সাত ম্যাচ নিষিদ্ধ হতে পারেন নেইমার
১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৬:৩৫
করোনাভাইরাস থেকে সদ্যই সেরে উঠেছিলেন নেইমার, আর তার পরপরই ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ানে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে অলিম্পিক মার্শেইয়ের মুখোমুখি হয় পিএসজি। সেই ম্যাচে ১-০ গোলে হেরে বসে বর্তমান চ্যাম্পিয়নরা। তবে ম্যাচের ফলাফল ছাড়িয়ে আলোচনার মূল বিষয়ে পরিণত হয়েছে ম্যাচ শেষের নাটকীয়তা। ম্যাচের শেষ দিকে নেইমারকে উদ্দেশ্য করে বর্ণবাদী গালি দেন মার্শেই ডিফেন্ডার আলভারো গঞ্জালেজ। আর তাতেই হাতাহাতি পর্যন্ত গড়ায় ঘটনাটি এরপর দুই দলের পাঁচ খেলোয়াড় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন। আর এর মধ্যে ছিলেন ব্রাজিলিয়ান তারকা নেইমার জুনিয়রও। তবে নেইমার জানালেন ম্যাচের ভেতর তাকে উদ্দেশ্য করে বর্ণবাদী আচারণ করেন মার্শেইর আলভারো গঞ্জালেজ।
তবে এবার মাঠের মধ্যে মেজাজ হারিয়ে নিষিদ্ধ হতে পারেন নেইমার। ফরাসি সংবাদমাধ্যম আরএমসি স্পোর্টস জানিয়েছে, এই ঘটনায় সাত ম্যাচের জন্য নিষিদ্ধ হতে চলেছেন ২৮ বছর বয়সী এই ব্রাজিলিয়ান তারকা। কেননা খেলার মাঠে প্রতিপক্ষের গায়ে সরাসরি হাত তোলেন এই ব্রাজিলিয়ান তারকা। এমন অপরাধ করার পর এক চুল ছাড় দিতে নারাজ ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান কর্তৃপক্ষ। নেইমারের অভিযোগ আমলে নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে ফ্রেঞ্চ লীগ ওয়ান কর্তৃপক্ষ। পিএসজি জানিয়েছে, নেইমারের প্রতি তাদের সমর্থন রয়েছে। আলভারো পাশে পেয়েছেন তার ক্লাবকেও।
এক সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে পিএসজির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘পিএসজি খুবই আন্তরিকভাবে নেইমারকে সমর্থন দিচ্ছে, তিনি বলেছেন তাঁর সঙ্গে প্রতিপক্ষের একজন খেলোয়াড় বর্ণবাদী আচরণ করেছেন। ক্লাব আবারও ব্যাপারটা পরিষ্কার করে বলতে চায়, সমাজের কোনো জায়গায় বর্ণবাদের জায়গা নেই। না ফুটবলে, না আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে। আমরা আশা করি এই জঘন্য আচরণের প্রত্যেক প্রকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সোচ্চার হবে সবাই।’
বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘১৫ বছর ধরে সমাজের বিভিন্ন বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছে পিএসজি ও তার সঙ্গী এসওএস রেসিজমে, লিক্রা ও স্পোর্তিতিউদ। এলএফপির (ফরাসি লিগ ওয়ান কমিটি) শৃঙ্খলা কমিশনের তদন্ত ও সত্যতা নির্ধারণের অপেক্ষায় রয়েছি আমরা। তদন্তে যে কোনো ধরনের সহায়তার জন্য এলএফপির পাশেই আছি আমরা।’
বর্ণবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া মার্শেই দাবি করেছে, আলভারো বর্ণবাদী নন। ‘আলভারো গঞ্জালেজ বর্ণবাদী নন। ক্লাবে যোগ দেয়ার পর তার জীবন-যাপন সে কথা বলে না। সতীর্থরাও তার পক্ষে রায় দিয়েছে।’ এদিকে নেইমারের ভক্তকূলের কাছ থেকে মৃত্যুর হুমকি পাচ্ছেন আলভারো জানিয়েছেন বিভিন্ন গণমাধ্যম।
এ ব্যাপারে মার্শেই বিবৃতিতে জানায়, ‘আলভারোর ব্যক্তিগত যোগাযোগ নম্বর ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে ব্রাজিলিয়ান সংবাদমাধ্যমে। এরপর থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হেনস্তার শিকার হওয়ার পাশাপাশি হত্যার হুমকিও পাচ্ছেন আলভারো।’
লাল কার্ড দেখে মাঠ ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় নেইমার বারবার টিভি ক্যামেরা উদ্দেশ্য করে বলছিলেন তিনি বর্ণবাদের আচারণের শিকার। আর সেকারণেই আলভারোর মাথায় চড় মারেন। ম্যাচ শেষে এই ব্যাপারটিকে তিনি নিয়ে যান সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম পর্যন্ত। সেখানে নেইমার প্রথমে বলেন, ‘আমার একটাই হতাশা যে আমি ওই বেয়াদবের মুখে চড় মারিনি।’
টিভি ক্যামেরা উদ্দেশ্য করে নেইমার মাঠ ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় বলেন, ‘সে (আলভারো গঞ্জালেজ) একটা বর্ণবাদী, এই কারণে আমি ওকে মেরেছি।’ এছাড়াও নেইমার ম্যাচ চলাকালীন লাইনম্যানের কাছেও বর্ণবাদী আচারণের অভিযোগ করেন।
পরবর্তীতে আরও একটি টুইটের মাধ্যমে নেইমার বলেন, ‘আমি জানি ভিএআর আমার ব্যবহারটি সহজেই ধরতে পেরেছে। কিন্তু তারা এটা ধরতে পারেনি যে সে আমাকে বর্ণবাদী মন্তব্য করেছে। আমাকে বানর এবং আমার মাকে নিয়ে গালি দিয়েছে। তাদের কি কিছু হবে না?’
ম্যাচ শেষে মাঠ ছেড়ে বের হয়ে যাওয়ার সময় রেফারিদের কটাক্ষ করে হাততালিও দিয়েছিলেন নেইমার। কারণ বর্ণবাদী আচারণের শিকার হওয়ার পরেও তার প্রতিবাদ করার ফলে তাকেই লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়তে হয়েছে।
এদিকে ম্যাচ শেষে আলভারো গঞ্জালেজ আত্মপক্ষ সমর্থন করে টুইটারে নিজের সতীর্থদের সঙ্গে ছবি দেন।
নেইমারের অভিযোগ বেশ গুরুত্ব সহকারেই দেখছে ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান। আর তাই তো এই অভিযোগ নিয়ে তদন্তও করবে লিগ ওয়ান কর্তৃপক্ষ।
নিষিদ্ধ হতে পারেন নেইমার নেইমার জুনিয়র পিএসজি বনাম অলিম্পিক মার্শেই ফ্রেঞ্চ লিগ ওয়ান বর্ণবাদের শিকার