শেষ মুহূর্তের নাটকীয়তায় আটালান্টাকে হারিয়ে সেমিতে পিএসজি
১৩ আগস্ট ২০২০ ০৩:০৬
এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে নিজেদের যাত্রার সমাপ্তি প্রায় দেখে ফেলেছিল পিএসজি। রেফারির ঘড়ির কাঁটা তখন ৯০ ছুঁই ছুঁই, তখনও আটালান্টার বিপক্ষে ১-০’তে পিছিয়ে পিএসজি। ৯০তম মিনিটে মার্কুইনোস এক গোল দিয়ে সমতায় ফেরালেন দলকে। তখন অতিরিক্ত সময়ে গড়াচ্ছে ম্যাচ। কিন্তু নাটকীয়তার শেষ তখনই নয়। শেষ মুহুর্তের জন্য তোলা ছিল নেইমার-এমবাপেদের কাছে। এরিক চুপো মোটিং ৯৩ মিনিটে আরেকবার আটালান্টার জালে বল জড়ালেন। আর তাতেই হৃদয় ভাঙল আটালান্টার। এবং সেই সঙ্গে নিজেদের ইতিহাসে দ্বিতীয়বারের মতো চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনালে উঠে গেল পিএসজি।
ইউরো ক্লাব ইন্ডেক্স বলছিল কোয়ার্টার ফাইনালের এই ম্যাচে জয়ের সম্ভবনা দুই দলেরই প্রবল। একছত্র আধিপত্য দেখাতে পারবেনা কোনো দলই। দুই দলের মধ্যে ৪৭ দশমিক ০৩ শতাংশ জয়ের সম্ভবনা আটালান্টার আর ৫২ দশমিক ৯৭ শতাংশ জয়ের সম্ভবনা পিএসজির। লিসবনে দেখা মিললো সেটাই। ধারাভাষ্যকরের ভাষায় ‘চ্যাম্পিয়নস লিগ এট ইটস বেস্ট।’ ইতালির ইতিহাস গড়ে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগ খেলতে এসে কোয়ার্টার ফাইনালে আটালান্টা। আর পিএসজির সঙ্গে ম্যাচের ৯০ মিনিট পর্যন্ত লড়াই। শেষ মুহুর্তে মার্কুইনেসের গোলে সমতায় আর চুপো মোটিংয়ের গোলে জয় নিশ্চিত।
খাতা কলমে পিএসজি এগিয়ে থাকলেও ছেড়ে কথা বলেনি আটালান্টাও। পৃথিবীর সবচেয়ে রক্ষণাত্মক লিগে খেলেও মুড়ি মুড়কির মতো গোল করা আটালান্টা রুপকথা গড়েই ফেলেছিল। তবে শেষ মুহুর্তের দুই গোলে হাতছাড়া সেমি। ম্যাচের ৯০ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে থাকা এরপর তিন মিনিটের নাটকীয়তা! আর পিএসজির জয়।
লিসবনে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভবনা ছিল প্রবল। তবে জয়ের বাজি প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর পক্ষেই ছিল। কিন্তু ছেড়ে দেওয়ার দল নয় আটালান্টাও। দুর্দান্ত ফুটবল খেলে বিশ্বের নজর কাড়া আটালান্টার আক্রমণভাগের ওপর নজর ছিল তাই সকলের। আর তা ম্যাচ জুড়ে দেখিয়েছেও। পিএসজির বিপক্ষে ম্যাচের ২৭ মিনিটে মারিও পাসালিচের দুর্দান্ত এক গোলে এগিয়ে যায় আটালান্টা। ডুভান জাপাতার অ্যাসিস্ট থেকে গোল আসে আটালান্টার। আর এভাবেই শেষ হয় প্রথামার্ধ।
তবে এক গোলে পিছিয়ে পড়ার পরেই যেন মরিয়া হয়ে ওঠে পিএসজি। একের পর এক আক্রমণ ছিন্ন ভিন্ন করতে শুরু করে আটালান্টার রক্ষণ। তবে কিছুতেই যেন কিছু হচ্ছিল না। ক্রিকেটের ভাষায় ‘ঠিক ব্যাটে বলে যেন মিলছিল না।’ আর তাই তো অপেক্ষা বাড়তে থাকলো আর আটালান্টা স্বপ্ন বুনতে থাকল। ইনজুরিতে পড়ে আটালান্টার বিপক্ষে ম্যাচে খেলা নিয়ে শঙ্কায় ছিলেন কিলিয়ান এমবাপে। তবে শেষ মুহুর্তে দলের সঙ্গে থাকলেও প্রথমার্ধে ছিলেন না মাঠে। আর তার অনুপস্থিতি হাড়ে হাড়ে টেরও পেয়েছে পিএসজি। এমবাপে আর ডি মারিয়ার অনুপস্থিতিতে চাপটা যেন বেশিই ছিল নেইমারের কাঁধে।
চাপের মুহুর্তে দলকে ঠিকই কক্ষপথে রেখেছিলেন নেইমার। তবে বাজে ফিনিশিংয়ের কারণে প্রথমার্ধে আর সমতায় ফিরতে পারেনি পিএসজি। দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা রক্ষণাত্মক ভঙ্গিতে খেলতে শুরু করে আটালান্টা আর তাতেই টুঁটি চেপে ধরে নেইমাররা। আক্রমণের ধার আরও বাড়িয়ে দেয়। তবে একের পর এক সুযোগ হারানোর মহড়া দেওয়া পিএসজিকে গুণতে হচ্ছিল মাশুল। ম্যাচের ৬০ মিনিটে পাবলো সারাবিয়ার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন এমবাপে তখনও ১-০ গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে পিএসজি।
পিছিয়ে থাকলে হাল ছাড়েনি এমবাপেরা। ম্যাচের অন্তিম মুহুর্ত পর্যন্ত চালিয়ে গেছেন লড়াই। আর ম্যাচের পরিসংখ্যান দেখলেই বোঝা যায় এই ম্যাচ জিততে পিএসজি ঠিক কতটা মরিয়া। আটালান্টার গোল বরাবর ১৭টি শট ১৬টি গোলের সুযোগ তৈরি করে পিএসজি। তবে সুযোগ হারানোর মহড়ায় গোল হাতছাড়া হয় নেইমারদের। আর তাই তো হাতছাড়া হতে বসেছিল সেমিফাইনালের টিকিট। তবে ফুটবলে শেষের আগে শেষ বলে যে নেই কিছু তা আরও একবার বুঝিয়ে দিল পিএসজি।
রেফারির ঘড়ির কাঁটায় তখন ৯০ মিনিট চলছে, আর চতুর্থ রেফারি তখন অতিরিক্ত সময় হিসেবে যোগ করেছেন ৫ মিনিট। অর্থাৎ ম্যাচে ফিরতে পিএসজির আছে মাত্র পাঁচ মিনিট। ডি বক্সের ভেতর বল পেয়ে যান নেইমার, তবে জমাট বাধা রক্ষণে শট না নিয়ে বল বাড়িয়ে দেন ছয় গজের ভেতরে সেখান থেকে মারকুইনেসের শট। আর গোল! ৯০ মিনিটে এসে ম্যাচে সমতায় ফিরল পিএসজি।
ধারাভাষ্যকররা গলা ফাটাচ্ছেন ম্যাচ গড়াচ্ছে অতিরিক্ত সময়ে। তবে নেইমার-এমবাপেদের ভাবনায় ছিল অন্যকিছু। ম্যাচের তখন ৯৩ মিনিট চলছে, নেইমার পাস থেকে বল পেয়ে যান এমবাপে। আর ঠান্ডা মাথায় ডি বক্সের ভেতরে মাটি কামড়ানো পাস সতীর্থ চুপো মোটিংয়ের উদ্দেশে বাড়িয়ে দেন এমবাপে। আর ডি বক্সের ভেতর থেকে বল জালে জড়াতে এক চুল ভুল করেননি মোটিং। ব্যাস ৯০ মিনিট পর্যন্ত ১-০ গোলে পিছিয়ে থেকেও ৯৩ মিনিটে এসে ২-১ গোলে এগিয়ে পিএসজি। আর এর কিছু সময় পরেই শেষ বাঁশি বাজিয়ে দেন রেফারি। তাতেই নেইমার-এমবাপেদের সেমিফাইনাল নিশ্চিত।
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ কোয়ার্টার ফাইনাল পিএসজি বনাম আটালান্টা সেমিফাইনাল