মাশরাফির সমর্থন পেলেন সাকিব
২৪ মার্চ ২০২১ ১৭:৩৪
ক্রিকেট বোর্ডের কর্তাদের নিয়ে সাকিব আল হাসানের মন্তব্যের জেরে দুদিন ধরে ক্রিকেটপাড়ায় বেশ শোরগোল। সাকিবকে এর মূল্য দিতে হয় কিনা সেই আলোচনাও হচ্ছে। এদিকে, এমন পরিস্থিতিতে সাকিব আল হাসানের পক্ষে কথা বলছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সফলতম অধিনায়ক মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা।
দেশের একটি অনলাইন সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে লাইভ আলোচনায় নিজের আইপিএল যাত্রা, এইচপি দল নিয়ে হতাশা এবং ভবিষ্যতে নিজের বোর্ড সভাপতি হওয়া প্রসঙ্গে বিভিন্ন কথা বলেছিলেন সাকিব। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আসন্ন টেস্ট সিরিজ না খেলে বোর্ডের কাছে আইপিএল খেলতে ছুটি চেয়েছিলেন সাকিব। বোর্ড সেই অনুমতি দিয়েছেও। তারপর বিসিবির ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির প্রধান আকরাম খান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, টেস্ট খেলতে চান না সাকিব। অপর এক বক্তব্যে বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেন, অনেক আগ থেকেই টেস্টের প্রতি অনিহা সাকিবের। লাইভ আলোচনায় সাকিব এমন বক্তব্যকে অসত্য বলে দাবি করেন।
সাকিব দাবি করেন, টেস্ট খেলতে না চাওয়ার কথা তিনি বলেননি। ভারতের মাটিতে যেহেতু আগামী টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, ফলে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ না খেলে একই সময়ে মাঠে গড়াতে যাওয়া আইপিএল খেললে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ভালো প্রস্তুতি হবে। সেই ভাবনা থেকেই তিনি আইপিএল খেলতে চাইছেন, আর বোর্ডকে সেটা জানিয়েছেনও।
শুধু তাই নয়, ‘আকরাম ভাই আমার চিঠি পড়েছেন কি না, আমি জানি না‘— এমন মন্তব্য করেছিলেন সাকিব। সাকিবের এমন কথা সহজভাবে নেয়নি বোর্ড।
এসব প্রসঙ্গে জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বলছেন, এখানে সমস্যাটা বোর্ডেরই। দেশের বেসরকারি টিভি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মাশরাফির ব্যাখ্যা, ‘আপনি ভাবুন, এই জিনিসটা এত বড় হলো কেন? কারণ আমরা এটা নিয়ে টানা-হ্যাচড়া করছি। সাকিব বারবার কেন এসব বলছে, সেটা আগে বের করতে হবে। বোর্ডও কেন বারবার সাকিবের প্রতিপক্ষ হয়ে যাচ্ছে? দেখেন, সাকিব চিঠি দিয়েছে বোর্ডকে, সেটা এখন বাইরে কেন? আপনারা তাকে ছেড়ে (আইপিএল খেলতে) দেবেন, পরে আবার মিডিয়ায় এসে বলবেন খেলতে চায় না— এটা কেন? এটা বোর্ডের ব্যর্থতা। বারবারই যেটা হচ্ছে, আগেই মিডিয়ায় (ডক্যুমেন্ট) আসছে, সবাই জেনে যাচ্ছে। ক্রিকেটাররা তো তাহলে নিরাপদ বোধ করবে না।’
‘ক্রিকেট বোর্ড হচ্ছে প্লেয়ারদের জন্য আস্থা, ভরসার জায়গা। বাইরের দেশেও দেখুন, প্লেয়াররা যতই অন্যায় করুক, বোর্ডের কেউ কিন্তু মিডিয়ার সামনে এসে হুটহাট করে কিছু বলে না। আপনি কী বলছেন, কোথায় বলছেন— এটা বুঝতে হবে। আপনি একজন খেলোয়াড়কে মানসিকভাবে ব্রেকডাউন করে দিচ্ছেন কি না, এটা তো বোর্ডকে দেখতে হবে। এটা বোর্ডের দায়িত্ব। একজন খেলোয়াড়কে আপনি ব্রেকডাউন করতে পারেন না। কারণ ওই খেলোয়াড়টাই জাতীয় দলের প্রতিনিধিত্ব করবে,’— বলেন মাশরাফি।
তিনি আরও বলেন, ‘খেলোয়াড়দের কোনো বিষয়ে বোর্ড পাঁচটা কথা বলবে। কিন্তু সেটা তো একটা জায়গায় বলবে, ড্রেসিংরুমে বলবে। কিন্তু আপনি এখানে বলছেন, আবার বাইরে গিয়েও বলছেন— সেটা তো ভুল। খেলোয়াড়রা নিরাপদ বোধ করছে না। এই যে যোগাযোগের ঘাটতি, এখানেই সমস্যা। খেলোয়াড়রা বুঝতে পারছে তার যে আস্থার সর্বোচ্চ জায়গা, সেটাই নড়বড়ে, কিংবা এখন থেকেই কথা বাইরে যাচ্ছে বা আমাকে নিরাপত্তা দেওয়ার মতো কেউ নেই।’
সাকিব তার সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ভবিষ্যতে বোর্ড সভাপতি হতে চান তিনি এবং সে সুযোগ পেলে তার চেয়ে ভালো কাজ কেউ করতে পারবে না। মাশরাফি এই কথাতে সমস্যা দেখছেন না। এসব ছোট বিষয় নিয়ে কেন সাকিবের মতো একজন ক্রিকেটারকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে, সেটাই বরং উল্টো প্রশ্ন মাশরাফির।
এ প্রসঙ্গে ম্যাশের বক্তব্য, ‘যদি আল্লাহ ওর (সাকিব) কপালে লিখে রাখেন যে ও বোর্ড সভাপতি হবে, ওর অত্মবিশ্বাস আছে যে সে সবার সেরা হবে— এটাতে সমস্যা কোথায়? সেটা নিয়ে এখনই কেন… আপনি কি জানেন না সাকিবের এখনো চার-পাঁচ বছর ক্রিকেট পড়ে আছে? বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সাকিবের এখনো কত কী দেওয়ার আছে…!’
বিসিবির এইচপি দল নিয়েও প্রশ্ন তুলেছিলেন সাকিব। এইচপি থেকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্রিকেটাদের বের না হওয়া এবং ব্যাকআপ ক্রিকেটার তৈরি না হওয়া নিয়ে আক্ষেপের কথা বলেছিলেন। বিষয়টি সহজভাবে নেননি এইচপি ইউনিট প্রধান সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয়। এ প্রসঙ্গে মাশরাফি বলেন, ‘আমার মনে হয় না ও (সাকিব) দুর্জয় ভাইকে আক্রমণ করে কথাটা বলেছে। ও দেখেছে হয়তো যে এইচপিতে কী হচ্ছে বা ‘এ’ দল নেই। এই প্রক্রিয়াটার কথা হয়তো ও বলতে চেয়েছে।’
বাংলাদেশ ও নিউজিল্যান্ডের মধ্যকার চলমান সিরিজটি বাংলাদেশের দর্শকদের জন্য সরাসরি সম্প্রচার করছে জিটিভি এবং দেশের বহুল পরিচিত অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র্যাবিটহোল। ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজের সবগুলো ম্যাচ র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইটের সঙ্গে সঙ্গে দেখা যাচ্ছে ইউটিউবেও। র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইট www.rabbitholebd.com এবং ইউটিউব চ্যানেলেও প্রত্যেকটি ম্যাচ দেখা যাচ্ছে বিনামূল্যেই।