এই জয় ভারতীয় ইতিহাসের সেরা?
১৯ জানুয়ারি ২০২১ ২২:২৯
ভারতের তরুণ তুর্কীদের বন্দনায় মত্ত্ব ক্রিকেটবিশ্ব। ব্রিসবেনে কী আশ্চর্য এক ইতিহাসই না গড়ে দেখালেন ঋষভ পন্ত, শুভমান গিল, মোহাম্মদ সিরাজরা। অবিস্মরণীয় তো অবশ্যই, ভারতের এই জয়কে অবিশ্বাস্যও বলছেন অনেকে। ব্রিসবেনের জয়ে বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি জেতাও নিশ্চিত হয়েছে ভারতের। এই অর্জনকে ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা অর্জন বলছেন অনেকে। এমন কথা কিন্তু এমনিতে উঠছে না।
অস্ট্রেলিয়া মাঠে খেলা, তবুও পুরো সিরিজেই অজিদের চোখে চোখ রেখে লড়েছে ভারত। কারা লড়েছেন পেছন ফিরে সেটা একবার দেখুন। আইপিএল শেষ হতেই অস্ট্রেলিয়ার বিমান ধরতে হয়েছে ভারতীয় দলকে। আইপিএলের ব্যস্ত সূচিতে এমনিতেই ক্রিকেটাররা ছিলেন ক্লান্ত, তার সঙ্গে যোগ হয় চোটের মিছিল।
সিরিজ শুরুর আগেই ছিটকে যান ইশান্ত শর্মা ও রোহিত শর্মা। ইশান্ত সাদা পোশাকে অনেকদিন ধরেই ভারতের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। রোহিত রঙিন পোশাকে দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। রোহিত পরে ফিরেছেন বটে কিন্তু চোট কাটিয়ে আগের সেই ধার আর দেখাতে পারেননি। ক্লান্ত ভারত বড় ধাক্কাটা খেল টেস্ট সিরিজ শুরুর প্রথমেই। মাত্র ৩৬ রানে গুটিয়ে গেল বিরাট কোহলির দল। অস্ট্রেলিয়া এগিয়ে গেল ১-০ তে।
ওই ধাক্কার পর ভারতের ঘুরে দাঁড়ানোর কোনো সম্ভাবনাই দেখছিলেন না রিকি পন্টিং, শেন ওয়ার্ন, মাইকেল ভনের মতো কিংবদন্তিরা। বিরাট কোহলিকে ভারত পাচ্ছে না সেটা যে নিশ্চিত হয়ে ছিল আগে থেকেই। ৩৬ রানের লজ্জার পর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীর পাশে থাকতে চলে আসেন কোহলি। ওই টেস্টে চোট পান ভারতের অন্যতম সেরা পেসার মোহাম্মদ শামি। চোটে পড়েন উমশ যাদবও। তবুও রবীন্দ্র জাদেজার বীরত্বে দ্বিতীয় টেস্ট জিতে নিল ভারত। আশ্চর্য সেই ৩৬ রানের লজ্জার পর অস্ট্রেলিয়াকে আর জিততেই দিল না ভারত!
ম্যাচ জেতানো জাদেজা ছিটকে গেলেন তৃতীয় টেস্টের আগে। সঙ্গে যোগ হলো ফর্মে থাকা লোকেশ রাহুলের নাম। রবিচন্দ্রন অশ্বিন আর হানুমা বিহারী তৃতীয় টেস্টে বীর হলেন। হারের মুখ থেকে দলকে অবিশ্বাস্য এক ড্র এনে দেন দুজন। আশ্চর্য, এই দুজনও ছিটকে যান সেই ম্যাচের পর! চোটের মিছিলে যোগ হয় দলের সেরা বোলার জাসপ্রিত বুমরাহর নামও।
অর্থাৎ ব্রিসবেন টেস্টে একাদশে ৯ পরিবর্তন নিয়ে নামতে হয় ভারতকে। দেখা গেল সব টেস্ট খেলেছেন এমন খেলোয়াড় মাত্র দুজন- অধিনায়ক অজিঙ্কা রাহানে ও চেতেশ্বর পুজারা! বড়দের সঙ্গে থেকে শিখুক এমন লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়া ওয়াশিংটন সুন্দর, শার্দুল ঠাকুরের মতো ক্রিকেটারকে একাদশে নিতে হয়েছে ভারতকে। রঙিন পোশাকের ম্যাচ শেষে নটরাজনকে রেখে দেওয়া হয়েছিল নেট বোলিংয়ে সাহায্য করার জন্য। তাকেও ব্রিসবেন টেস্টে নামিয়ে দিতে হয়েছে।
সেই তারাই কিনা অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিল তাদেরই দূর্গে। ব্রিসবেন অস্ট্রেলিয়ার দূর্গেই পরিনত হয়েছিল। গত ৩২ বছর সেখানে অজিদের হারাতে পারেনি কেউ। ৩২ বছর আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তাদের স্বর্ণালী সময়ে ওই মাঠে হারাতে পেরেছিল অস্ট্রেলিয়াকে। আনকড়া একটা দল নিয়ে সেই দূর্গে অস্ট্রেলিয়ানদের হারিয়ে সিরিজ জিতে নিল ভারত, ভাবা যায়!
ভারতের বোর্ডার-গাভাস্কার ট্রফি জয়ের ঘটনাটি বিষয়টি শচীন টেন্ডুলকার উল্লেখ করেছেন এভাবে, ‘প্রতিটি সেশন নতুন নায়কের জন্ম দিয়েছে। প্রতিবার আমরা যখনই আঘাত পেয়েছি, নিজেদের সামলে উঠে দাঁড়িয়েছি। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলার চেষ্টা করেছি শেষ পর্যন্ত, দায়িত্বজ্ঞানহীনভাবে খেলিনি। প্রতিটি চোট ও অনিশ্চয়তার সঙ্গে লড়াই করেছি বুক চিতিয়ে, সাহসিকতার সঙ্গে। ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম টেস্ট সিরিজ জয়ের মধ্যে একটা অবশ্যই! অভিনন্দন ভারত।’
কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে হয়, ভারতের এই জয় থেকে নিশ্চয় সেই অনুপ্রেরণা খুঁজবে অন্যরা।
অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া-ভারত সিরিজ ২০২০ বিরাট কোহলি ভারতীয় ক্রিকেট