তাহলে সিটিতেই যাচ্ছেন মেসি?
২৬ আগস্ট ২০২০ ১৫:২৯
ক্লাব ইতিহাসে এতো বাজে সময় সম্ভবত কখনোই কাটাতে হয়নি বার্সেলোনাকে। চ্যাম্পিয়নস লিগে বায়ার্ন মিউনিখের কাছে ৮ গোল খেয়ে শিরোপা ছাড়া মৌসুম শেষ করার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছিল। তার কদিন পরই শুনতে হলো হৃদয় ক্ষতবিক্ষত হওয়ার মতো খবর। লিওনেল মেসি জানিয়ে দিয়েছেন, ক্লাব ছাড়তে চান তিনি। মেসি শুধু ক্লাবটির ইতিহাস সেরা খেলোয়াড়ই নয়, স্প্যানিশ ক্লাবটিকে বিশ্বের অন্যতম সেরা বানানোর মূল কারিগরও।
বার্সেলোনা যে গত ১০-১৫টা মৌসুমে ইতিহাসের সেরা সময় কাটিয়েছে সেটা আর্জেন্টাইন জাদুকরের কারণেই। এখন পর্যন্ত ২৬টি লিগ শিরোপা জিতেছে বার্সেলোনা, তার মধ্যে মেসির সময়েই ১০টি। ৫টি চ্যাম্পিয়নস লিগের ৪টিই মেসির সময়ে। মেসির সময়ে না বলে বলা ভালো, মেসির কাঁধে চড়েই। বার্সেলোনার জার্সিতে মেসির গোলসংখ্যা ৬৩৪টি, ক্লাবটির দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা সিজার রদ্রিগেজের (২৩২) চেয়ে যা প্রায় তিন ডাবল! প্রতি মৌসুমেই পঞ্চাশের মতো গোল করে চলা ছয়বারের বর্ষসেরা ফুটবলার এখনও অপ্রতিরোধ্য। এবারের মৌসুমেও পুরোপুরি মেসির ওপর নির্ভরশীল ছিল বার্সেলোনা। এমন একজনের বিদায় মানে ক্লাবের মেরুদণ্ড ভেঙে যাওয়া।
বার্সেলোনা বিভিন্ন পন্থায় চেষ্টা করছে তর্ক সাপেক্ষে সর্বকালের সেরা ফুটবলারটিকে আটকাতে। মেসি গতকাল নিজের আইনজীবীর মাধ্যমে বুরোফ্যাক্সে (প্রত্যায়িতপত্র) নিজের সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেওয়ার পরই জরুরী বৈঠকে বসেছিল বার্সা কর্তৃপক্ষ। যে করেই হোক মেসিকে আটকানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে বৈঠকে। তবে বাস্তবতা বলছে সেই সম্ভবনা সামন্যই। গন্তব্য ঠিক করেই নাকি ক্লাব ছাড়ার কথা জানিয়ে দিয়েছেন মেসি!
স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম রেডিও কাতালুনিয়ার দাবি, ম্যানচেস্টার সিটিই হতে যাচ্ছে মেসির পরবর্তী গন্তব্য। সিটির বর্তমান কোচ পেপ গার্দিওলার সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হওয়ার পরই নাকি বার্সাকে ‘না’ বলে দিয়েছেন তিনি।
তার বেতনের ভাড় বইতে পারবে কিনা, চুক্তির যাবতীয় বাধা পারি দিতে পারবে কিনা বা তাকে নিয়ে পরিকল্পনা কী- গার্দিওলার সঙ্গে এসব বিষয়ে খুঁটিনাটি আলাপ করেছেন মেসি। রেডিও কাতালুনিয়ার সাংবাদিক হাভি কাম্পোস জানিয়েছেন, এসব বিষয়ে গার্দিওলার সঙ্গে বেশ কয়েকবার ফোনালাপ হয়েছে মেসির। এদিকে, গত কয়েক বছর ধরে বার্সেলোনা হাঁড়ির খবর ফাঁস করার জন্য পরিচিত রেডিও ইতাতিয়াইয়ার বিখ্যাত সাংবাদিক মার্সেলো বেকলারও বলছেন, সিটিতেই যাচ্ছেন মেসি।
গত কয়েক বছর ধরেই ম্যানচেস্টার সিটির প্রতি মেসির আগ্রহ লক্ষ্য করা যাচ্ছিল। যার হাত ধরে কিংবদন্তি হিসেবে উত্থান সেই পেপ গার্দিওলা সিটির কোচ হওয়ার পর ইংলিশ ক্লাবটিকে ফলো করছিলেন মেসি। একবার সরাসরিই জানিয়েছিলেন, পেপ গার্দিওলার অধিনে আরও একবার খেলতে চান।
গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, মেসি ম্যানসিটিকে বেছে নেওয়ার ক্ষেত্রে আরও কিছু কারণ আছে। সিটিতে বিভিন্ন ভূমিকায় বার্সেলোনার বেশ কয়েকজন সাবেক কাজ করছেন। দলটির ক্রীড়া পরিচালক হিসেবে আছেন টিক্সিকি বেগিরিস্টেইন ও প্রধান নির্বাহীর দায়িত্ব পালন করছেন ফেরান সোরিয়ানো। এদের প্রতিজনের সঙ্গে মেসির ভালো জানাশোনা। এসবও নাকি মেসিকে সিটিতে যাওয়ার ব্যাপারে উদ্ভুদ্ধ করেছে!
উল্লেখ্য, বায়ার্নের বিপক্ষে ৮ গোল হজম করার পরই বার্সেলোনার প্রতি মন বিষিয়ে উঠে মেসির। প্রয়োজনীয় খেলোয়াড় না কিনে ক্লাব সভাপতি বার্তেমেউয়ের একের পর এক হটকাটি সিদ্ধান্ত বার্সেলোনাকে অনেকটা ভোতা দলে পরিনত করেছে। মাঝমাঠ, রক্ষণভাগ বলে কিছু নেই। মেসি জ্বলে উঠতে না পারলে আক্রমণভাগও হয়ে উঠে নিষ্ক্রিয়। মাঠের শক্তি বাড়ানোর জন্য বারবার চাপ দিয়েছেন মেসি, কিন্তু সেটা কানেই তোলা হয়নি।
তারপর নতুন কোচ রোনাল্ড কোম্যান এসে নাকি আরও তাঁতিয়ে তুলেছিলেন আর্জেন্টিনা তারকাকে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম দেপোর্তিভো কুয়াত্রোর এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নতুন কোচ সাক্ষাতে মেসিকে নাকি জানিয়ে দেন স্কোয়ার্ডের বাড়তি সুবিধা আর দেওয়া হবে না তাকে। মেসিকে নাকি বলা হয়, নতুন আঙ্গিকে দল গোছানো হবে সেখানে তাকে যে ভূমিকা দেওয়া হবে সেটা পালন করতে হবে। দলের জন্য বাড়তি সুযোগ-সুবিধা ত্যাগ করতে হবে।
দেপোর্তিভো কুয়াত্রোর দাবি, কোম্যানের এমন কথার পর মেসি সিদ্ধান্ত নিয়ে নেন ‘বার্সেলোনায় থাকা ঠিক হবে না।’ ফুটবলার হিসেবে নিজের অর্জনগুলোকে আরও বাড়িয়ে নেওয়া যে চেষ্টা সেটা বার্সেলোনায় থাকতে সম্ভব না বলে মনে করেন মেসি। শৈশবের ভালোবাসার ক্লাবকে ‘না’ বলে দিয়েছেন তার পরেই।