বর্ণবাদী আচরণের জবাব রাশফোর্ডের
১৩ জুলাই ২০২১ ১৮:০৯
এবারের ইউরোতে ইংল্যান্ডকে হট ফেভারিট মনে করেনি কেউই। তবে হাঁটি হাঁটি পা পা করে ঠিকই ফাইনালে উঠে যায় দলটি। তারপর ১৯৬৬ সালের বিশ্বকাপের পর প্রথম মেজর টুর্নামেন্ট জয়ের স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠেন ইংলিশরা। স্বপ্নটা পূরণ হয়নি, টাইব্রেকার ইতালির কাছে ২-৩ গোলে হেরে শিরোপা বঞ্চিত হয়েছেন ইংলিশদের। সেই দুঃখে কলঙ্কিত এক কাণ্ড ঘটিয়ে ফেলেছেন ইংল্যান্ড সমর্থকরা।
ফাইনালে ইংল্যান্ডের হয়ে পেনাল্টি মিস করেছেন মার্কাস রাশফোর্ড, জ্যাডোন সাঞ্চো ও বুয়াকো সাকা। এই তিনজনই কৃষ্ণাঙ্গ। শিরোপা হাতছাড়া হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তিন ফুটবলারকে বর্ণবাদী ট্রল করছেন ইংলিশ সমর্থকরা। বিষয়টি নিয়ে হইচই পড়ে গেছে বিশ্ব ফুটবলে।
ইংল্যান্ড ফুটবল ফেডারেশন, ইংল্যান্ড ফুটবল অ্যাসোসিয়েশন, ইংল্যান্ডের কোচ গ্যারেথ সাউথগেট, দেশটির প্রেসিডেন্ট বরিস জনসন নিন্দা জানিয়েছে বিষয়টিতে। লন্ডন পুলিশ ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। এ বিষয়ে টুইটারে লম্বা এক বার্তা দিয়েছেন রাশফোর্ড। বলেছেন, গায়ের কালো রং নিয়ে গর্ববোধ করেন তিনি।
রাশফোর্ড লিখেছেন, ‘কোথা থেকে শুরু করব আমি, তা–ও জানি না এবং এই মুহূর্তে কী অনুভব করছি, তা কীভাবে শব্দে প্রকাশ করব, সেটাও জানি না। আমি মনে করি, এটা স্পষ্ট যে আমি একটি কঠিন মৌসুম কাটিয়েছি। আর ফাইনালে আমি একটু কম আত্মবিশ্বাস নিয়েই নেমেছিলাম। আমরা সব সময়ই পেনাল্টির জন্য এভাবে দৌড়াই, কিন্তু এবার কিছু একটা ঠিক ছিল না। দীর্ঘ এই প্রক্রিয়ায় আমি নিজের জন্য একটু সময় বাঁচিয়েছিলাম এবং দুর্ভাগ্যক্রমে আমি যা চেয়েছিলাম, তা হয়নি।’
‘আমার মনে হচ্ছে সতীর্থদের হতাশ করেছি। আমার মনে হচ্ছে, তাঁদের ডুবিয়েছি আমি। আমার মনে হচ্ছে তাঁরা আমাকে দলে অবদান রাখতে বলেছিলেন। আমি ঘুমের মধ্যেও পেনাল্টি থেকে গোল করতে পারি, এটা কেন নয়? শট নেওয়ার পর থেকেই আমার মাথায় এটা ঘুরছে। কেমন লাগছে আমার, সেটা বোঝানোর কোনো ভাষা নেই। ফাইনাল। ৫৫ বছর। একটা পেনাল্টি। একটা গল্প। আমি শুধু এটুকু বলব, অন্য রকম কিছু হোক, এটাই চেয়েছি। এই ক্ষমা চাওয়ার মধ্যেই আমি আমার সতীর্থদের ধন্যবাদ জানাতে চাই।’
‘এবারের গ্রীষ্মেই আমার সেরা প্রতিযোগিতা উপভোগ করলাম এবং তাঁরা সবাই এতে দারুণ ভূমিকা রেখেছেন। এমন এক ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি হয়েছে, যা অনড়। আপনাদের সাফল্যই আমার সাফল্য। আপনাদের ব্যর্থতা আমার। আমি এমন এক খেলার অংশ, যেখানে আমি নিজের ব্যাপারে অনেক কিছু পড়ি। আমার গায়ের রং, আমি কীভাবে বড় হয়েছি, কীভাবে আমি মাঠের বাইরে সময় কাটাই—এসব নিয়ে।’
‘আমি আমার খেলা নিয়ে সমালোচনা গ্রহণ করি, আমার পারফরম্যান্স ভালো হয়নি, আমার আরও ভালো করা উচিত ছিল। কিন্তু আমি যেমন এবং আমার বেড়ে ওঠার বিষয়ে আমি কখনো ক্ষমা চাইব না। জাতীয় দলের জার্সি পরা ও হাজারো মানুষের সামনে পরিবারের উৎসাহ দেওয়ার এ মুহূর্তের মতো গর্ব আর কিছুতে বোধ করিনি। আজ আমি যেসব ইতিবাচক বার্তা পেয়েছি (বিদ্বেষী আচরণের শিকার হওয়ার পর) এবং উইদিংটনের মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখে আপ্লুত। আমার চোখ ভিজে উঠেছে। এত চমৎকার সব বার্তার জন্য ধন্যবাদ। আমি আরও শক্তিশালী হয়ে ফিরব। আমরা আরও শক্তি নিয়ে ফিরব।’