Friday 22 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তরফদার-বাদলের সরে দাঁড়ানোর নেপথ্যে কিসের ‘চাপ’?


২১ সেপ্টেম্বর ২০২০ ২২:৩২

ঢাকা: বাফুফে নির্বাচনের মাঠে কোনো উত্তাপ নেই। কয়েক মাস আগেও নির্বাচনের মাঠ যেখানে গরম ছিল, সেই মাঠেই এখন ‘সুনসান নিরবতা’ বললে ভুল হবে না। এর বড় কারণ হতে পারে একে একে ‘হেভিওয়েট’ প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানো। নির্বাচনের ডাক দিয়ে দু’বার সরে দাঁড়িয়েছেন তরফদার রুহুল আমিন। পরে মনোনয়নপত্র নিয়েও নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন বাদল রায়ও।

এই দুই সংগঠকই বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের আসন্ন নির্বাচনে সভাপতি পদে নির্বাচন করতে এসে নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছেন। ফুটবল পাড়ায় গুঞ্জন, এই দু’জনের সরে দাঁড়ানোর ঘটনা নেহায়েত কাকতাল নয়। বরং একটি মহলের ‘বিশেষ চাপ’ থেকেই নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে তাদের!

বিজ্ঞাপন

ছয়-সাত মাস আগেও নির্বাচনের মাঠের চিত্রপট এমন ছিল না। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মাঠ গোছাতে সরব দেখা গেছে বাংলাদেশ জেলা ও বিভাগীয় ক্রীড়া সংগঠক পরিষদের সভাপতি এবং বাংলাদেশ ফুটবল ক্লাব অ্যাসোসিয়েশনেরও সভাপতি তরফদার রুহুল আমিনকে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতেও ‘খসড়া প্যানেল’ও তৈরি করে ফেলেছিলেন এই সংগঠক।

বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের বর্তমান কমিটির দুই সহসভাপতি মহিউদ্দিন মহি আর বাদল রায়সহ পরিবর্তনের হাওয়ায় নাম লেখানো সাবেক ফুটবলাররা এই প্যানেল পরিকল্পনার অংশ ছিলেন। হঠাৎ এক দমকা হাওয়ায় যেন ওলটপালট এই ‘সাজানো সংসার’।

ফেব্রুয়ারিতে সবাইকে চমকে দিয়ে হঠাৎ তরফদার সিদ্ধান্ত নিলেন নির্বাচনে সভাপতি পদ থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেন। কাকতাল হলেও সত্যি, এর কিছুদিন আগে চতুর্থবারের মতো নির্বাচনে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন টানা ১২ বছর সভাপতির পদে থাকা কাজী সালাউদ্দিন।

বিজ্ঞাপন

এর মাঝে বাফুফের ‘দুর্নীতির গোমড় ফাঁস করা’ বর্তমান কমিটির কর্মকর্তা বাদল রায়ের ঘোষণা, সভাপতি পদে লড়বেন। তার কয়েকমাস পরে আবারও গুঞ্জন নির্বাচনের মাঠে ‘ইউ টার্ন’ নিচ্ছেন তরফদার রুহুল আমিন। এবার সভাপতি পদে নয়, সিনিয়র সহসভাপতি পদে দাঁড়াবেন সাইফ পাওয়ারটেকের এই কর্ণধার। সিনিয়র সহসভাপতি পদে বাফুফেতে গত এক যুগ ধরে ‘চেয়ার গরম’ করছেন আব্দুস সালাম মুর্শেদী।

কাজী সালাউদ্দিনের নেতৃত্বে সম্মিলিত ফুটবল পরিষদ

আগস্টে যশোরে নির্বাচনকে সামনে রেখে এক মাহফিলে অংশ নেন তরফদার রুহুল আমিন। মাস গড়াতেই না গড়াতেই সেপ্টেম্বরেই নির্বাচন মোড় নেয় ভিন্ন পথে। সেপ্টেম্বরের দুই তারিখ তরফদার ঘোষণা দিলেন, নির্বাচনেই থাকছেন না তিনি। ‘আখের গুছিয়ে’ নির্বাচনের মাঠ থেকে ‘উধাও’ এই জনপ্রিয় সংগঠক।  ঠিক একই সময়ে আরেক ‘কাকতাল দৃশ্যপটে’র আগমন। সাইফ পাওয়ারটেকের কর্ণধার তরফদার রুহুল আমিনের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে নামছে দুর্নীতি দমন কমিশন। নির্বাচনের মাঠ ‘সেকেন্ডেই গড়ের মাঠ’।

নির্বাচনের মাঠে উত্তেজনায় বরফ ডালা শুরু হলো। নির্বাচনের মনোনয়নপত্র কেনা-বেচার পালা শুরু হলো। তরফদার সরে যাওয়ার পর স্বতন্ত্র হিসেবে সভাপতি পদে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করে নির্বাচনে দাঁড়ালেন বাদল রায়। নির্বাচনের নতুন চমকের জন্ম হলো। এক লাখ টাকা দিয়ে মনোনয়নপত্র নেওয়ার তিন দিন পেরোতে না পেরোতেই ১২ সেপ্টেম্বর আরেক দিকবদল। নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বাদল রায়!

সেদিন দুপুর থেকেই ফুটবল পাড়ায় গুঞ্জন, একটি ‘বিশেষ মহল’ থেকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে ‘চাপ’ দেওয়া হয়েছে বাদল রায়কে। মনোনয়নপত্র বাতিলের সময়ে পেরিয়ে যাওয়ার ৪০ মিনিট পর সেই বাদল রায় হাজির প্রত্যাহারপত্র নিয়ে। কারণ হিসেবে তার সহধর্মিনী মাধুরী রায় জানালেন, শারীরিক অসুস্থতার কারণে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে হচ্ছে বাদল রায়কে।

পরে এক বেসরকারি টেলিভিশনে সরে দাঁড়ানোর আসল রহস্য উন্মোচন করলেন বাদল রায়, ‘একটি মহল চাপ দিচ্ছে। এসব বললে বা ফিফায় অভিযোগ করলে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনকে ব্যান করে দেবে ফিফা। তাই দেশের ফুটবলকে ভালোবাসি বিধায় ওসবে যাচ্ছি না।’ পরে প্রেস ব্রিফিং করে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিয়েছেন এই ফুটবল সংগঠক ও সাবেক ফুটবলার।

কেঁদে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। পরে অভিযোগ দিয়েছেন, প্রত্যাহার করার পরও হয়রানি করা হচ্ছে তাকে। কারণ নির্ধারিত সময়ের পরে জমা দেওয়ায় প্রত্যাহারপত্র গ্রহণ করেনি নির্বাচন কমিশন। ব্যালট পেপারে তার নাম থাকছে। যদিও তার নামে ভোট না দিতে কাউন্সিলরদের অনুরোধ করেছেন বাদল রায়। নির্বাচনের নিয়ম অবশ্য তা বুঝবে না। সরে দাঁড়িয়েও তাই খাতা-কলমে প্রার্থী থাকতে হচ্ছে বাদল রায়কে।

শেখ আসলামের নেতৃত্বে সালাউদ্দিন বিরোধী সমন্বিত পরিষদ

তবে বাদল রায়ের এই হয়রানির অভিযোগ আর সরে দাঁড়ানোর পেছনে ‘চাপে’র বিষয়টিকে একেবারে অস্বীকার করেছেন কাজী সালাউদ্দিন। তিনি বলছেন, ‘আমি তো ইলেকশন কমিশনের সঙ্গে কোনো আলোচনাই করিনি। আমি আমার ক্ষমতা মিসইউজ করি নাই। দ্য ল উইল টেক ইটস কোর্স। আমি কোনো ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করি নাই।’

নির্বাচনের মাঠ থেকে তরফদার রুহুল আমিন ও বাদল রায়ের সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্ত কি শুধুই কাকতাল, নাকি কোনো চাপ কাজ করেছে? মতামত জানতে চাইলে বাফুফের সাবেক সভাপতি এস এ সুলতান টিটু বলেন, ‘গতবার ছাড়া সেকেন্ড ও এবারের নির্বাচনটা প্রশ্নবিদ্ধ। এটা তো একেবারে প্রশ্নবিদ্ধ এই কারণে যে নির্বাচন প্রভাবিত হবে আমরা প্রথম থেকেই বুঝতে পারছিলাম। প্রথমে রুহুল আমিনের দাঁড়ানোর কথা ছিল। তাকে দুদক দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। খুব সাধারণ ব্যাপার। সে ব্যবসায়ী লোক, সে সমস্যায় পড়বে। সে কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছে জেলার ফুটবলের জন্য।’

এর ফলে কাজী সালাউদ্দিনের নির্বাচনের পথ প্রায় পরিষ্কার হয়ে গেছে বলে মনে করেন টিটু, ‘এখন এটা নিয়ে কথা বলার কিছু নাই। গেম ইজ ওভার। এটা সালাউদ্দিন যেভাবে হোক, যে পদ্ধতিতে হোক নিয়েছে। আমাদের দেশে যতদিন পর্যন্ত ভোটাধিকার না থাকবে, গণতন্ত্র না থাকবে— এমন চলতেই থাকবে। তরফদারকে প্রভাবিত হয়ে ছাড়তে হয়েছে। বাদল রায়কে প্রভাবিত হয়ে ছাড়তে হয়েছে।’

এমন হলে নির্বাচনের পরিবেশ স্বাভাবিক থাকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। সেই বিষয়টি মনে করিয়ে দিয়ে বাফুফের সাবেক এই সভাপতি জানান, ‘এটা নিয়ে ফিফায় অভিযোগ করলে ফিফা ব্যান করে দিতে পারে। নির্বাচন হচ্ছে না। প্রহসন হচ্ছে। আমরা দেশপ্রেমিক। এটা দেশের সম্মানের সঙ্গে আমাদের সম্মান জড়িত।’

এছাড়াও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বর্তমান কমিটির সদস্য ও জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আরিফ হোসেন মুনকে। নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে শঙ্কার কথা প্রকাশ করেছেন তিনিও। এই শঙ্কাটা ফুটবল মহলের অনেকেরই।

আব্দুস সালাম মুর্শেদী আরিফ হোসেন মুন এস এ সুলতান টিটু কাজী সালাউদ্দিন চাপ তরফদার রুহুল আমিন প্রভাব বাদল রায় বাফুফে নির্বাচন শঙ্কা সরে দাঁড়ানো

বিজ্ঞাপন

আদানি গ্রুপের নতুন সংকট
২২ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৩৬

আরো

সম্পর্কিত খবর