লন্ডনে বইছে আনন্দের ঢেউ
৩০ মে ২০২১ ১৮:০৭
মহামারী করোনাভাইরাসে পুরো বিশ্বই ক্ষতবিক্ষত। তবে করোনার শুরুর দিকে সবচেয়ে বেশি লণ্ডভণ্ড হতে হয়েছে ইংলিশদের। করোনার প্রথম ঢেউয়ে সবার আগে কেঁপেছেন বৃটিশরা। সময়ের পালাবদলে ইংল্যান্ডের করোনা পরিস্থিতি এখন অনেকটাই নিয়ন্ত্রিত। মাঠে ফুটবল ফিরেছে অনেক আগেই। সেই ফুটবলেই নতুন এক আনন্দের সন্ধান পেলেন ইংলিশরা। এই আনন্দ লন্ডন কেন্দ্রীক। ইংল্যান্ডেরই আরেক দল ম্যানচেস্টার সিটিকে হারিয়ে ক্লাব ফুটবলের সবচেয়ে মর্যাদার টুর্নামেন্ট উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শিরোপা জিতেছে লন্ডনের ক্লাব চেলসি।
রোববার (২৯ মে) রাতে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনাল ম্যাচটা অনুষ্ঠিত হয়েছে পর্তুগালের পোর্তোতে। কিন্তু রাত থেকেই মূল আনন্দটা হচ্ছে লন্ডনে। করোনাকালের মধ্যে ক’জনই আর ফাইনাল দেখতে পর্তুগালের বিমান ধরতে পেরেছেন! লন্ডনে চেলসির ঘরের মাঠ স্ট্যামফোর্ড ব্রিজে বড় পর্দায় খেলা দেখার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। সমর্থকরা জড়ো হয়েছিলেন স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের সামনে। একই ঘটনা ঘটেছিল অবশ্য ম্যানচেস্টারের ইতিহাদেও। শিরোপা উল্লাসে মেতে উঠার ভাগ্য হয়নি ম্যানচেস্টার সিটির সমর্থকদের।
ম্যাচের ৪২ মিনিটে কাই হাভার্টজের একমাত্র গোলে ম্যানসিটিকে ১-০ গোলে হারিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করেছে চেলসি। সেই থেকেই আনন্দ উল্লাস শুরু হয়েছে লন্ডনে, এখনো চলছেই। বিভিন্ন ব্যানার, প্ল্যাকার্ড হাতে রাস্তায় নেমেছেন লন্ডনবাসি, আকাশে জলছে আতশবাজি। করোনা দুঃস্বপ্নের মধ্যে এ যেন স্বস্তির আনন্দ।
এদিকে, চেলসির দ্বিতীয়বার চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতার কারিগররা ভাসছেন বন্দনায়। কাল রাতে চেলসির হয়ে স্বপ্নময় ফুটবল খেলেছেন ফ্রান্সের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার এনগোলো কান্তে। প্রতিপক্ষ আক্রমণে উঠলে পুরোপুরি ডিফেন্ডার হয়েছেন কান্তে, আবার দল আক্রমণে উঠলে চলে গেছেন প্রতিপক্ষের অর্ধে। মাঝমাঠ থেকে অনবরত বলের জোগান দিয়েছেন আক্রমণভাগের ফুটবলারদের। মাঠে বল যেখানে ছিল কান্তেও যেন কাল সেখানেই ছিলেন।
২০১৫–১৬ মৌসুমে লেস্টার সিটির প্রিমিয়ার লিগ জয়ে বড় অবদান ছিল তার। তারপর চেলসিতে এসে আরও উন্নতি করেছেন। কাল ম্যাচের পর কান্তেকে বর্তমান বিশ্বের সেটা মিডফিল্ডারই বলছেন অনেকে। কান্তের সতীর্থ সিজার আজপিলিকেতা বলেছেন, ‘আমি সরাসরি বলতে চাই, সে বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার। মাঠে সে সবকিছু করে। আজ (গতকাল) সে যে কতবার বল কেড়ে নিয়েছে তার হিসাব নেই! যেভাবে সে বল সামনে নিয়ে যায় তাতে মাঠের অনেকটাই কভার হয়ে যায়। তাকে দলে পাওয়াটা বিশেষ ব্যাপার।’
চেলসিতে খেলা মিডফিল্ডারদের মধ্যে অন্যতম সেরা ভাবা হয় রামিরেসকে। সাবেক এই ব্রাজিলিয়ানও প্রসংশায় ভাসিয়েছেন কান্তেকে, ‘ব্যালন ডি’অর তার প্রাপ্য। সে যদি ২০২০ ইউরো জেতে তাহলে আমি বলব ব্যালন ডি’অর সে–ই পাবে।’
ফেভারিট তকমার বাইরে থেকে চেলসিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জেতানো কোচ টমাস টুখেল ইতিহাস গরার পর বলছিলেন, ‘উচ্চাভিলাষী এই ক্লাবের অংশ হতে পেরে আমি সত্যিই খুব খুশি। তাই আরও জয় পেতে চাই। আমি চাই পরের মৌসুমের প্রথম ম্যাচ থেকেই আমার দল তাদের সেরা খেলাটা খেলুক।’
আগের মৌসুমে পিএসজিকে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে তুলেছিলেন টুখেল। কিন্তু শিরোপা না জেতার ‘অপরাধে’ বরখাস্ত হয়েছিলেন। সেই টুখেল স্বল্প সময়ের চুক্তিতে চেলসিতে এসে শিরোপা জেতালেন। জার্মান এই কোচকে নিশ্চয় ছাড়তে চাইবে না চেলসি। ম্যাচ শেষে টুখেল নিজেই দিলেন সেই আভাস, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত নই। তবে সম্ভবত আমি নতুন চুক্তি পেতে যাচ্ছি। আমার ম্যানেজার আমাকে সে রকমই বলেছে। কিন্তু আমি এ বিষয়ে এখনো কিছু জানি না। দেখি কী হয়।’
ম্যাচের ৪২ মিনিটে করা কাই হাভার্টজের একমাত্র গোলটিই চেলসির শিরোপা নিশ্চিত করেছে। গোলদাতার নাম হাভার্টজ হলেও এই গোলের কারিগর মেসন মাউন্ট। দুর্দান্ত এক পাসে ম্যানচেস্টার সিটির রক্ষণকে ফাঁকি দিয়ে হাভার্টজের কাছে যে বলটি তিনিই পাঠিয়েছিলেন।
ম্যাচ শেষে স্বপ্ন সত্যি হওয়ার গল্প বলছিলেন ছোট বেলা থেকে চেলসির সমর্থক এই তরুণ ফুটবলার, ‘এই অভিজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করার মতো নয়। এই মুহূর্তে আমরা বিশ্বের সেরা ক্লাব। এই গৌরব কেউ আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নিতে পারবে না। এটা অবিশ্বাস্য। একটু আগে আমার বাবা স্ট্যান্ড থেকে নেমে এলেন, তাঁকে দেখে কান্না আটকে রাখতে পারিনি। পরিবারকে ধন্যবাদ জানাই, সবকিছুর জন্য।’
লন্ডনে কান্তে, টুখেল, হাভার্টজদের নিয়ে উল্লাস চলছে, চলবে হয়তো আরও কয়েকদিন। অর্জনটা যে ছোট নয়।