পেনাল্টি না থাকলে কে জিতত ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট?
৬ আগস্ট ২০২০ ১৩:৪৫
রবার্ট লেভান্ডোফস্কিকে পেছনে ফেলে শেষ পর্যন্ত ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট জিতে নিয়েছেন লাৎজির চিরো ইম্মোবিল। সিরি আ’তে ২০১৯/২০২০ মৌসুম শেষ করেছেন ৩৬টি গোল করে। আর ইউরোপের লিগগুলোর মধ্যে সর্বোচ্চ ৭২ পয়েন্ট নিয়ে গোল্ডেন বুট জয় করেছেন এই ইতালিয়ান স্ট্রাইকার। তবে এবার বিতর্ক উঠেছে ইতালিয়ান লিগের পেনাল্টি প্রদান নিয়ে। ফুটবলে যদি পেনাল্টি না থাকতো? কিংবা পেনাল্টি থেকে গোলের পয়েন্ট দুই না হয়ে কম হতো? তবে এবারের ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট জুটত কার ভাগ্যে? ইম্মোবিলই জিতত? নাকি পাশার দান পালটে যেত আর জিতে যেত লেভান্ডফস্কি? বা অন্য কেউ?
সিরি আ’তে ৩৬ গোল করা ইম্মোবিলের পয়েন্ট সংখ্যা ৭২। ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগে প্রতি গোলের জন্য দুই পয়েন্ট প্রদান করা হয়। আর সেরা পাঁচ লিগের বাইরে কোনো লিগের গোলের মান দেড় পয়েন্ট আবার কোথাও বা এক। এবার ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের ভেতরে সবচেয়ে বেশি পেনাল্টি প্রদান করা হয়েছে ইতালিয়ান সিরি আ’তে। ২০১৯/২০২০ মৌসুমের ১০১৬টি সিরি আ’র ম্যাচে মোট ৩৬৭টি পেনাল্টি প্রদান করেছেন রেফারি। অর্থাৎ প্রতি ২৪৯ মিনিটে একটি করে পেনাল্টির নির্দেশ দিয়েছেন রেফারি।
ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগের ভেতরে সিরি আ’তেই সর্বোচ্চ সংখ্যক পেনাল্টি প্রদান করেছে রেফারিরা। আর এর ভেতরে সর্বোচ্চ সংখ্যক পেনাল্টি পাওয়া দল সিরি আ’র লাৎজিও। চিরো ইম্মোবিলের ক্লাব প্রতি ২৯৬ মিনিটে একটি করে পেনাল্টি জিতেছেন যার মোট সংখ্যা ১৫টি। এছাড়া জুভেন্টাস প্রতি ৩৮৩ মিনিটে একটি করে পেনাল্টি পেয়েছে। মোট পেনাল্টি সংখ্যা ১২টি।
আর এমন পরিসংখ্যানেই চোখ চড়ক গাছ ফুটবল সমর্থকদের। লিগে করা ৩৬টি গোলের মধ্যে ১৪টি গোলই ইম্মোবিল করেছেন পেনাল্টি স্পট থেকে। অপরদিকে লেভান্ডোফস্কির ৩৪ গোলের মধ্যে কেবল ৫টিই এসেছে স্পট কিক থেকে। নিয়ম বলে গোল গোলই, সেটা যেভাবেই হোক না কেন। আর নিয়ম অনুযায়ী সেরা পাঁচ লিগে একটি গোলের জন্য দুই পয়েন্ট করে পাবেন গোলদাতা। হয়েচেও তাই। তবে নিয়মটা যদি একটু ভিন্ন থাকত? তবে কেমন হত? এই ধরুন পেনাল্টি বলে কিছুই নেই তখন? দেখে নেওয়া যাক কি হত তখন-
- পেনাল্টি যদি না থাকত? সব পেনাল্টি মুছে দিলে গোল্ডেন বুট কে জিতত?
- পেনাল্টিতে গোল করলে তার পয়েন্ট .৫ হলে কি হত?
- অথবা সবচেয়ে কম মিনিট খেলে বেশি গোলদাতাকে গোল্ডেন বুট দেওয়ার নিয়ম হলে? (সর্বোনিম্ন ২ হাজার মিনিট খেলা অবশ্যক)
পেনাল্টিতে গোল না থাকলে যেমন হত: ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগের ভেতর সর্বোচ্চ সংখ্যক পেনাল্টি থেকে গোল করেছেন চিরো ইম্মোবিল (১৪টি)। অন্যদিকে সবমিলিয়ে ৩৪ গোল করা রবার্ট লেভান্ডোফস্কি পেনাল্টি থেকে গোল করেছেন মাত্র ৫টি। পরিসংখ্যান জানাচ্ছে পেনাল্টি না থাকলে এই পোলিশ স্ট্রাইকারের গোল সংখ্যা হত ২৯টি আর গোল্ডেন বুট জয়ী চিরো ইম্মোবিলের গোল সংখ্যা হত ২২টি। আর তাতেই গোল্ডেন বুট নিজের করে নিতে পারতেন লেভান্ডোফস্কি।
লেভান্ডফস্কি ছাড়া এই তালিকায় দ্বিতীয় নাম আসত টিমো ভার্নারের, বুন্দেস লিগায় ২৮টি গোলের মধ্যে মাত্র তিনটি গোলই এসেছে স্পট কিক থেকে। আর ২৫টি গোল করে তাই তিনিই থাকতেন ২য় স্থানে। এছাড়া এর্লিং হলান্ডের পরে থাকতেন চিরো ইম্মোবিল। দুর্দান্ত মৌসুম কাটানো ইম্মোবিল তার প্রাপ্য সম্মাননা বুঝে পেয়েছেন তবে তার গোলের ৪০ শতাংশ এসেছে পেনাল্টি স্পট থেকে।
পেনাল্টির মান যদি .৫ হত তাহলে যেমন হত: নিয়ম বলে গোল মানে গোলই, সেটা যেভাবেই হোক না কেন। তবে একটু পরিবর্তন করে যদি পেনাল্টি স্পট থেকে করা গোলের মান .৫ করা হত? তবে নিচে দেওয়া পরিসংখ্যানের মতো দেখাত ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুটের দৌড়ে থাকাদের তালিকা। তবুও শীর্ষেই থাকতেন রবার্ট লেভান্ডোফস্কি। তখন তার মোট পয়েন্ট সংখ্যা দাঁড়াত ৬৩ আর ইম্মোবিলের পয়েন্ট দাঁড়াত ৫৮ তে। অন্যদিকে এই তালিকার তিন উঠে আসতেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো এবং এর্লিং হলান্ড। আর লিওনেল মেসি থাকতেন চারে।
তবে পেনাল্টিকে ছোট করে দেখার কোনো রাস্তা নেই। ফুটবলের প্রত্যেকটি ছোট ছোট বিষয়ও মহামূল্যবান। আর তাই তো এটারও যথার্থ সম্মান দেওয়া হয়। তবে সত্যিই যদি এমন করা হত তবে গোল্ডেন বুট নিজের করে নিতেন বায়ার্নের রবার্ট লেভান্ডোফস্কিই।
হিসাব যদি মিনিট প্রতি গোলের করা হত: এই ধাপে প্রতি ৯০ মিনিটে একজন খেলোয়াড় পেনাল্টি ছাড়া কতটি গোল করেছেন তা থেকে করা হত। তবুও গোল্ডেন বুটের মালিক হতেন লেভান্ডোফস্কি। এই নিয়মটা যদিও কিছুটা প্রশ্নবিদ্ধ এবং জটিল হতে পারে। এই নিয়মে একজন খেলোয়াড়কে সর্বনিম্ন ২ হাজার মিনিট ঘরোয়া লিগে খেলা বাধ্যতামূলক শিরোপার দৌড়ে থাকার জন্য।
যদিও এটা অকল্পনীয় যে একজন খেলোয়াড় অন্য আরেকজনের থেকে কম গোল করেও ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট জিতবে। এটা ওই খেলোয়াড়ের প্রতিই অবিচার করা হবে এবং নিয়মবহির্ভূত কাজের কারণে। তবে পরিসংখ্যান বলছে প্রতি ৯০ মিনিটে পেনাল্টি ছাড়া গোলদাতার করা হত। তবে প্রতি ৯০ মিনিটে লেভান্ডোফস্কির গোল সংখ্যা দাড়া ০.৯৫টি। দ্বিতীয় স্থানে থাকতেন টিমো ভার্নার প্রতি ৯০ মিনিটে তিনি ০.৮০টি গোল করেছেন। এদিকে তালিকায় ৪র্থ স্থানে উঠে আসতেন রহিম স্টার্লিং।
এছাড়া এই তালিকায় জায়গা করে নিতেন লুইস সুয়ারেজ। বার্সার এই উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার ইনজুরির কারণে মৌসুমে বড় একটি সময় মাঠের বাইরে ছিলেন। তবে হিসাবটা যদি প্রতি ৯০ মিনিটে করা হত তবে লিওনেল মেসির থেকেও গোলের গড়ে উপরে থাকতেন সুয়ারেজ। মেসি ০.৬৩টি গোল করেছেন প্রতি ৯০ মিনিটে যেখানে সুয়ারেজের গড় দাঁড়াত ০.৬৭টি গোলে। উপরে বিশ্লেষিত পরিসংখ্যান কেবল ইউরোপের সেরা পাঁচ লিগ থেকে সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে।
ইউরোপিয়ান গোল্ডেন বুট ইউরোপিয়ান ফুটবল ইউরোপের সর্বোচ্চ গোলদাতা চিরো ইম্মোবিল পেনাল্টি গোল রবার্ট লেভান্ডোফস্কি