সমবেদনা এখন সমালোচনায়
১৫ মার্চ ২০১৮ ১৩:৪৩
সারাবাংলা ডেস্ক
গত মঙ্গলবার ক্যামব্রিজে নিজ বাড়িতে মৃত্যুবরণ করেন বিখ্যাত পদার্থবিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৭৬ বছর। হকিংয়ের মৃত্যুতে সমবেদনা জানিয়েছেন ব্রাজিলের তারকা ফুটবলার নেইমার। তবে, তার সমবেদনা নিয়ে সমালোচনা না হলেও সেটির ধরন নিয়ে উঠেছে জোর সমালোচনা।
ইংরেজ বিজ্ঞানী হকিং দীর্ঘদিন ধরে এমায়োট্রফিক ল্যাটারাল স্ক্লেরোসিস (এ.এল.এসের ) রোগে ভুগছিলেন। স্নায়ুর এই রোগের কারণে তিনি স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারতেন না। তা সত্ত্বেও তিনি সাফল্যের সঙ্গে বহু গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা করেছেন। সবসময় একটি ইলেক্ট্রিক হুইল চেয়ারে বসে থাকতেন তিনি। হুইল চেয়ারের সঙ্গে জুড়ে দেওয়া ছিল একটি কম্পিউটার। এর সাহায্যেই চালাতেন পদার্থবিজ্ঞানের নানা গবেষণা। এমনকি কথাও বলতেন যন্ত্রের সাহায্যে।
পিএসজির তারকা নেইমার সম্প্রতি লিগের ম্যাচ খেলতে গিয়ে ইনজুরিতে পড়েন। তার অস্ত্রোপচারও করাতে হয়। আপাতত রিহ্যাব করছেন তিনি। চলাফেরা করতে পারলেও রিহ্যাবের অংশ হিসেবে হুইলচেয়ারে সময় কাটাতে হচ্ছে ব্রাজিল তারকাকে। প্রায় তিন মাসের জন্য মাঠের বাইরে ছিটকে গেছেন তিনি।
হকিংয়ের মৃত্যুর পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞানীর একটি বচন পোস্ট করেন নেইমার। সেখানে তিনি লেখেন, ‘তোমাকে সব সময় ইতিবাচক হতে হবে এবং তুমি যেখানে আছো সেখান থেকেই সেরাটি বের করে আনতে হবে’-স্টিফেন হকিং।
নেইমারের এই পোস্ট হয়তো ভালো চোখেই নিতেন তার ভক্ত-সমর্থকরা। কিন্তু, পোস্টের সঙ্গে যে ছবি জুড়ে দিয়েছেন তাতেই ক্ষেপে উঠেছেন অনেকে। ছবিতে খালি গায়ে হাফ প্যান্ট পরা অবস্থায় একটি হুইলচেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায় নেইমারকে।মহান বিজ্ঞানীর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করতে গিয়ে ট্যাটুভর্তি শরীর নিয়ে খালি গায়ে ছবি তুলেছেন নেইমার, তাতেও আপত্তি অনেকেরই। কেউ জানাচ্ছেন, ‘নেইমারের কিছুদিনের জন্য হুইলচেয়ারে থাকাটা হকিংয়ের সারাজীবনের হুইলচেয়ারে থাকাকে ছোট করে দেখিয়েছে।’ আরেকজন জানিয়েছেন, ‘নেইমারের এই ক্ষণস্থায়ী হুইলচেয়ারের জীবন হকিংয়ের সেই জীবনের তুলনায় কিছুই না। আমি নিশ্চিত নেইমারের শারীরিক অবস্থার এমন কোনো কিছু ঘটেনি যা, হকিংয়ের সঙ্গে তুলনা করতে হবে!’
সমালোচনা করা আরেকজন জানিয়েছেন, ‘৭৬ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করা হকিং দুরারোগ্য ব্যাধির কারণে তার অঙ্গ নাড়াতে পারতেন না। কিন্তু, তিনি মহান একজন ছিলেন। নেইমারের অস্ত্রোপচার সফল হয়েছে, হুইলচেয়ারও ছেড়ে দিতে হবে। মহান হতে এই ছবি!’ একজন বলেছেন, ‘কোনো নীতি-নৈতিকতা কিংবা সহানুভূতি নেই নেইমারের!’ ‘সব অর্থ হারাবে তুমি’। যুক্তরাষ্ট্রের নিউজ ওয়েবসাইট ‘এসবি নেশন’-এর জ্যেষ্ঠ সম্পাদক ন্যাটে স্কট লিখেছেন, ‘নেইমার শুনেছেন, একজন বিখ্যাত মানুষ না ফেরার দেশে চলে গেছেন। যিনি তার জীবনের বেশির ভাগ সময় হুইলচেয়ারে কাটিয়েছেন। নেইমার হয়তো ভেবেছে, সেও একজন বিখ্যাত ফুটবলার, যে এখন হুইলচেয়ারে সময় কাটাচ্ছে। দুজনের মাঝে তফাতটা কিন্তু বিস্তর।’
২০০৯ সালে হকিং ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুত্বপূর্ণ ‘লুকাসিয়ান অধ্যাপক’ পদ থেকে অবসর নেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বিশ্ববিদ্যালয়টির ফেলো হিসেবে কাজ করেছেন।
সারাবাংলা/এমআরপি