্তরিত হয়। সে সময় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হন দিবালা। মার্চের ২১ তারিখ আর্জেন্টাইন তারকা ফুটবলার পাওলো দিবালা এবং তার বান্ধবী ওরিয়ানা সাবতিনি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয় বলে পরীক্ষায় জানা যায়। তবে এর সপ্তাহখানেক পরেই জানা যায় করোনা থেকে সুস্থ হয়ে উঠেছেন দিবালা। আর স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম এল চিরিঙ্গুইতো জানায় নতুন করে আবারও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত পাওলো দিবালা। ওই সময় ৬ সপ্তাহের মধ্যে চতুর্থবার করোনায় আক্রান্ত আর্জেন্টাইন এই জুভেন্টাস তারকা ফুটবলার

এরপর করোনাকে হারিয়ে ফিরেছেন অনুশীলনে। এরপর জিতেছেন জুভেন্টাসের হয়ে টানা ৯ম সিরি আ’র শিরোপা। আর তারপর জয় করলেন ইতালি অর্থাৎ সিরি আ’র সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার। মৌসুমের প্রথম দিকে প্রায় বিক্রি হয়ে যাওয়া দিবালা শেষ পর্যন্ত মৌসুমের ইতি টানলেন ইতালির সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয় করেই।

গুঞ্জন ছিল এবারেও ইতালিয়ান সিরি আ’র সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতবেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো, অথবা দুর্দান্ত পারফর্ম করা চিরো ইম্মোবিল। তবে এই দুইজনকে হারিয়ে শেষ পর্যন্ত প্রথমবারের মতো ইতালিয়ান সিরি আ’র সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নিয়েছেন আর্জেন্টাইন তারকা ফরোয়ার্ড পাওলো দিবালা।

সিরি আ’র সর্বোচ্চ গোলদাতা চিরো ইম্মোবিল নন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো। আর এই মৌসুমের রূপকথার জন্ম দেওয়া আটালান্টার পাপু গোমেজকেও হার মানিয়ে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জিতে নিয়েছেন পাওলো দিবালা। মৌসুমের শুরুতে এই আর্জেন্টাইন তারকাকেও ক্লাব ছাড়া করতে চেয়েছিল তুরিনের বুড়িরা।

আর ক্লাবের ইচ্ছার বিপরীতেও অনেকটা জোর করেই জুভেন্টাসে থেকে গিয়েছিলেন পাওল দিবালা। আর মৌসুম শেষে তিনিই বনে গেছেন সিরি আ’র ২০১৯/২০২০ মৌসুমের সেরা খেলোয়াড়। এই মৌসুমে সিরি আ’র মোস্ট ভ্যালুয়েবল প্লেয়ারের পুরস্কার জিতেছেন আর্জেন্টাইন ফরোয়ার্ড।

সিরি আ কর্তৃপক্ষ মৌসুমের প্রতি পজিশনের সেরাদেরও একটি তালিকা দিয়েছে। তাতে সেরা গোলরক্ষক হয়েছেন এই মৌসুমে সবচেয়ে বেশি সেভ করা শিরোপাজয়ী জুভেন্টাসের ভয়চেক শেজনি। সেরা ডিফেন্ডার হয়েছেন জুভেন্টাসের এক পয়েন্ট পেছনে থেকে লিগ শেষ করা ইন্টারের ডাচ ডিফেন্ডার স্টেফান ডি ভ্রাই। সেরা মিডফিল্ডার আটালান্টার আর্জেন্টাইন পাপু গোমেজ আর সেরা ফরোয়ার্ড হয়েছেন ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুটজয়ী ও সিরি আ’র সর্বোচ্চ গোলদাতা লাৎজিওর চিরো ইম্মোবিল।

এছাড়া সেরা তরুণ খেলোয়াড়ের তকমা জিতেছেন পারমার মিডফিল্ডার দেজান ক্লুজভস্কি। সর্বোচ্চ গোল কিংবা সর্বোচ্চ অ্যাসিস্টদাতার তালিকায় প্রথম না হয়েও সেরা খেলোয়াড় পাওলো দিবালা। মৌসুম জুড়ে দুর্দান্ত পারফর্ম করে যদিও জুভেদের টানা ৯ম লিগ শিরোপা জয়ে রেখেছেন বড় ভূমিকা। আর তাই তো মৌসুম শেষে মিলল যথার্থ সম্মাননা। গোটা মৌসুমে দিবালা ৩৩টি ম্যাচ খেলে ১১ গোল আর ৭টি অ্যাসিস্ট করেছেন।

ক্যারিয়ারে এটি দিবালার ৭ম সিরি আ’র মৌসুম। আর ৭ম মৌসুমে এসে প্রথমবারের মতো জিতলেন এই পুরস্কার। রোনালদোর পর জুভেন্টাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১১টি গোল করেছেন তিনি, সঙ্গে আছে ৭ অ্যাসিস্টও। মৌসুমের শুরুতে একাদশে অনিয়মিত ছিলেন দিবালা। তবে বদলি হিসেবে নেমে দারুণ অবদান রাখার পর একাদশে জায়গা পাকা হয় তার। এরপর থেকেই ২৬ বছর বয়সী ছিলেন দারুণ ফর্মে।

টানা ৯ম শিরোপা জয়ী জুভেন্টাসের থেকেই আটবার বর্ষসেরা খেলোয়াড়ের খেতাব জিতেছে। এর ভেতর কেবল ২০১৮ সালে শিরোপা না জিতলেও ইন্টার মিলানেরমাউরো ইকার্দি জিতেছিলেন এই পুরস্কার।

আর্জেন্টাইন তারকা ইতালিয়ান সিরি আ জুভেন্টাস পাওলো দিবালা সিরি আ'র সেরা খেলোয়াড় স্পোর্টস স্পেশাল

বিজ্ঞাপন

খুলনায় যুবকের পেটে মিলল ইয়াবা
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১২:০২

আরো

সম্পর্কিত খবর