ঘরের মাঠেও হোয়াইটওয়াশ বাংলাদেশ
১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ১৬:৫৬
ক্যালেন্ডারে আজকের ইংরেজি তারিখ ১৪ ফেব্রুয়ারি, আর বাংলা ১-ই ফাল্গুন। অর্থাৎ একই দিনে পহেলা ফাল্গুন এবং বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। ফাগুনের প্রথম দিনটি বাঙালিদের জন্য বিশেষ কিছু। ভালোবাসা দিবস নিয়েও কম মাতিমাতি হয় না ইদানিং। ফাগুনের সাজে সেজেছে বিনোদন কেন্দ্রগুলো। কর্মস্থল, বাসস্থান সব খানেই উৎসবের আমেজ। রাজধানীর যেদিকে চোখ যায় দেখা যাচ্ছে সব বয়সী নারী-পুরুষের উৎসবমুখর মুখ। এমন দিনে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বিষাদের ছায়া। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ঢাকা টেস্টে ১৭ রানে হেরেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। এই হারে ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ হলো মুমিনুল হক সৌরভের দল। চট্টগ্রামে সিরিজের প্রথম টেস্টে ৩ উইকেটে হেরেছিল স্বাগতিকরা।
টেস্টে বাংলাদেশে জয় আসে কালেভদ্রে। বিদেশের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ হওয়ার ঘটনা ঘটে হরহামেশাই। কিন্তু ২০১২ সালের পর থেকে দেশের মাটিতে টেস্টে হোয়াইটওয়াশ হয়েছিল না টাইগাররা। সর্বশেষ ২০১২ সালে এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই হোয়াইটওয়াশ হতে হয়েছিল। নয় বছর পর সেই দলটির বিপক্ষেই আরেকটি ধবলধোলাইয়ের লজ্জাই পড়তে হলো তামিম-মুশফিক-মুমিনুলদের।
আজ শেষ দিকে মেহেদি হাসান মিরাজ অবশ্য রোমাঞ্চ জমিয়ে তুলেছিলেন। নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে নাঈম হাসান ফিরে গেলে ‘টি-টোয়েন্টি’ খেলতে শুরু করে দিলেন মিরাজ। কিছু করারও ছিল না, দশম ব্যাটসম্যান আবু জায়ের রাহি কতক্ষণ উইকেটে থাকবে তা নিয়ে শঙ্কা। ফলে দ্রুত রান তোলার একটা ঝুঁকি নিতে চাইলেন মিরাজ। দশম উইকেটে মিরাজ-রাহি যখন ব্যাট করছিলেন বাংলাদেশের রানও তখন খুব বেশি লাগত না। একটা সময় সমীকরণ দাঁড়াল ১৮ রান করলেই বাংলাদেশ জয়ী। মিরাজ তখন ৩৬ রান করে অপরাজিত। জোমেল ওয়ারিকানের দারুণ এক টার্নে সেখানেই পরাস্ত হলেন তরুণ স্পিনিং অলরাউন্ডার। ২১৩ রানে থেমে যায় বাংলাদেশের দ্বিতীয় ইনিংস, নিশ্চিত হয় ১৭ রানের হার।
বাংলাদেশ দ্বিতীয় ইনিংসে দুর্দান্ত বোলিংই করেছে। বিশেষ করে মধাহ্ন বিরতির পর। মাত্র ২৯ বলের মধ্যে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দ্বিতীয় ইনিংসে ১১৭ রানেই গুটিয়ে দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসানরা। যাতে দুই ইনিংস মিলিয়ে বাংলাদেশের সামনে লিড দাঁড়ায় ২৩১। চতুর্থ ইনিংসে অতীতে এতো রান করে কখনোই জিতেনি বাংলাদেশ। তবুও ম্যাচ জিতে সমতা নিয়ে সিরিজ শেষ করার স্বপ্ন দেখছিলেন অনেকে। গতকাল তৃতীয় দিনের খেলা শেষে মেহেদি হাসান মিরাজ যে বললেন, লিডটা আড়াইশ-তিনশ’র মধ্যে থাকলে জয়ের সম্ভবনা ভালোভাবেই থাকবে বাংলাদেশের, সেখানে স্বাগতিকদের লিড ২৩১।
বাংলাদেশের শুরুটাও হয়েছিল দুর্দান্ত। চতুর্থ দিনের কঠিন উইকেট ও ক্যারিবিয়ানদের স্পিনারদের বিষধর সব টার্ন উপেক্ষা করে দ্বিতীয় ইনিংসেও শুরুতে ঝড় তুলেছিলেন তামিম ইকবাল। ১০.৩ ওভারে দলীয় পঞ্চাশ রান পূর্ন হয় বাংলাদেশের। সেখানে তামিম একাই করেছেন ৩৬। শেষ পর্যন্ত ৪৬ বলে ৫০ রান করে ফিরেছেন তামিম। তার ইনিংসে চার ৯টি। তামিম দলীয় ৭০ রানে ফেরার পর বাকিরা সেট হয়েও বড় ইনিংস না খেলার আক্ষেপে পুড়িয়েছেন।
সৌম্য সরকার, নাজমুল হোসেন শান্ত আবারও ব্যর্থ। সৌম্য ১৩ রান করে ফিরেছেন, শান্ত ১১। মুমিনুল হক, মুশফিকুর রহিম, লিটন দাসরা পরে আশা জাগিয়েছেন, আবার হতাশও করেছেন। সেট হয়ে বড় ইনিংস খেলতে পারেননি ব্যাটসম্যানরা, জুটি হয়নি বাংলাদেশের। ওপেনিংয়ে তামিম-সৌম্যর ৫৯ রানের জুটিই সেরা। দ্বিতীয় সেরা জুটি মুমিনুল-লিটনের ৩২। জয়ের স্বপ্ন সত্যি হয়নি সেই কারণেই। মুমিনুল হক করেছেন ২৮ রান, লিটন দাস ২২।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে রাকিম কর্নওয়াল ৪টি ও জোমেল ওয়ারিকান এবং পার্ট টাইম স্পিনার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট তিনটি করে উ্ইকেট নিয়েছেন।
এর আগে স্পিন বিষ ছড়িয়েছেন তাইজুল, নাঈমরাও। ৩ উইকেটে ৪১ রান নিয়ে চতুর্থ দিনের খেলা শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ প্রথম সেশনটা ভালোই কাটিয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় সেশনের শুরুর ভাগে ক্যারিবিয়ানদের নাজেহাল করেছেন তাইজুল-নাঈমরা। ৪১ রানে দিন শুরু করা ওয়েস্ট ইন্ডিজ অলআউট হয়েছে ১১৭ রানে। তাইজুল ৩৬ রানে নিয়েছেন চার উইকেট। ৩৪ রানে তিন উইকেট নিয়েছেন নাঈম হাসান।
সারাবাংলা/এসএইচএস/এসএস
চতুর্থ টেস্ট জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করছে ঢাকা টেস্ট দ্বিতীয় টেস্ট বাংলাদেশ বনাম ওয়েস্ট ইন্ডিজ