Sunday 08 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইউরো ২০২০: ডাচদের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা


৯ জুন ২০২১ ২০:৩২

ক্লাব ফুটবলের মৌসুম শেষ হলো কিছুদিন আগে। করোনাভাইরাসের কারণে গত দুই মৌসুম ধরেই ঘনঘন ম্যাচ খেলতে হচ্ছে ফুটবলারদের। মৌসুম শেষে তাই নিশ্চয় ক্লান্ত ফুটবলাররা। এর মধ্যেই একদিকে শুরু হচ্ছে কোপা আমেরিকা অন্য দিকে ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। ক্লান্তি নিয়ে ফুটবলের জনপ্রিয় এই দুই টুর্নামেন্টে ফুটবলাররা কেমন খেলেন সেটাই দেখার।

সবকিছু ঠিক থাকলে ২৪টি দল নিয়ে ইউরো শুরু হবে ১১ জুন, শেষ হবে ১১ জুলাই। কারা জিতবে এবারের ইউরো? ফাইনালের আগে এটি শত কোটি টাকার প্রশ্ন! এবারের ইউরো চ্যাম্পিয়ন দল প্রাইমমানি পাবে ১ কোটি ইউরো। টাকার অঙ্কে ১ কোটি ইউরো প্রায় ১০০ কোটি টাকা। ফলে প্রশ্নটাকে ১০০ কোটির টাকার বলাই যায়। দামি প্রশ্নটা টুর্নামেন্টের ফাইনালের দিনের জন্যই তোলা থাক। তার আগে চলুন, গ্রুপ ভিত্তিতে ইউরোর দলগুলোর খুঁটিনাটি জেনে নেই-

আজকের আলোচনা গ্রুপ ‘সি’। এই গ্রুপে ‘টোটাল ফুটবল’ নেদারল্যান্ডের সঙ্গী ইউক্রেন, অস্ট্রিয়া ও উত্তর মেসিডোনিয়া। ডাচরাই নিশ্বন্দেহে ‘সি’ গ্রুপের ফেভারিট। তবে ইউক্রেন, অস্ট্রিয়াও চ্যালেঞ্জ জানাতে প্রস্তুত। উত্তর মেসিডোনিয়া যে অঘটন ঘটাতে ওৎ পেতে থাকবে বাছাই পর্বের সেটা ভালোভাবে বুঝিয়ে দিয়েছে দলটি।

নেদারল্যান্ডস

গত সাত বছর আন্তর্জাতিক কোনো টুর্নামেন্ট খেলার সুযোগ পায়নি নেদারল্যান্ড। ২০১৬ সালের ইউরো ও ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে বাছাই পর্বই পেরুতে পারেননি ডাচরা। নেদারল্যান্ডস ফুটবলের জন্য এটা নিশ্চয় বড় লজ্জার। তবে রোনাল্ড কোমান দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই গুছিয়ে উঠেছে নেদারল্যান্ডস। কোমানকে অবশ্য বার্সেলোনা ছোঁ মেরে নিয়ে এসেছে। তার জায়গায় কোচের চেয়ারে বসে ফ্রাঙ্ক ডি বোর এগিয়ে নিচ্ছেন নেদারল্যান্ডসকে। কোমানের পাওয়া সাফল্যের পথ ধরে এগিয়েই ডাচদের ইউরো খেলা নিশ্চিত করেছেন ডি বোর।

চোটের কারণে বর্তমান বিশ্বের অন্যতম সেরা ডিফেন্ডার ভার্জিল ফন ডাইককে ইউরোতে পাচ্ছে না নেদারল্যান্ডস। মূল গোলরক্ষক ইয়াসপার চিলেসেনও থাকছেন না। এই দুই অভিজ্ঞর না থাকাটা চিন্তার কারণ ডাচদের। একদম নিচ থেকে আক্রমণ গড়ার যে রীতি নেদারল্যান্ডসের ফন ডাইক ও চিলেসেন না থাকাতে তাতে ব্যাঘাত ঘটবে। কোমানের অনুপস্থিতিও বিপদের সময় হয়তো ভোগাবে ডাচদের। তবে দুর্দান্ত কিছু প্রতিভাবান ফুটবলারের উপস্থিতি স্বপ্ন দেখাচ্ছে দলটির সমর্থকদের। ডি লিখট, উইনদাল, ডি ইয়ং, কুপমাইনার্স, গ্রাভেনবার্চ, মালেনদের মতো দুর্দান্ত তরুণদের সঙ্গে ডিপাই, ডি ভ্রেই, ডে রুনদের মতো অভিজ্ঞরাও আছেন দলে। তরুণ-অভিজ্ঞদের বিশেলে দলটা বেশ গোছালোও।

নিশ্চয় গ্রুপ সেরা হয়েই পরবর্তী রাউন্ডে যেতে চাইবে নেদারল্যান্ডস। তবে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নও নিশ্চয় দেখছেন না ডাচরা। কোচ ডি বোর আগেই বলে দিয়েছেন, ‘সাত থেকে আটটি দলের ইউরো জেতার সামর্থ্য আছে এবার। আমরা যদি সেমিফাইনালে উঠতে পারি, আমি সেটাকেই বেশ ভালো ফলাফল হিসেবে মনে করব।’

ইউক্রেন

ইউরোর আগে হঠাৎ-ই যেন ভালো খেলতে শুরু করেছে ইউক্রেন! হঠাৎ ঘুড়ে দাঁড়ানো দলটি বাছাই পর্বে ছিল অসাধারণ। বাছাই পর্বের ‘বি’ গ্রুপে ইউক্রেন ছিল শীর্ষে। পুরো বাছাই পর্ব মিলিয়ে মাত্র চারটি গোল হজম করে রক্ষণ দৃঢতার জানান দিয়েছে দলটি। আক্রমণভাগের ফুটবলাররাও আছেন ফর্মে। ম্যানচেস্টার সিটির হয়ে প্রিমিয়ার লিগ জেতা মিডফিল্ডার ওলেক্সান্দার জিনচেঙ্কো আছেন দারুণ ছন্দে। তার নেতৃত্বে এই মাঝমাঠটাই ইউক্রেনের বড় শক্তির জায়গা।

মাঠে জিনচেঙ্কো ও রুজলান মালিনোভস্কির রসায়নটা জমলে যে কোনো প্রতিপক্ষকে বিপদে ফেলতে পারবে ইউক্রেন। ২৮ বছর বয়সী মালিনোভস্কি চতুর মুভমেন্ট, জোড়ালো শট ও নিখুঁত সেট পিসে বেশ ভয়ঙ্কর। তবে গোলবারের নিচে হয়তো বাড়তি মনোযোগ দিতে হবে দলটিকে। গোলরক্ষক আন্দ্রে পিয়েতোভের বয়স ৩৬ ছাড়িয়ে গেছে। সম্ভবত ক্যারিয়ারের শেষ ইউরো খেলতে যাচ্ছেন। ‘বয়স্ক’ পিয়েতোভের ইদানিং ভুল করছেন বারবার। তবে শেষ ইউরোতে নিজের একটা ছাপ রেখে যাওয়ার চেষ্টাও যে তিনি করবেন সেটা বলাই যায়। সব মিলিয়ে নেদারল্যান্ডসের সঙ্গে ‘সি’ গ্রুপ পেরুনোর বড় দাবিদান ইউক্রেন।

অস্ট্রিয়া

ইউরোর মতো একটা টুর্নামেন্টের জন্য নিশ্চয় অপেক্ষায় আছে অস্ট্রিয়া। অস্ট্রিয়ার এই দলটাকে বলা হচ্ছে দশক সেরা। মার্সেল সাবিৎজার, মার্টিন হিন্টেরেগার, স্টেফান লেইনার, কনরাড লেইমার, জাভের শুলাগের, ডেভিড আলাবাদের মতো একঝাক তারকা ফুটবলারদের নিয়ে গড়া অস্ট্রিয়ার দলটা। অতীতে কখনো ইউরোর গ্রুপ পর্ব পেরুতে পারেনি দলটি। এবার ‘সেরা দল’ নিয়ে সেই বাঁধা পেরুতে মরিয়া দলটি। ডেভিড আলবা অস্ট্রিয়া দলের নিউক্লিয়াস। বিশ্বের যে কয়েকজন তারকা ফুটবলার তিন পজিশনেই খেলে অভ্যস্ত আলবা তাদের একজন। বায়ার্ন মিউনিখের হয়ে দুর্দান্ত একটা মৌসুম কাটিয়েছেন অস্ট্রিয়ান তারকা। নিশ্চয় ইউরোর বড় মঞ্চে উজাড় করে দিতে চাইবেন নিজেকে।

মাঠের লড়াইয়ে স্ট্রাইকার সংকট ভোগাতে পারে দলটিকে। স্টুটগার্টের হয়ে ৩০ ম্যাচে ১৫ গোল করা কালঅদজিচ মোটামুটি ফর্মে আছেন। তবে বাকিরা অনেকদিন লড়াই করছেন গোল পেতে। তবে মিডফিল্ডার, ডিফেন্ডাররা গোলদাতার খাতায় নাম লিখিয়ে এই দুর্বলতা ভালোভাবেই কাটিয়ে তুলছিলেন গ্রুপ পর্বে। অস্ট্রিয়া শেষ ষোলোর স্বপ্ন দেখতেই পারে।

উত্তর মেসিডোনিয়া

উত্তর মেসিডোনিয়ার জন্য এবারের ইউরো স্বপ্ন পূরণের মতো। এই প্রথম কোনো বড় টুর্নামেন্টে খেলতে যাচ্ছে দলটি। কাগজে কলমে গ্রুপের সবচেয়ে দুর্বল দল, তবে উত্তর মেসিডোনিয়া নিশ্চয় অঘটন ঘটানোর অপেক্ষায় থাকবে। গত এপ্রিলে জার্মানিকে হারিয়ে এই কাজের পারদর্শীতাও দেখিয়েছে দলটি।

কৌশলগত প্রতিভাবান কয়েকজন মিডফিল্ডার আছেন উত্তর মেসিডোনিয়ায়। আক্রমণে পান্দেভ ও আলেক্সান্দার ত্রাজকোভস্কির মতো ফিনিশারও মজুত। আলাদা নজর থাকবে গোরান পান্দেভের ওপর। তবে রক্ষণ দুর্বলতা বেশি ভোগাতে পারে দলটিকে। গত এক বছরে ৯০ মিনিট প্রতি ১.২৫ গোল হমক করেছে উত্তর মেসিডোনিয়া। ইউরোতে রক্ষণ দুর্বলতা কাটিয়ে উঠতে পারলে দারুণ কিছুর সুযোগ থাকছে দলটির।


বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ
সম্পর্কিত খবর