মানুষের ভালোবাসাই নাফিসের সবচেয়ে বড় পাওয়া
১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:১৬
ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক মিলে ২০ বছরের বছরের বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে অনেক কিছুই অর্জন করেছেন শাহরিয়ার নাফিস। দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে এক ক্যালেন্ডার বর্ষে ওয়ানডেতে এক হাজার রানের মাইলফলক ছুঁয়েছেন, প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে প্রথম শতক হাঁকানোর গৌরবান্বিত সাফল্যও তার ঝুঁলিতে, আছে পরাশক্তি অজিদের বিরুদ্ধে টেস্টে শতরানের সুখস্মৃতি এবং টি টোয়েন্টিতে দেশের প্রথম অধিনায়কত্বের স্বাদ। তবে দেশের মানুষের ভালোবাসার কাছে সব অর্জনই ম্লান! ক্যারিয়ার সায়াহ্নে অর্জনের খতিয়ান দেখে বললেন, এর চেয়ে বড় অর্জন আর হতেই পারে না।
বেশ কিছুদিন ধরেই দেশের ক্রিকেট পাড়ায় গুঞ্জন, ক্রিকেট ছেড়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের ক্রিকেট পরিচালানা বিভাগের ডেপুটি ম্যানেজার হিসেবে নতুন ক্যারিয়ার শুরু করতে যাচ্ছেন স্টাইলিশ এই ব্যাটসম্যান। অবশেষে সেই গুঞ্জনই সত্যি হল। শনিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) মিরপুর শের ই বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারে ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (কোয়াব) এর মাধ্যমে সব ধরণের ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেন শাহরিয়ার। বিদায় লগ্নে জানিয়ে গেলেন গোটা ক্যারিয়ারের অর্জনসহ অরো অনেক কিছুই।
সারাবাংলার পাঠকদের উদ্দেশ্যে তা তুলে ধরা হল-
আপনার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় পাওয়া কি?
নাফিস: আমার সবচেয়ে বড় পাওয়া বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা। আমি যদি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট আরেকটু বেশি খেলতাম হয়ত পরিসংখ্যান আরও ভালো হত। কিন্তু পরিসংখ্যান দিয়ে তৃপ্তি বিচার করি না। বাংলাদেশ মানুষ ও মিডিয়ার যে ভালোবাসা পেয়েছি এর চেয়ে বেশি ভালোবাসা পাওয়া একজন খেলোয়াড়ের জন্য সম্ভব না। আমার ক্যারিয়ার নিয়ে কোনো অতৃপ্তি নেই।
আজকে থেকে আপনি সাবেক ক্রিকেটার। এই অনুভূতিটা কেমন? ক্রিকেট আপনি অনেক প্যাশন নিয়ে খেলেছেন। বিশেষ করে ঘরোয়া ক্রিকেট। আজকে থেকে সেটা নেই। এই অনুভূতিটা কেমন?
নাফিস: একটু কঠিন। গতকাল থেকেই চিন্তাভাবনা করছিলাম। আমি খেলব না এটা তাতে খুব কষ্ট লাগছে না, তবে অনুভূতিটা অদ্ভুত জানি। থাকে না.. আমি একটা স্কুলে পড়লাম, স্কুল ছেড়ে দিচ্ছি- ওরকম অনুভূতি। খুবই অদ্ভুত। কিন্তু আমি সবসময় সব সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নিয়েছি, পরিস্কার করে। আমি চিন্তা করেছি যখন ক্রিকেটে একজন খেলোয়াড় হিসেবে আর অবদান রাখতে পারব না, তবে সবসময় বলেছি আমি ক্রিকেটের সাথেই থাকব। আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই সঠিক সময়। কারণ খেলে যতটুকু অবদান রাখতে পারব তার চেয়ে বেশি ক্রিকেটের সাথে করতে পারব পারব। এজন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া কঠিন হয়নি।
ক্যারিয়ার নিয়ে আপনার কোন আক্ষেপ আছে?
নাফিস: অহংকার করে বলছি না, আমি ধর্মপ্রাণ একজন মুসলমান। আমি ভাগ্যে বিশ্বাস করি। আমি বিশ্বাস করি আমার সেরা যেটা ছিল আল্লাহ তাই দিয়েছেন। তাই আমার কোনো অতৃপ্তি নেই।
যেভাবে বিদায় নিলেন এটা কেমন লাগল এবং কেমন হওয়া উচিৎ ছিল?
নাফিস: আমাদের চেয়েও বড় অনেক ক্রিকেটারের এই সৌভাগ্য হয়নি। বিসিবি ও কোয়াবকে ধন্যবাদ এরকম একটা আয়োজনের জন্য। যদি করোনা না থাকতো আমরা খেলে বিদায় নিতে পারতাম। তারপরও তারা আমাদের জন্য যতটুক করেছে আমরা কৃতজ্ঞ।
বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে কেমন কাজ করতে চান?
নাফিস:বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডে যুক্ত হতে চলেছি ইনশাআল্লাহ। যোগ দেওয়ার পর কাজের পরিধি, কতটুকু করতে পারব বা পারব না সেটা তখন বুঝব। এখন এ ব্যাপারে মন্তব্য করার সঠিক সময় নয়।
আপনার ক্রিকেটার হওয়ার পেছনে পরিবারের অবদান যদি বলতেন।
নাফিস: আমার যখন বয়স ১০ বছর, আমি ক্রিকেট খেলতে চেয়েছি এবং আমার আব্বা-আম্মা আমাকে সাপোর্ট করেছেন। তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। এটা তো শুরু… কিন্তু পুরো ক্যারিয়ারজুড়ে সবচেয়ে বড় অবদান আমার স্ত্রীর। কারণ আমি খুব অল্প বয়সে বিয়ে করে ফেলি। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরুর সাথে সাথে বিয়ে করেছিলাম। এরপর অনেক উত্থানপতন ছিল। খেলোয়াড়দের সফলতা অনেকে দেখে, ব্যর্থতা দেখে না। কিন্তু পরিবারের কষ্টটা কেউ দেখে না। কত কষ্ট করতে হয়, কত ত্যাগ স্বীকার করতে হয়। বিশটা বছর খেলেছি, এই বিশ বছরে একবারও টানা বিশ দিন বাসায় সময় দিতে পারিনি। পরিবারের অবদানেই এতদূর আসা সম্ভব।
ঢাকা টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং নিয়ে আপনার মন্তব্য কি?
নাফিস: আমরা সবাই একটু হতাশ। চট্টগ্রামের পর এই টেস্টে লড়াইয়ের আশা করেছিলাম। প্রত্যাশিত পারফরম্যান্স হয়নি।
লাল সবুজের জার্সিতে শাহরিয়ার নাফিস ২৪ টেস্টে ৪৮ ইনিংসে ২৬.৩৯ রান গড়ে সংগ্রহ করেছেন ১২৬৭ রান। সেঞ্চুরি ১টি ও ফিফটি ৪টি। একমাত্র সেঞ্চুরিটি এসেছিল ২০০৬ সালে, ফতুল্লায়, সফরকারি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। ব্রেট লি, জ্যাসন গিলেস্পি ও শেন ওয়ার্নদের অমন বারুদে বোলিংয়ের বিপক্ষেও খেলেছিলেন ১৩৮ রানের ঝলমলে এক ইনিংস।
আর ওয়ানডেতে ৭৫ ম্যাচে ৩১.৪৪ গড়ে নামের পাশে যোগ করেছেন ২২০১ রান। সেঞ্চুরি চারটি ও ফিফটি ১৩টি। প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে তিনিই প্রথম আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে সেঞ্চুরির দেখা পান (২০০৬ সালে, জয়পুরে, ১২৩ রান, প্রতিপক্ষ-জিম্বাবুয়ে)।
আর একমাত্র টি টোয়েন্টি থেকে সংগ্রহ করেছেন ২৫ রান।