বাফুফে নির্বাচন এলেই শুধু কদর বাড়ে ভোটারদের
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৮:৫৮
ঢাকা: চার বছর পরপর বাফুফে নির্বাচন। ভোটের লড়াই যত ঘনিয়ে আসে ততই কদর বাড়ে ভোটারদের। সারাবছর জেলা-বিভাগ ও ক্লাব ফুটবলে অযত্নের নমুনা থাকলেও নির্বাচনের বছরে তাদের কদর কয়েকগুন বেড়ে যায়। বছরজুড়ে ‘দায়িত্বে লাপাত্তা’ থেকে মেয়াদের শেষ বছরে নানান আয়োজন সরব থাকতে দেখা যায় বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)।
ব্যালট পেপারের যুদ্ধ শুরু হওয়ার ঠিক আগেই ভোটের বাজারে চরম ঊর্ধ্বগামী থাকে ‘ভোটারদের মূল্য’। পাঁচ তারকা হোটেলে কাউন্সিলরদের নিয়ে আয়োজন বা জেলায় জেলায় গিয়ে ‘আশ্বাসের বুলি ফোটানোর’ দৃশ্যই থাকে চিত্রপটে। যেখানে মনিটরিংয়ের জন্য চার বছরে মাত্র একবার বৈঠক করে দায় সাড়ে কর্তৃপক্ষ।
তাই প্রশ্ন উঠে- শুধুই কি নির্বাচন আসলেই কদর বাড়ে ভোটারদের?
এবার বাফুফে নির্বাচনে ২১ পদের বিপরীতে ৪৭জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দুটো প্যানেল প্রকাশ্যে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে। একটি কাজী সালাউদ্দিন-মুর্শেদী সম্মিলিত ফুটবল পরিষদ, অন্যটি শেখ আসলাম-মহি সমন্বিত প্যানেল পরিষদ। পরের মৌসুমে বাফুফের ২১টি চেয়ারে কারা বসবেন এবার তা নির্ধারণ করবেন ১৩৯ জন কাউন্সিলর। এরাই ভোটার। জেলা, বিভাগ, ক্লাবসহ দেশের ফুটবল সংশ্লিষ্টরা যোগ্য মানুষদের নেতৃত্বে আনার সুযোগ পান।
সারাবছর অন্ধকারে থাকা এই ভোটাররাই প্রাদপ্রদীপের আলোয় আসেন নির্বাচনের ঠিক আগ মুহূর্তে। আস্থা অর্জনে তাদেরকে নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকেন প্রার্থীরা। নির্বাচন চলে গেলেই ভোটারদের নিয়ে কোন আয়োজন চোখে পড়ে না।
সেই চিত্রটাও তুলে ধরা প্রাসঙ্গিক।
গেল চার বছরে প্রায় ১০০ কোটির ওপরে খরচ করেছে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। প্রশাসনিক ব্যয়ই যেখানে হয়েছে প্রায় ৪০ কোটির মতন। দেশের ফুটবলের চিত্রটা বদলে হয়েছে ‘শুধু গাফলতে, শুধু খেয়ালের ভুলে, দরিয়া অথই ভ্রান্তি নিয়াছি তুলে।’ এই চার বছরে তৃণমূলের উন্নয়ন কার্যত ঠেলা গাড়ির মতো চলছে। পাইপলাইনে ফুটবলারদের অভাব যেমন আছে তেমনি পরিচর্যার অভাবটা স্পষ্ট হয়েছে। আর্থিক নানা অভিযোগের মধ্যে আছে দুদকের নজরদারী। আর জাতীয় দলের ঘরে ওই গণিতের ‘শূন্য’। গত তিন সাফ ফুটবলে গ্রুপ পর্ব পেরুতে পারে না বাংলাদেশ। তৃণমূলে পাইপলাইন শক্ত করার লিগ পাইওনিয়ার লিগ আয়োজনে ‘গা হেলা’ ভাব। জেলা ফুটবল লিগ অনিয়মিত। প্রতিবছর ৬৪ জেলার মাত্র ১৫-২০টিতে নামকাওয়াস্তে টুর্নামেন্ট আয়োজন। স্কুল ফুটবলের দৃশ্যটা করুণ। হারিয়ে যাচ্ছে জাতীয় চ্যাম্পিয়নশিপের মতো ভাল টুর্নামেন্ট। চার বছরে একবার টুর্নামেন্ট মাঠে দেখা যায়।
অন্যদিকে ডিভিশনের খেলাগুলো অনিয়মিতভাবে আয়োজন, সর্বোচ্চ লিগ প্রিমিয়ার ফুটবলে এখনও পর্যন্ত চূড়ান্ত ক্যালেন্ডার দিতে ব্যর্থতা, নারী ফুটবল লিগে অনীহা এসব শিরোনামেই যেন সীমাবদ্ধ ফেডারেশনের কর্মসূচি! শুধু তাই নয় জেলা ও বিভাগীয় ফুটবলের তদারকি করার যে মনিটরিং বডি তারও কোন কার্যকলাপ দেখা যায় না চার বছরে। গত চার বছরে মাত্র একবার বৈঠক করেছে মনিটরিং বডি।
তৃণমূলসহ ফুটবলে এমন করুণ দৃশ্যের পেছনে তদারকির অভাব বলে মনে করছেন জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক ও সংগঠক আরিফ হোসেন মুন, ‘তৃণমূল পর্যায়ে ফুটবল উন্নয়নে তদারকির যথেষ্ট অভাব আছে বলে মনে করি। এই দায় যেমন আমার। এই দায় ফেডারেশনের সবারই ঘাড়ে বর্তায়। তদারকি ঠিকমতো হলে তৃণমূল ফুটবলের উন্নয়ন হবেই।’
তৃণমূল ফুটবল উন্নয়নে গাফিলতির বিষয়টি স্বীকার করেন ফেডারেশনের বিদায়ী কমিটির সদস্য ও পাইওনিয়ার ফুটবল লিগের চেয়ারম্যান অমিত খান শুভ্র, ‘সামনের বার থেকে প্রতিবছর সব জেলায় পরিদর্শন করার নৈতিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাদের প্যানেল। জেলা ও বিভাগীয় ফুটবল উন্নয়নে মনিটরিং বডি সক্রীয় হবে আরও। তাহলে তৃণমূলে ফুটবলের উন্নয়ন হবে আশা করি।’
প্রতিবারই প্রার্থীদের আশ্বাসেই ‘যোগ্যদের’ নির্বাচন করেন প্রার্থীরা। তাদের আশ্বাস তৃণমূলসহ দেশের ফুটবলের উন্নয়ন হবে। শুধু নির্বাচনের আগে নয় বছরজুড়ে ফুটবল উন্নয়নে সক্রীয় থাকবে ফেডারেশনের কর্মকর্তারা। আগামী ৩ অক্টোবর নির্বাচনের মধ্য দিয়ে নেতৃত্ব যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে দেশের ফুটবলকে এগিয়ে নিবেন বলে বিশ্বাস কাউন্সিলরদের।