আক্ষেপে পুড়লেন নেইমার!
২৪ আগস্ট ২০২০ ০৪:২১
২০১৪/১৫ মৌসুমে বার্সেলোনার হয়ে ইউরোপের শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করেছিলেন নেইমার জুনিয়র। তবে এবার তার জন্য চ্যালেঞ্জটা ছিল ভিন্ন। বিশ্বের সবচেয়ে দামি খেলোয়াড়কে দলে ভিড়িয়ে চমকে দেওয়া প্যারিস সেইন্ট জার্মেইর লক্ষ্য ছিল ইউরোপিয়ান শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের। আর যার নেতৃত্বে ছিলেন নেইমার জুনিয়র। টানা দুই মৌসুম সেমিফাইনালে উঠতে ব্যর্থ হলেও, নেইমার পিএসজিতে তার তৃতীয় মৌসুমে এসেই দলকে নিয়ে গেলেন ফাইনালে। তবে অপরাজেয় বায়ার্নের বিপক্ষে ফাইনাল হেরে বসলেন। আর তাই তো ম্যাচ শেষ কান্নায় ভেঙে পড়েন এই তারকা ফুটবলার।
পিএসজিতে গিয়ে কিছুটা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন নেইমার। যেন ফুটবল তার কাছে দ্বিতীয় প্রেম! আর তাই তো নানান গুঞ্জনের বৃত্তে আটকে পড়েন এই ব্রাজিলিয়ান পোস্টার বয়। তবে অবশেষে তৃতীয় মৌসুমে এসে নিজেকে খুঁজে পান নেইমার। আর পিএসজিও ছুটতে থাকে নেইমারের চেপে। বায়ার্ন মিউনিখের বিপক্ষে ফাইনালের আগে তাই তার ওপর প্রত্যাশার পারদ ছিল একটু বেশিই।
তিন বছর আগে টাকার বস্তা ঢেলে বার্সেলোনা থেকে নেইমারকে কিনেছিল পিএসজি। লক্ষ্য ছিল লিওনেল মেসি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো যেভাবে নিজেদের ক্লাবকে টানেন তেমন মাঠের নেতা হবেন নেইমার। কিন্তু গত দুই মৌসুমে গুরুত্বপূর্ণ সময়ে চোটে পড়ে সেই আশা পূরণ করতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান সুপারস্টার। একের পর এক বিতর্কিত কাণ্ডেও খবরের শিরোনাম হয়েছেন। কিন্তু এবার খেলছেন প্রত্যাশা মতোই।
সতীর্থদের ভাষায়, কয়েক বছর ধরে ‘পার্টি বয়’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া নেইমার নিজেকে অমূল পাল্টে ফেলেন। ড্রেসিংরুমে নেইমার এখন নেতা। মাঠের খেলায়ও তার প্রভাব পড়েছে। নেইমারের কাঁধে চড়েই চ্যাম্পিয়নস লিগের নকআউট পর্ব পার করল পিএসজি। এক লেগের কোয়ার্টার ফাইনাল ও সেমিফাইনালে আটালান্টা এবং লেইপগিজের বিপক্ষে অপ্রতিরোধ্য ফুটবল খেলেছেন ২৭ বছর বয়সী তারকা। তিন মিনিটের ব্যবধানে দুই গোল করে কোয়ার্টারে বাঁধা পেরিয়েেছে পিএসজি। যার একটি গোল ছিল নেইমারের বানিয়ে দেওয়া।
এতকিছু করছেন বটে কিন্তু গোল পাচ্ছেন না। একের পর এক সহজ সুযোগ নষ্ট করছেন। কখনো কখনো ভাগ্যকে পক্ষে পাচ্ছেন না। আটালান্টার বিপক্ষে অন্তত তিনটি সহজ সুযোগ নষ্ট করেছেন নেইমার। কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল মিলিয়ে তার দুটি শট বরে লেগে ফিরেছে। দুর্দান্ত ফর্মের নেইমার স্বস্তিদায়ক হলেও ফাইনালের আগে তার গোল না পাওয়াটাই ভাবাচ্ছিল পিএসজিকে। আর ফাইনালেও হলোও তাইই। নেইমার এদিনও দুর্দান্ত খেলেছেন কিন্তু ম্যানুয়েল নয়্যারকে পেছনে ফেলতে পারেননি। নয়্যারকে একা পেয়েও গোল করতে পারেননি ব্রাজিলিয়ান পোস্টার বয়। আর সেই সুযোগ হাতছাড়ার খেসারত পিএসজিকে দিতে হয়েছে ফাইনালের হারের মাধ্যমে।
ধারাভাষ্যকাররা গলা ফাটিয়ে বলেছেন, ‘ইউ ক্যান্ট মিস চান্সেস এগেইনস্ট বায়ার্ন।’ অর্থাৎ ‘বায়ার্নের বিপক্ষে এভাবে সুযোগ হাতছাড়া করতে পারো না তোমরা।’
তবে কেবল দোষটা নেইমারের ওপর চাপালে বড্ড নিষ্ঠুরতা দেখানো হবে ম্যানুয়েল নয়্যারের প্রতি। ম্যাচে কিংসলে কোম্যানের গোলে বায়ার্ন জয় পেলেও শেষ পর্যন্ত বাভারিয়ানদের ম্যাচে ধরে রাখার নায়ক নিঃসন্দেহে অধিনায়ক এবং গোলরক্ষক ম্যানুয়েল নয়্যার। নেইমার জুনিয়রের সঙ্গে ওয়ান অন ওয়ান মুহূর্তে জয়ী নয়্যারই। নেইমারের শট দুর্দান্তভাবে ফিরিয়ে দিলে ফিরতি বল আবারও গোলবরাবর শট নেন নেইমার তবে মুহূর্তের মধ্যেই দ্বিতীয় সেভে সাক্ষাৎ গোলের হাত থেকে দলকে রক্ষা করেন নয়্যার।
আর শেষ পর্যন্ত ব্যর্থায় পর্যবসিত হতে হয় নেইমার তথা পুরো পিএসজি দলটিকেই। সাফল্য এত কাছে তবুও এত দূরে! এবারের চ্যাম্পিয়নস লিগে ৭ ম্যাচে ৩ গোল এবং ৪টি অ্যাসিস্ট নেইমারের। দলকে একা না টানলেও দলের প্রয়োজনের মুহূর্তে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিয়েছেন তিনি তবে ফাইনালে গোল মিসের ক্ষতটা বেশ ভুগাবে নেইমারকে আর সেই সঙ্গে পিএসজিকেও।
উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল নেইমার জুনিয়র পিএসজি বনাম বায়ার্ন মিউনিখ