জয়ে সিরিজ শুরু বাংলাদেশের
২৩ মে ২০২১ ২১:২১
হারতে হচ্ছে বাংলাদেশকে? প্রশ্নটা ঘুরপাক খাচ্ছিল বারবার। মেহেদি হাসান মিরাজের দারুণ বোলিংয়ে শুরুতে বিপদে পড়া শ্রীলংকা হাসারাঙ্গা ডি সিলভার ব্যাটে যে হঠাৎ-ই গর্জে ওঠল! একটা সময় জয়ের জন্য শ্রীলংকার প্রয়োজন ছিল ৪২ বলে ৫৩ রান। হাসারাঙ্গা তখন ৭০ রানে অপরাজিত। আধুনিক ওয়ানডেতে এমন সমীকরণ থেকে ম্যাচ জেতা কঠিন নয়। তবে গর্জে ওঠা হাসারাঙ্গাকে সেখনেই থামিয়ে বাংলাদেশই প্রত্যাশিত জয়টা পেয়েছে।
রোববার (২৩ মে) মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের প্রথমটিতে শ্রীলংকাকে ৩৩ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০তে এগিয়ে গেল তামিম ইকবালের দল।
বাংলাদেশের বোলিংয়ের শুরুটা হয়েছিল দারুণ। নেতৃত্ব দিয়েছেন আইসিসি ওয়ানডে বোলিং র ্যাংকিংয়ে পাঁচ নম্বরে থাকা মেহেদি হাসান মিরাজ। শ্রীলংকার ৩০ রানের ওপেনিং জুটির পর প্রথম আঘাত হানেন মিরাজ। বোলারের পাশ দিয়ে খেলে সিঙ্গেল নিতে চাওয়া ধানুশকা গুনাথিলাকা ক্যাচ তুলে দেন বোলার মিরাজের হাতেই। একটু পর মোস্তাফিজুর রহমানকে পুল করতে গিয়ে ব্যর্থ হন পাথুম নিশাঙ্কা। ব্যাটে-বলে না করতে পেরে আফিফ হোসেনের হাতে ক্যাচ তুলে দেন তিনি।
এরপর কুশল মেন্ডিজকে সাথে নিয়ে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন অধিনায়ক কুশল পেরেরা। সাকিব আল হাসান বড় হতে দেননি এই জুটিকে। কুশল মেন্ডিসকে ফিরিয়ে দ্বিতীয় বাংলাদেশি বোলার হিসেবে স্বীকৃত ক্রিকেটে ১ হাজার রানের মাইলফলক স্পর্শ করেছেন সাকিব। এরপর আট রানের ব্যবধানে কুশল পেরেরা (৩০), ধনঞ্জয়া ডি সিলভা (৯) ও আসেন বান্দারকে (৩) ফিরিয়ে শ্রীলংকার কোমড় ভেঙে দেন মিরাজ। তিনজনকেই বোল্ড করেছেন ডানহাতি স্পিনার।
শ্রীলংকার দলীয় ১৪৯ রানের মাথায় মোহাম্মদ সাইফুদ্দিন যখন দাশুন শানাকাকে বোল্ড করলেন তখন মনে হচ্ছিল এই বুঝি ম্যাচ শেষ হলো। শানাকা আউট হওয়ার মধ্যমে শ্রীলংকা হারায় যে সপ্তম উইকেট। কিন্তু লংকানদের সবচেয়ে বড় প্রতিরোধটা দেখা গেল তারপরই।
পেসার ইসুরু উদানাকে নিয়ে অষ্টম উইকেট জুটিতে রীতিমতো ঝড় তুললেন হাসারাঙ্গা। অষ্টম উইকেটে ৫৯ বলে ৬২ রান তোলেন দুজন। শেষ দিকে ম্যাচ বেশ জমে উঠে। মোস্তাফিজুর রহমান হালকা চোট নিয়ে মাঠের বাইরে ছিলেন বলে বাংলাদেশের শঙ্কাটা আরও বাড়ছিল। সেই মোস্তাফিজই মাঠে ফিরে শ্রীলংকার লেজ গুটিয়েছেন।
আসল কাজটা করেছেন অবশ্য মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন। দলীয় ২১১ রানের মাথায় হাসারাঙ্গাকে আফিফ হোসেনের ক্যাচ বানিয়ে ম্যাচটা বাংলাদেশের দিকে হেলে নিয়ে আসেনি তিনি। পরের উদানা ও চামেরাকে ফিরিয়েছেন মোস্তাফিজ। হাসারাঙ্গা ৬০ বলে ৩টি চার ৫টি ছক্কায় ৭৪ রান করেছেন। উদানা ২৩ বলে ২১ রান করেন। ৪৮.১ ওভারে ২২৪ রানে অলআউট হয়েছে শ্রীলংকা।
বাংলাদেশের সফল বোলার মিরাজ। ১০ ওভারে ৩০ রান খরচায় ৪ উইকেট নিয়েছেন তিনি। ৯ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে তিন উইকেট নিয়েছেন মোস্তাফিজ। দুই উইকেট পেয়েছেন সাইফউদ্দিন, অন্য উইকেটটি সাকিবের।
এর আগে টস জিতে ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ভালো হয়নি। প্রথম দশ ওভারে লিটন দাসকে হারিয়ে মাত্র ৪০ রান তুলতে পেরেছে বাংলাদেশ। তিনে নেমে সাকিব আল হাসান সফল হতে পারেননি। দলীয় ৪৩ রানের মাথায় ৩৪ বলে ১৫ রান করে আউট হয়েছেন। তারপর মুশফিকুর রহিম ক্রিজে এলে সেখান থেকে বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানো শুরু।
তৃতীয় উইকেটে তামিম-মুশফিক ৫৬ রান তুলে প্রাথমিক ধাক্কাটা কাটিয়ে তোলেন। তবে দলীয় ৯৯ রানের মাথায় তামিম এবং পাঁচে নামা মোহাম্মদ মিঠুন ফিরে গেলে ফের বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। মিঠুন রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে জান। তামিম ৭০ বলে ৬টি চার ১টি ছক্কায় করেন ৫২ রান।
বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটিটা হয়েছে এরপরই। বিপদের মধ্য থেকে পঞ্চম উইকেটে ১০৯ রান যোগ করেন মাহমুদউল্লাহ-মুশফিক। মুশফিকের সেঞ্চুরি না পাওয়াটা শেষ পর্যন্ত আক্ষেপ হয়ে থাকবে। লাকসাম সান্দাকানকে স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ইসুরো উদানার হাতে ক্যাচ দিলেন ব্যাক্তিগত ৮৪ রানের মাথায়। তার ৮৭ বলের ইনিংসটিতে চারের মার ৪টি, ছক্কা ১টি।
মাহমুদউল্লাহ ৭৬ বলে ২টি চার ১টি ছয়ে ৫৪ রান করেন। এরপর শেষ দিকে তরুণ আফিফ হোসেন ধ্রুব ও পেস বোলিং অলরাউন্ডার সাইফউদ্দিন দারুণ একটা জুটি গড়ে দলকে আড়াইশর ওপরে নিয়েছে। আফিফ ২২ বল খেলে ৩টি চারে করেছেন ২৭ রান। সাইফউদ্দিন ৯ বলে করেছেন ১৯। শ্রীলংকার হয়ে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ৪৫ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট।
তামিম ইকবাল বাংলাদেশ-শ্রীলংকা সিরিজ মেহেদি হাসান মিরাজ সাকিব আল হাসান