Wednesday 11 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নেইমারের হাত ধরে আরেক স্বপ্নময় প্রত্যাবর্তন


১৪ আগস্ট ২০২০ ০০:০৭

ম্যাচের ৮৯ মিনিট পর্যন্ত ১-০ তে পিছিয়ে। ততক্ষণে চ্যাম্পিয়নস লিগে আরও একবার শেষ আট থেকে বিদায়ের গান শুনতে শুরু করেছে ফ্রেঞ্চ জায়ান্ট প্যারিস সেন্ট জার্মেই, পিএসজি। ম্যাচ শেষেও কোচ স্বীকার করে নিলেন, সেমির আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন। কিন্তু না, শেষ চার মিনিটের ‘ম্যাজিক্যাল মোমেন্ট’ বদলে দিলো সব হিসাব। দীর্ঘ ২৫ বছর পর ফের সেমিতে পা পিএসজি’র। আর এই ম্যাজিক তো বটেই, পিএসজিকে সেমিতে তোলার পেছনের যে নায়ক— তিনি আর কেউ নন, নেইমার।

বুধবারের (১২ আগস্ট) রাতটা এমনই স্বপ্নময় প্রত্যাবর্তনের রাত ছিল পিএসজি’র। স্বপ্নময় তো বটেই। নইলে ৯০ মিনিটে সমতায় ফিরে ৯৩ মিনিটের গোলে ম্যাচ জয়— স্বপ্ন ছাড়া এমন ‘চিত্রনাট্যে’র নিখুঁত মঞ্চায়ন তো আর প্রতিদিন হয় না। বুধবারের রাতে সেই মঞ্চায়ন হয়েছে বলেই শেষ পর্যন্ত ক্লাব ইতিহাসের দ্বিতীয়বারের মতো সবচেয়ে মর্যাদার চ্যাম্পিয়নস লিগের শেষ চারে উঠেছে পিএসজি। পেট্রোডলারের ঝনঝনানিতেও ১৯৯৫ সাল থেকে ‘এইটুকু’ সাফল্যই যে ধরা দেয়নি দলটির কাছে।

কোয়ার্টারের ম্যাচে ম্যাচসেরার পুরস্কার উঠেছে নেইমার ডি সিলভা সান্তোস জুনিয়র তথা নেইমারের হাতে। গোল পাননি। মিস করেছেন অন্তত চারটি গোল, যার মধ্য দু’টি ভীষণ দৃষ্টিকটূ। ম্যাচের পঞ্চম মিনিটে গোলরক্ষককে একা পেয়েও ব্রাজিলের পোস্টারবয় যেভাবে বারের বাইরে বল মেরে দিলেন, সেটা বিশ্বাসই হচ্ছিল না বেঞ্চে বসে থাকা কিলিয়ান এমবাপ্পের। সিট থেকে লাফিয়ে উঠে অনেকক্ষণ মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকলেন ফরাসি তরুণ। তার মতোই পিএসজি’র লাখো দর্শকেরও তখন মাথায় হাত। তবে সেখানেই শেষ নয়, গোলরক্ষককে একা পেয়ে আবারও বল বাইরে মেরেছেন নেইমার, সুযোগ তৈরি করেও শট লক্ষ্যে রাখতে পারেনি। ধারাভাষ্যকাররা তো প্রথমার্ধ শেষে বলেই ফেললেন, হ্যাটট্রিকটা মিস করে ফেলা তখনই শেষ নেইমারের।

দ্বিতীয়ার্ধেও দৃশ্যটা পাল্টায়নি। গোলমুখ খোলার সুযোগ ছিল, পারেননি। এতকিছুর পরও যে ম্যাচসেরা হয়েছেন, তার অর্থ— ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত জিতিয়েছেন তিনিই। শেষ চার মিনিটের ওই যে ম্যাজিক, তাতে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছেন নেইমার। তবে কেবল ওই চার মিনিটই নয়, নিজে লক্ষ্যভেদ করতে না পারলেও গোটা খেলাটাই পিএসজি’র হয়ে ধরে রেখেছিলেন নেইমার। ডি-বক্সের সামনে কিংবা মাঝমাঠ— সব খানেই আতালান্তার ডিফেন্ডারদের চরকির মতো ঘুরিয়েছেন। দু’পাশ থেকেই আক্রমণে উঠে প্রতিপক্ষের রক্ষণে কাঁপন ধরিয়েছেন। ম্যাচের কিছু পরিসংখ্যানই বলে দেবে, ম্যাচটাতে নেইমারের ভূমিকা ঠিক কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

আতালান্তার বিপক্ষে কাল ১৬টি সফল ড্রিবলিং করেছেন নেইমার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগের যেকোনো ম্যাচে এটি যৌথভাবে সর্বোচ্চ ড্রিবলিংয়ের রেকর্ড। ২০০৮ সালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের বিপক্ষে ১৬টি ড্রিবল করেছিলেন লিওনেল মেসি, এরও ছয় বছর আগে ২০০২ সালে সমানসংখ্যক ড্রিবল করেছিলেন জানেত্তি। এই ম্যাচে সেই উচ্চতায় উঠে গেলেন নেইমারও। এদিকে, নেইমার যেভাবে মাঠ কাঁপাচ্ছিলেন, তাতে তাকে আটকাতে মরিয়া হয়ে উঠতে হয়েছিল আতালান্তার ফুটবলারদেরও। সে কারণেই ম্যাচে নেইমারকে ৯ বার ফাউল করেছে আতালান্তা। এবারের মৌসুমে এক ম্যাচে এত ফাউলের শিকার হননি আর কোনো ফুটবলার।

এবারে, শেষ ওই চার মিনিটের ম্যাজিকে একটু আসা যাক। না, শেষ চার মিনিটের দুই গোলেরও কোনোটিই করেননি নেইমার। তারপরও দুইটি গোলই নেইমারময়। ৯০ মিনিটের মাথায় স্বদেশি মার্কুইনহোসের করা গোলটিতে সরাসরি অ্যাসিস্ট নেইমারের। আর এর তিন মিনিট পরের গোলটির আক্রমণের সূচনা নেইমারের পায়ে। কয়েকজনকে কাটিয়ে মাঝমাঠ থেকে বল টেনে নিয়ে গিয়ে শট নেওয়ার সুযোগ পাননি, বল বাড়িয়েছিলেন সতীর্থকে। কয়েকজনের পা ঘুরে আবারও বল পেয়ে এবারে নেইমার ডিফেন্সচেরা পাস বাড়ান কিলিয়ান এমবাপ্পের পায়ে। নিখুঁত সেই পাস এমবাপ্পের পা খুঁজে নিতে ভুল করেনি। এমবাপ্পের পা ঘুরে বল পাস হয় ম্যাক্সিম চৌপো মোটিংয়ের পায়ে, সেখান থেকে আতালান্তার জালে! তাতেই নিশ্চিত পিএসজি’র সেমিফাইনাল।

নেইমার ম্যাচের শুরু থেকেই দফায় দফায় গোল মিসের মহড়া দেওয়ায় স্নায়ুচাপে ভুগতে হয়েছে পিএসজি’র দর্শকদের। নেইমারের ওপর কি সেই চাপ আরও বেশি ছিল না? সেই চাপ নিয়ে অমন ‘ম্যাজিক’ কিভাবে করলেন? নেইমার অবশ্য চাপ-টাপ সব উড়িয়ে দিয়েছেন। ম্যাচ শেষে বললেন, ‘আমি কখনোই বাদ পড়ার কথা ভাবিনি। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত, এমনকি গা গরমের সময়ও। এক মুহূর্তের জন্যও ভাবিনি, আমাদের বিদায় নিতে হবে। ফাইনালে ওঠার ইচ্ছাটা কেউ আমার মন থেকে সরাতে পারেনি।’ এই মানসিক শক্তিই বুঝি পিএসজিকে সেমিতে তুলল!

এমন স্বপ্নময় ‘ম্যাজিক’ তৈরি করে দলকে খাদের কিনারা থেকে ফিরিয়ে আনার নজির নেইমারের জন্য এই প্রথম নয়। ২০১৭ সালে এমনই এক ‘প্রত্যাবর্তনের নায়ক’ হয়েছিলেন উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ম্যাচেই। সেটাও আবার এই পিএসজির বিপক্ষে। নেইমার তখন বার্সেলোনায়। শেষ ষোলের প্রথম লেগে পিএসজির মাঠে ৪-০ গোলে হেরেছিল বার্সেলোনা। ন্যু ক্যাম্পে দ্বিতীয় লেগে পিএসজি আরেকটা গোল পেলে বার্সেলোনার জন্য কাজটা সাঁতরে সাগর পারি দেওয়ার মতোই কঠিন হয়ে পড়ে। পরের রাউন্ডে যেতে ছয় গোল করতে হতো বার্সেলোনাকে।

নেইমারের কাঁধে চড়ে ‘অসম্ভব’কে সম্ভব করেছিল বার্সা। অ্যাওয়ে ম্যাচে পিএসজি গোল পেয়ে গেলে বার্সার ঠিক ঠিক ছয় গোলেরই প্রয়োজন হয়। ওই ম্যাচে নেইমার গোল করেছিলেন দু’টি। ৯০ মিনিটের মধ্যই অ্যাসিস্ট করেছিলেন একটি গোলে। ৯০ মিনিট পেরিয়ে ম্যাচে যখন ৫-৫ গোলে সমতা, অ্যাওয়ে গোলের সুবাদে পিএসজি’র পরের রাউন্ড যখন কেবলই সময়ের অপেক্ষা, ঠিক সেই সময় শেষ আটের টিকিটটা পিএসজি’র কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছিলেন নেইমারই। ম্যাচের শেষ বাঁশি বাজার আগ মুহূর্তে সার্জিও রোবের্তোকে দিয়ে বার্সার ছয় নম্বর গোলটি করিয়ে নিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা। তাতে ৬-১ ব্যবধানে শেষ আট নিশ্চিত হয় বার্সার। চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ইতিহাসের অন্যতম সেরার দাবিদার সেই ম্যাচেও ম্যাচসেরা হয়েছিলেন নেইমার।

কাড়িকাড়ি অর্থ ঢেলে নেইমারকে কিনেছিল পিএসজি। লক্ষ্য ছিল অধরা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা। কিন্তু না, ২৫ বছরের ব্যর্থতার বৃত্ত ভেঙে শেষ চারের মুখই দেখা হয়নি পেট্রোডলারের এই দলটির। এ বছরও যখন সেই একই পরিণতি প্রায় চূড়ান্ত, সেই শেষ মুহূর্তে অধরা সেমিকেই ধরে আনলেন নেইমার। কোয়ার্টারের দ্বিতীয় লেগের এই ম্যাচের পর নিশ্চয় নেইমারের পেছনে ‘টাকার বস্তা ঢালা’র সিদ্ধান্তের প্রশংসাই করবে পিএসজির মালিকপক্ষ! এই ম্যাচের মতোই আরও ‘ম্যাজিক’ জন্ম দিয়ে নেইমার পিএসজিকে ফাইনালে পৌঁছে দেবেন— মনে মনে এমন আশাই নিশ্চয় পিএসজি’র ভক্তকূলেরও।

উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ টপ নিউজ নেইমার পিএসজি বার্সেলোনা


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

নড়াইলে মাশরাফিসহ ৯০ জনের নামে মামলা
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:৪০

সরকারের প্রথম একনেক ১৮ সেপ্টেম্বর
১১ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১৪:১৩

সম্পর্কিত খবর