ফাইনালের স্বপ্নে মুখোমুখি বায়ার্ন-লিওঁ
১৯ আগস্ট ২০২০ ১৫:৩২
স্বপ্নের ফাইনাল থেকে কেবল ৯০ মিনিটের দূরত্বে বায়ার্ন মিউনিখ আর ওদিকে অপেক্ষার প্রহর গুনছে অলিম্পিক লিওঁ। বুধবার (১৯ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় রাত একটায় উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের দ্বিতীয় সেমিফাইনালে মুখোমুখি হবে দুই দল।
এর আগে ২০০৯/১০ মৌসুমে চ্যাম্পিয়নস লিগের সেমিফাইনাল খেলেছিল অলিম্পিক লিওঁ তবে স্বপ্নের ফাইনালে সেবারও যাত্রা ভঙ্গ হয়েছিল। এবার শেষ ষোলয় জুভেন্টাস আর কোয়ার্টারে ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে বেশ ফুরফুরে মেজাজে লিওঁ। তবে সামনে যে নির্মম নির্দয় বাভারিয়ানরা। তাই তো স্বপ্নের ফাইনালও দুঃস্বপ্ন হয়ে যেতে পারে লিওঁর।
এর আগে বার্সেলোনাকে দুঃস্বপ্নের রাত উপহার দিয়েছিল বায়ার্ন। দুঃস্বপ্নও যেন এমন ভয়ংকর হয় না যেমনটা ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা বায়ার্ন মিউনিখের বিরুদ্ধে প্রথম অর্ধেই দেখল। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে পর্তুগালের লিসবনে মুখোমুখি বার্সেলোনা এবং বায়ার্ন মিউনিখ। যেখানে ম্যাচের প্রথমার্ধেই লিওনেল মেসিদের জালে গোলের হালি উৎসব পূর্ণ করেন থমাস মুলার-রবার্ট লেভান্ডোফস্কিরা। আর দ্বিতীয়ার্ধেও সেই ধারা অব্যাহত রেখে কাতালানদের ওপর চলে বাভারিয়ানদের টর্নেডো। শেষ বাঁশি বাজলেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচে মেসিরা কেননা ম্যাচের সমাপ্তি যে হলো বায়ার্নের ৮-২ গোলের জয়ে। চ্যাম্পিয়নস লিগের ইতিহাসে নকআউট পর্বে এটিই আট গোলের প্রথম ইতিহাস।
এই ম্যাচে তাই হিসেবে এগিয়ে ছিল জার্মান ক্লাবটিই। ইউরো ক্লাব ইনডেক্সের তথ্য মতে এই ম্যাচ জয়ের সম্ভবনা ছিল বার্সেলোনার ৪৭ দশমিক ০৩ শতাংশ আর বায়ার্ন মিউনিখের সম্ভবনা ছিল ৫২ দশমিক ৯৭ শতাংশ। শেষ পর্যন্ত বার্সেলোনাকে গুড়িয়ে সেমি নিশ্চিত করে লেভান্ডোফস্কি-মুলাররা।
অন্যদিকে রিয়াল মাদ্রিদকে শেষ ষোলর দুই লেগেই ২-১ গোলের একই ফলাফলে বিদায় করে দেয় পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটি। আর দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সিটিরই তাই তো লিওঁর বিপক্ষে ম্যাচ জয়ের সম্ভবনা ছিল প্রবল। ইনডেক্স বলছে ৮১ দশমিক ৯৯ শতাংশ জয়ের সম্ভবনা সিটিজেনদের আর কোনো অঘটন ঘটার সম্ভবনা অর্থাৎ অলিম্পিক লিওঁর জয়ের সম্ভবনা ১৯ দশমিক ০১ শতাংশ।
তবে অঘটনই ঘটিয়েই দিয়েছে অলিম্পিক লিওঁ। উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগে এবার যেন চমকের পশরা সাজিয়ে বসেছে লিওঁ। পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটিকে বিদায় করে সেমিফাইনালের টিকিট নিশ্চিত করেছে অলিম্পিক লিওঁ। আর দুর্দান্ত ফুটবল খেলে গোটা বিশ্বকেই চমকে দিয়েছে লিওঁ। শনিবার (১৫ আগস্ট) লিসবনে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগের কোয়ার্টার ফাইনালে সিটিজেনদের ৩-১ গোলের ব্যবধানে হারিয়ে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে লিওঁ।
দুই দলের সম্ভাব্য একাদশ:
বায়ার্ন মিউনিখ: ম্যানুয়েল নয়্যার, আলফোন্সো ডেভিস, ডেভিড আলাবা, জেরমে বোয়েটেং, জশুয়া কিমিখ, থিয়াগো আলকান্ত্রা, লেওন গোরেতজেকা, ইভান পেরিসিচ, থমাস মুলার, রার্জ গ্যানাব্রি এবং রবার্ট লেভান্ডোফস্কি।
অলিম্পিক লিওঁ: অ্যান্থনি লোপেস, ফার্নান্দো মার্কাল, মার্সেলো, জেসন দেনায়ের, ম্যাক্সওয়েল কর্নেট, হোসেন অরার, ব্রুনো গুমেইরেস, ম্যাক্সেঞ্চ কায়েরতো; লেও দুবোইস, মোসা দেম্বেলে এবং মেম্ফিস ডিপে।
বায়ার্ন যে কৌশল অবলম্বন করতে পারে লিওঁ’র বিপক্ষের সেমিফাইনালে-
সেমিফাইনালে বায়ার্নের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হতে পারে লিওঁ’র গোলরক্ষক এবং দৃঢ় রক্ষণভাগ। আর লিওঁ নিজেদের রক্ষণের দিকে এমনই দৃঢ় নজর রেখেছে যে গোলরক্ষকের সামনে পাঁচজন ডিফেন্ডার প্রায় সবসময়ই বিদ্যমান থাকেন। আর এই ডিফেন্স লাইনের সর্বপ্রথম কাজ হচ্ছে কোনো সৃজনশীলতার কথা চিন্তা না করেই নিজেদের ডি বক্সের আশেপাশের বল ক্লিয়ার করে গোলের বিপদমুক্ত করা। আর এমন দলের বিপক্ষে গোল করাটা যেকোনো টিমের পক্ষেই বেশ কঠিন।
লিওঁ’র এমন রক্ষণভাগের বিপক্ষে জুভেন্টাসের জন্য সবচেয়ে বড় মুশকিল হয়ে দাঁড়িয়েছিল প্রথম লেগে পিছিয়ে থাকা এবং দ্বিতীয় লেগে এসে প্রথমে গোল হজম করা। সুতরাং লিওঁ তুলনামূলকভাবে শক্তিমত্তার দল হওয়ায় কোনোভাবে বায়ার্নের বিপক্ষে গোল করতে পারলেও ডিফেন্সের বাস পার্কিং-এ যাবে, অবশ্য এতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। আর জুভেন্টাসের বিপক্ষে দ্বিতীয় লেগে এই অবস্থা থেকে উত্তোরণের পথ একমাত্র রোনালদোই বুঝতে পেরেছিলেন যে বক্সে ঢুকে লিওঁ’র বিপক্ষে গোলে বল জড়ানো সহজ হবে না। ফলাফল নিজের দ্বিতীয় গোলটি ডি বক্সের বাইরে থেকে জোরালো শটে।
আর ম্যানচেস্টার সিটির দুর্বল জায়গা ছিল মাত্র এক লেগের খেলা। অর্থাৎ একবার ভুল করলে সেখান থেকে পরিত্রাণের আর দ্বিতীয় সুযোগ নেই। আর সেই ভুলটাই করলেন পেপ গার্দিওলা। ট্যাক্টিস মাস্টারমাইন্ড পেপ ভুল করলেন হাই লাইন ডিফেন্স এবং লিওঁ’কে চাপ না দিয়ে খেলা গড়া। সিটি রক্ষণ ঠিক রেখে ম্যাচের বিল্ড আপে মনোযোগ দিত তবে সম্ভবনা ছিল রিয়াল মাদ্রিদের বিপক্ষে যেভাবে কেভিন ডি ব্রুইন রামোস-ভারানদের রক্ষণ ভেঙে ম্যাচ বের করে এনেছিলেন, লিওঁ’র বিপক্ষেও এমনটাই হতে পারত।
এদিকে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বায়ার্ন মিউনিখও ম্যানচেস্টার সিটির মতো হাইলাইন ডিফেন্স খেলিয়ে থাকে। তবে এদিকে বাভারিয়ানদের এগিয়ে থাকবে কেননা তাদের চারজন রক্ষণভাগের খেলোয়াড়দের মধ্যে চারজনই প্রচন্ড গতি সম্পন্ন অর্থাৎ লিওঁ কাউন্টার অ্যাটাকে গোল দিতে আসলে তা বায়ার্নের হাই ডিফেন্সিভ লাইন গতি দিয়েই প্রতিহত করতে পারবে।
এদিকে গেল ম্যাচে বার্সেলোনার বিপক্ষে বায়ার্নের সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গা হিসেবে দেখা মিলেছে তাদের খেলোয়াড়দের জায়গা বদল করে প্রতিপক্ষকে চাপ দেওয়া। কয়েক মুহূর্তের মধ্যেই উইং পর্যন্ত জায়গা বদল করে ফেলতে পারে বাভারিয়ান ফুটবলাররা। যার দেখা মিলছে বার্সা এবং চেলসির বিপক্ষে দুই ম্যাচেই। এই দুই ম্যাচে পেরিসিচ আর গ্যানাব্রি সফলভাবে এই কাজটি করেছেন এবং তার জন্য ফলাফলটাও হাতে নাতেই এসেছে। লেভান্ডোফস্কি শেষ দুই ম্যাচে ডান-বাম উভয় প্রান্তে জায়গা বদল করে খেলেছেন মুলার এবং গোরেতজেকার সঙ্গে। যার কারণে প্রতিপক্ষ কখনোই ম্যান মার্কিং করে সফল হয়নি, বরং বড়সড় রকমের ধাক্কা খেয়েছে।
আর তাই তো এই বায়ার্নকে চেপে ধরাটা সহজ কাজ হবে না লিওঁ’র জন্য। আর দুর্দান্ত ফর্মে থাকা বায়ার্ন মিউনিখের জন্য লিওঁ’র চেয়ে সহজ প্রতিপক্ষ হতে পারত না আর। তবে ফুটবলে যেকোনো সময় ঘটতে পারে অঘটন। আর তাই তো প্রথমবারের মতো ফাইনালের স্বপ্ন বুনছে লিওঁ।
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ দ্বিতীয় সেমিফাইনাল বায়ার্ন মিউনিখ বনাম অলিম্পিক লিওঁ সেমিফাইনাল