মুমিনুলদের সিরিজ বাঁচানোর চ্যালেঞ্জ
১০ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৮:৪১
দু’বছর আগে পূর্ণ শক্তির দল নিয়ে বাংলাদেশ এসে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। এবার অধিনায়ক, মূল দুই অলরাউন্ডার ও মূল তিন ব্যাটসম্যানকে ছাড়াই বাংলাদেশ সফরে এসেছেন ক্যারিবিয়ানরা। তবুও বাংলাদেশই কিনা হোয়াইটওয়াশের মুখে! চট্টগ্রামে বিস্ময়জাগনীয় এক জয় পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজ ঢাকায় আরেকটা জয় পেলেই মুমিনুল হকের দল হোয়াইটওয়াশড। ম্যাচ ড্র হলেও ১-০ ব্যবধানে সিরিজ হারতে হবে বাংলাদেশকে। সিরিজ হার ঠেকাতে জয়ের বিকল্প নেই। এই চ্যালেঞ্জ নিয়ে মিরপুরের শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ দল। সিরিজ নির্ধারনী ম্যাচটি শুরু হবে বৃহস্পতিবার (১১ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায়।
বাংলাদেশ টেস্ট জেতে কালেভদ্রে। টেস্টে চ্যাম্পিয়নশিপের ৪ ম্যাচ খেলেও এখনো পয়েন্টের খাতা খুলতে পারেনি টাইগাররা। টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের শুরুর দিকে ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের প্রত্যাশাও ততোটা ছিল না। কিন্তু ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন এমন একটা দল ঘোষণা করল তখন স্বাভাবিকভাবেই হোয়াইটওয়াশের পূনরাবৃত্তির প্রত্যাশা তৈরি হয়। মুমিনুল হকের দল সেই পথে ছিলও। ওয়ানডে সিরিজে ক্যারিবিয়ানদের রীতিমতো উড়িয়ে দিয়ে চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিন পর্যন্ত এগিয়ে ছিল বাংলাদেশ। চতুর্থ ইনিংসে সফরকারীদের ৩৯৫ রানের টার্গেট দেয় স্বাগতিকরা। অতীতে এশিয়ার মাটিতে এতো রান তাড়া করে জিতেনি কোনো দল। কিন্তু অভিষিক্ত কাইল মায়ার্সের অবিশ্বাস্য এক ডাবল সেঞ্চুরিতে সব লন্ডভন্ড হয়ে গেল। বাংলাদেশের জয়ের সম্ভবনাকে উড়িয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দেন মায়ার্স।
ঢাকা টেস্টের আগে বারবার চট্টগ্রাম টেস্টের আলোচনা আসছে স্বা্ভাবিকভাবেই। কারণ ওই ম্যাচের পর হঠাৎ-ই যে দৃশ্যাপট পাল্টে গেল! চট্টগ্রাম টেস্টের চতুর্থ দিন পর্যন্ত সিরিজে অনেকটা এগিয়ে বাংলাদেশকে ফেভারিট ভাবা হচ্ছিল। কিন্তু ঢাকা টেস্টের আগে অনেকেই বাংলাদেশকে ফেভারিট মানবেন না নিশ্চিত। চট্টগ্রামে শুধু একটা হার নয়, হারাতে হয়েছে অনেককিছু। কাইল মায়ার্স-এনক্রুমা বোনার বাংলাদেশের টগবগে আত্মবিশ্বাসে বড় ধাক্কা দিয়েছেন। দলের সেরা ক্রিকেটার সাকিব আল হাসান এবং গুরুত্বপূর্ণ পারফরমার ওপেনার সাদমান ইসলাম অনিককেও যে হারাতে হয়েছে চট্টগ্রাম টেস্টেই। চোট পাওয়া এই দুই ক্রিকেটার ঢাকা টেস্টে খেলতে পারছেন না তা নিশ্চিত। চোট ফেরৎ সাদমান চট্টগ্রাম টেস্টে দারুণ শুরু এনে দিয়েছিলেন। আর সাকিব আল হাসন বাংলাদেশের জন্য কতোটা গুরুপূর্ণ সেটা তো ওই চট্টগ্রাম টেস্টেও ভালো বুঝা গেল। বিশেষ করে বোলিংয়ে। হাতে ৩৯৫ রানের বিশাল লিড থাকলেও হার ঠেকাতে পারেননি তাইজুল ইসলাম, মেহেদি হাসান মিরাজ, নাঈম হাসানরা।
সাকিবকে হারানোর হতাশা কদিন ধরেই প্রকাশ করে আসছে বাংলাদেশ। আজ ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে অধিনায়ক মুমিনুল হক আরও ভালোভাবে উপস্থাপন করলেন হতাশাটা, ‘সাকিব ভাই যেহেতু নাই সেই কারণে হয়তো দুইটা প্লেয়ার আমাকে দলে নিতে হবে। সে হিসেবে আমাদের দুইটা খেলোয়াড় নতুন করে খেলবে। দুই জায়গায় হয়তো দুজন খেলোয়াড় খেলবে।’ আসলেই তো, সাকিবের ইনজুরি মানে দলের সেরা বোলারের সঙ্গে দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানকেও হারানো।
সাকিব-সাদমানের ইনজুরির পর সৌম্য সরকার ও মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে তোড়জোড় শুরু করতে দেখা গেল বাংলাদেশি কোচদের। হয়তো কাল থেকে এই দুজনের ঘাড়েই থাকবে সাকিব-সাদমানের শূন্যতা পূরণের দায়িত্ব। কতোটা পারবেন সময়ই বলে দিবে। মুমিনুল হক চট্টগ্রামের হার, ইনজুরির সমস্যা বা ওয়েস্ট ইন্ডিজের ঘুরে দাঁড়ানো- এসব নিয়ে ভাবতে চাইছেন না।
চট্টগ্রাম অতীত, ঢাকা টেস্টে এখন সব মনোযোগ, বাংলাদেশ অধিনায়ক সংবাদ সম্মেলনে যেন সেটাই বুঝাতে চাইলেন, ‘দেখেন কথায় আছে, অতীত যেটা চলে গেছে ওইটা নিয়ে চিন্তা না করাই ভালো। ওইখান থেকে যেগুলো ইতিবাচক জিনিস আছে সেগুলো নিয়ে সামনে এগোতে চাই। আল্লাহর রহমতে সবাই ইতিবাচক আছে। ইনশাআল্লাহ কালকে আমরা ইতিবাচক ফলাফল করতে চাই।’
চট্টগ্রামে দুর্দান্ত এক জয় পাওয়া ওয়েস্ট ইন্ডিজও নিশ্চয় সিরিজ জয়ের সুযোগ কাজে লাগাতে ঝাঁপিয়ে পড়তে চাইবে। কদিন ধরে ক্যারিবিয়ানরা সেই বার্তাই দিয়ে আসছেন। মিরপুরের পরিসংখ্যানও হয়তো আত্মবিশ্বাস বাড়াবে সফরকারীদের। শের-ই-বাংলায়ে এর আগে তিন টেস্ট খেলে দুটিতেই জিতেছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। সাফল্যের হার ৬৬.৬৬, যেখানে এই স্টেডিয়ামে টেস্টে বাংলাদেশের সাফল্যের হার ৩০ শতাংশ। ২০ টেস্ট খেলে জয় ৬টিতে।
বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ মুমিনুল হক সাকিব আল হাসান সাদমান ইসলাম অনীক