Saturday 28 September 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

আর অপমানিত হতে চান না আম্পায়ার মনিরুজ্জামান


২৭ জুন ২০২১ ১৬:০৪

আম্পায়ারি জীবনে বিস্তর অপমান সয়েছেন মনিরুজ্জামান টিংকু। কিন্তু আর নয়। আপাতত তাই এখানেই এই পেশার যবনিকা টানবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নন্দিত এই আম্পায়ার। ফেসবুক পোস্টে ইতোমধ্যেই আপতকালিন সময়ের নিজের বিদায়ের কথা জানিয়েছেন। কিন্তু সেদিন খুব দূরে নয়, যেদিন আনুষ্ঠানিকভাবে প্রিয় পেশাকে আজীবনের জন্য বিদায় জানিয়ে দিবেন!

তবে বিষয়টি এমন নয় যে নিজ কর্মে অপমানিত হয়ে আম্পায়ারিংকে বিদায় জানাতে মনোস্থির করেছেন মনির। বরং পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিংকে সব সময়েই অজুত মাইল দূরে ঠেলে রেখেছেন। তার সততা ও নিষ্ঠাকে সবসময়ই কুর্ণিশ করেছে পক্ষপাতদুষ্ঠ আম্পায়ারিং। কিন্তু তার ভেতরটা তখনই পুরে খাঁক হয়ে যায়, অপমানের ক্লেশে ভরে উঠে যখন কেউ তার পেশার অন্য কাউকে গালি দেয়, দুর্নীতিপরায়ন আম্পায়ার বলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দুয়ো ধ্বণি তোলে ও তাদের প্রতি অঙ্গুলি তুলে বলে ওই যে ওই লোকটা একটা দুর্নীতীপরায়ন আম্পায়ার!

বিজ্ঞাপন

হ্যাঁ তিনি মানছেন, ঢাকাই ক্রিকেটে বিশেষ বিশেষ ক্লাবকে সুবিধা পাইয়ে দিতে আম্পায়াররা পক্ষপাতমুলক আম্পায়ারিং করে থাকেন। তাই বলে সবাই তো আর নয়। এক দুজনের দায়ে ঢালাওভাবে সবাইকে এই কাঠগড়ায় দাঁড় করানোয় তার জোর আপত্তি। কিন্তু কে তার আপত্তিতে কান দেয়? সঙ্গত কারণেই তিনি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আর নয়…।

তার এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সম্প্রতি জ্বালানি যুগিয়েছে ‘সাকিব কান্ড’। মনিরুজ্জামান ভাবতেই পারছেন না কী করে সাকিব আল হাসানের মত এমন নন্দিত এক তারকা ওভাবে আম্পায়ারের সামনে পা তুলতে পারেন, স্ট্যাম্পে লাথি মারেন, কী করেই বা ওভাবে স্ট্যাম্প তুলে আছাড় মারেন। সেদিন ফিল্ড আম্পায়ার হিসেবে তিনি ছিলেন না বটে কিন্তু তার স্বজাতির কেউই তো ছিল। তাকে এভাবে অপমান করাটা তার জন্যও তো অপমানের শামিল।

বিজ্ঞাপন

সারাবাংলার সঙ্গে একান্তে আলাপকালে সেই কষ্টের কথাই জানালেন বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) তালিকাভুক্ত এই আম্পায়ার।

তার মুখেই শুনুন, ‘সিদ্ধান্তটি আমি হিসেব করে নিয়েছি, আবেগপ্রবন হয়ে নয়। ক্রিকেট এখন যে পর্যায়ে গিয়েছে এটা এখন অনেক বড় ব্যবসা। ইদানিং অনেকেই বলছেন বাজে পারফরম্যান্সের কারণে প্লেয়াররা বাদ গেলে আম্পায়াররা কেন নয়? পেশাদারিত্বের জায়গা থেকে যদি বলি আমরা অনেক বড় ঝুঁকি নিয়ে কাজ করে থাকি। আমি নিজে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট খেলেছি। আমি বুঝি প্লেয়ার না থাকলে ক্রিকেট থাকবে না, তবে আম্পায়ার না থাকলে ক্রিকেট থাকবে। দেখেন আমি বা আমরা প্রচার চাই না। সাকিব যে ঘটনাটা ঘটাল ওখানে যদি আমি থাকতাম একই সিদ্ধান্ত দিতাম। আম্পায়ার হিসেবে আমার কাছেও মনে হয়েছে ওটা আউট ছিল না। সে ওটাতে খুশি ছিল না বিধায় ওই কান্ড ঘটিয়েছে। ’

‘কিন্তু সাকিবকে বুঝতে হবে তিনি কে? তিনি একজন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বক্তিত্ব। একই ঘটনা তিনি আন্তর্জাতিক কোন ম্যাচে ঘটালে কী হত? ক্রিকেটের মুখবন্ধেই লেখা আছে জায়গাটা সম্মানের। আম্পায়ার যত ভুল ও পক্ষপাতদুষ্ট আউটই দিক, সম্মান তাকে দেখাতেই হবে। তিনি পুরো ক্রিকেটকে অসম্মান করেছেন। আমার এটাই মনে হয়েছে আমি যে সম্মান নিয়ে আছি এখানে থাকলে আর পাব না। ক্রিকেট খেলে সাকিব যে পর্যায়ে গিয়েছে আমি সেখানে যেতে পারিনি বলে সে আমাকে অসম্মান করবে? আজ সাকিব বড় ক্রিকেটার বলে যা খুশি তাই করবে? এক সময় তাকেও কিন্তু ক্রিকেট ছাড়তে হবে। আমি আমার সম্মান হারাতে চাই না বলেই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

অবশ্য শুধুই মানহানির ভয়ই নয়, এদেশের আম্পায়ারিং আজও পেশাদারিত্বের মুখ দেখেনি সেটাও তার পেশা বিমুখতার অন্যতম চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করছে।

‘আমি আমার ঝুঁকির বিনিময়ে লাভবান হতে পারছি না। পেশাদার হিসেবে যে টাকা পাই তাতে এত বড় ঝুঁকি নিতে পারব না। একজন প্লেয়ার শুধু বল করেই শেষ, ব্যাটার ব্যাট করেই শেষ। আমাকে কিন্তু পুরো মাঠ, প্রতিটি প্লেয়ার, প্রতিটি বল ও ৪২টি নিয়ম মাথায় রাখতে হয়। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের একজন সাধারণ প্লেয়ার যারা কিনা ১০টি ম্যাচ খেলেছে তারাও ২০ লাখ টাকা করে পেয়েছে। আমি বাংলাদেশের এলিট প্যানেলের চার জন আম্পায়ারের পরের দুইজনের একজন। সেই আমি পুরো টুর্নামেন্ট শেষ করে ৬৫ হাজার টাকা পাব! একজন সাধারণ প্লেয়ার যে কিনা বেঞ্চেও বসে থাকে ১৫-২০ লাখ টাকা পায়। আর আমি?’

‘আমি কোন বেতনভোগী আম্পায়ার নই। বিসিবি জানে আমি চাকরি করি সেজন্য আমাকে বেতন দেওয়া হয় না। আমি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের তালিকুভুক্ত আম্পায়ার তো বটেই আইসিসি’র চার জন এলিট আম্পায়ারের পরে যে দুজন আছেন তাদের একজন। আম্পায়ারদের প্রতি বিসিবি’র কোন পেশাদারি মনোভাব আমি দেখি না। আমাকে শুধু্ই ম্যাচ ফি দেওয়া হয়।’

বলার অপেক্ষাই থাকছে না যে নিরুপায় হয়েই মনিরুজ্জামান আপাতত সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আম্পায়ারিং আর নয়। এদিকে গতকাল ফেসবুকে তার পোস্ট দেখে আইসিসি’র প্যানেল আম্পায়ার ও অন্যান্য অগ্রজরা অনুরোধ করেছেন যেন তিনি তার সিদান্ত পুনর্বেবেচনা করেন। প্রত্যুত্তরে তিনি বলেছেন, আগামী ৩০ দিন এ বিষয়ে তিনি কোন চিন্তা করবেন না। এই মুহুর্তে তিনি আম্পায়ারিং থেকে দূরে থাকতে চাচ্ছেন। আম্পায়ারস অ্যাসোসিয়েশন থেকেও তার ‘বিদায়ী’ পোস্ট নিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছে। তিনি সবিনয়ে তাদের জানিয়েছেন, এটা অনানুষ্ঠানিক, তেমন কিছু না। তবে তারা চাইলে পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন। তাছাড়া যেতেতু তিনি বেতনভোগী নন, সেহেতু আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানাতেও বাধ্য নন, সেকথাও সাফ জানিয়ে দিয়েছেন।

আম্পায়ারিং টপ নিউজ ডিপিএল ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ বিসিবি

বিজ্ঞাপন
সর্বশেষ

গুলশানে দুইজনের গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১২:৫৫

ঢাকার পথে প্রধান উপদেষ্টা
২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ১১:৩৩

সম্পর্কিত খবর