২০১৬ সালের পর ইউএস ওপেনে আবারও নতুন রাজার শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন, কেননা এই সময়ের মধ্যে রজার ফেদেরার, রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জকোভিচ বিশ্বের চারটি গ্র্যান্ড স্ল্যামকেই নিজেদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছিলেন। তবে এবার ফেদেরার এবং নাদাল অংশ না নেওয়ায় এবং জকোভিচ ইউএস ওপেন থেকে বহিষ্কার হওয়ার পর ডমিনিক থিমের সামনে বড়সড় এক সুযোগ আসে ইউএস ওপেন জয়ের। শেষ পর্যন্ত জেভরেভকে ৩-২ সেটে রোমাঞ্চকর ফাইনালে হারিয়ে ইউএস ওপেন জিতে নেয় অস্ট্রিয়ান তারকা ডমিনিক থিম।
জার্মানির আলেক্সান্ডার জেভরেভের কাছে দুইবার পিছিয়ে পড়েও শেষ পর্যন্ত জয় নিয়েই মাঠ ছাড়েন থিম। প্রথম সেটে ২-৬ গেমে হেরে বসেন থিম। এরপরের সেটে আ ৪-৬ গেমে জিতে সময়তায় ফেরেন তিনি। কিন্তু তৃতীয় সেটে এসে জেভরেভ আবারও ৬-৪ সেটে জিতে নিলে জমজমাট হয়ে ওঠে ম্যাচ। কিন্তু এরপর ৬-৩ আর ৬-৭ (৬-৮) গেমে সেট জিতে নিয়ে ইউএস ওপেন চ্যাম্পিয়ন বনে যান থিম।
সোমবার নিউইয়ররকের ফ্লাশিং মিডোসে ফাইনালটা জমজমাট হয়েছে। দ্বিতীয় বাছাই অস্ট্রিয়ান ডমিনিক থিম পঞ্চম বাছাই জার্মানির আলেক্সান্ডার জেভরেভকে হারান ৩-২ সেটে। চার ঘণ্টা এক মিনিটের রোমাঞ্চকর ফাইনালে ২-৬, ৪-৬, ৬-৪, ৬-৩, ৭-৬ (৮-৬) গেমে জিতে চ্যাম্পিয়ন হন ডমিনিক থিম।
এমন দুর্দান্ত জয়ের পর ফাইনাল পরবর্তী পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে আনন্দে কেদে ফেলেন থিম। তীরে এসে তরী ডোবার অনুভূতি কেমন তা ভালোই জানা থিমের। তাই তো শিরোপা হাতে তোলার আগে বললেন, ‘আজ হয়তো দুজন বিজয়ী থাকতে পারত। আমরা দুজনেই এটার যোগ্য ছিলাম।’
এবার ইউএস ওপেন অনেকটা তারকাহীন হয়ে পড়ে জকোভিচ যখন লাইন আম্পায়ারকে বল মেরে বহিষ্কার হন। এর আগে অবশ্য অ্যান্ডি মারে, রাফায়েল নাদাল এবং নোভাক জকোভিচ ইউএস ওপেন থেকে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। আর তাই তো টেনিসের ‘বিগ ফোর’ পরবর্তী সময়ে কে রাজত্ব করবে তা দেখার টুর্নামেন্ট ছিল এটিই। শেষ পর্যন্ত তরুণ ডমিনিক থিমই জিতে নিলেন ইউএস গ্র্যান্ড স্ল্যাম।
এর আগে ২০১৬ সালে সুইজারল্যান্ডের স্ট্যান ভাভরিঙ্কা ইউএস ওপেনের শিরোপা জেতার পরের সবগুলো গ্র্যান্ড স্ল্যাম গিয়েছিল তিন কিংবদন্তি তারকা ফেদেরার, নাদাল ও জোকোভিচের ঝুলিতে। আর তিন বছর পর আবারও নাদাল, ফেদেরার এবং জকোভিচের রাজত্বে হানা দিলেন থিম। ওপেন যুগে ৫৫তম গ্র্যান্ড স্ল্যাম বিজয়ী তিনি। ২০১৪ সালের ইউএস ওপেনে ক্রোয়েশিয়ার মারিন সিলিচ সেরার মুকুট জেতার পর এই প্রথম নতুন কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যাম চ্যাম্পিয়নের দেখা পেল টেনিস অঙ্গন।
এই ফাইনালের আগে থিম কিংবা জেভরেভ কারও নামের পাশে ছিল না কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যাম। ২৭ বছর বয়সী থিম অবশ্য আগে তিনবার ফাইনালে উঠেছিলেন। কিন্তু প্রতিবারই তার স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল। ২০১৮ ও ২০১৯ সালে পরপর দুবার ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে ক্লে কোর্টের রাজা রাফায়েল নাদালের কাছে পরাস্ত হন তিনি। আর চলতি বছরের শুরুতে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ফাইনালে ২-১ সেটে এগিয়ে গিয়েও নোভাক জকোভিচকে দমাতে পারেননি।
জার্মানির জেভরেভের অবশ্য এটিই ছিল ক্যারিয়ারের প্রথম গ্রান্ড স্ল্যাম ফাইনাল আর ফাইনাল খেলার দিক দিয়ে অভিজ্ঞ থিমকে প্রায় কুপোকাত করেই ফেলেছিলেন জেভরেভ। তবে শেষ পর্যন্ত অভিজ্ঞতার কাছে আর পেরে ওঠেননি জেভরেভ। প্রথম দুই সেট জিতে স্বপ্ন পূরণের দ্বারপ্রান্তে পৌছে গিয়েছিলেন জেভরেভ। তবে থিমের দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনে পরের তিন সেট জিতে প্রথমবারের মতো গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে নেন থিম।
প্রথম দুই সেট হারের পর পরের দুই সেট অনায়াসেই জিতেন থিম। তবে ম্যাচ নির্ধারণী পঞ্চম সেটে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেন জেভরেভ। দুর্দান্ত প্রতিরোধও গড়েন তিনি। ম্যাচের শেষ সেট গড়ায় টাইব্রেকার পর্যন্ত। আর সেখানেই ৭-৬ (৮-৬) সেটে ম্যাচ জিতে নেয় থিম।
১৬ বছর পর কোনো গ্র্যান্ড স্ল্যাম ফাইনালের প্রথম দুই সেট হেরেও চ্যাম্পিয়ন হওয়ার নজির স্থাপন করলেন থিম। সবশেষ এই কৃতিত্ব দেখিয়েছিলেন আর্জেন্টিনার গ্যাস্তন গাউদিও। ২০০৪ সালের ফ্রেঞ্চ ওপেনের ফাইনালে। আর ইউএস ওপেনে এমন ঘটনা শেষ কবে ঘটেছিল তা জানতে আমাদের ফিরে যেতে হবে ৭১ বছর পেছনে! সেবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের পাঞ্চো গঞ্জালেস।