কার্ডিফ ২০০৫, মিরপুর ২০১৭, মিরপুর ২০২১- বাংলাদেশ ক্রিকেটের একটি চক্রপূরণ। ক্রিকেটের সবচেয়ে সফলতম দল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে তিন ফরম্যাটে জয়ের ক্যালেন্ডার। কার্ডিফে ২০০৫ সালে মোহাম্মদ আশরাফুলের সেঞ্চুরিতে অজিদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ। ২০১৭ সালে মিরপুরে সাকিব আল হাসানের দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে মিলেছিল প্রথম টেস্টের জয়। কাল সেই মিরপুরেই মিলল অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি জয়। তিন ফরম্যাট মিলিয়ে এখন পর্যন্ত (বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটি পর্যন্ত) অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ও এই তিনটিই।
অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিয়মিত খেলার সুযোগও হয় না বাংলাদেশের। দু’দল দ্বিপক্ষীয় সিরিজ খেলেছে হাতেগোনা কয়েকটা। তাছাড়া আইসিসি আয়োজিত টুর্নামেন্টেই কেবল দেখা হতো অস্ট্রেলিয়ার। এখন পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬টি টেস্ট, ২১টি ওয়ানডে ও ৫টি টি-টোয়েন্টি খেলেছে বাংলাদেশ। তার মধ্যে টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি তিন ফরম্যাটেই মিলেছে একটি করে জয়।
২০০৫ সালে প্রথম জয়টা এসেছিল মোহাম্মদ আশরাফুলের কাব্যিক এক সেঞ্চুরিতে। ইংল্যান্ডের মাটিতে নেটওয়েস্ট সিরিজ খেলার আমন্ত্রণ পেয়েছিল বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া। ত্রিদেশীয় সেই সিরিজেই দ্বিতীয় ম্যাচেই বাংলাদেশের বাজিমাত।
অস্ট্রেলিয়া তখন বিশ্ব ক্রিকেটের শাসক। অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, ম্যাথু হেইডেন, রিকি পন্টিং, মাইকেল ক্লার্ক, মাইক হাসি, সাইমন ক্যাটিচ, জেসন গিলেস্পি, গ্লেন ম্যাকগ্রা, শেন ওয়ার্নের মতো ক্রিকেটার তখন একসঙ্গে খেলতেন। তাপশ বৈশ্য, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মোহাম্মদ রফিকরা সেই বিশ্বজয়ী অস্ট্রেলিয়াকে ২৪৯ রানে আটকে দেয়। চারে নেমে ম্যাকগ্রা, গিলেস্পিদের তুলধুনো করে ১০১ বলে ১০০ রানের কাব্যিক এক ইনিংসে খেলে বাংলাদেশকে জেতান মোহাম্মদ আশরাফুল। হাবিবুল বাশারের ৪৭ ও আফতাব আহমেদের ১৩ বলে ২১ রানের দুটি ইনিংসও দারুণ ভূমিকা রাখে জয়ে।
বড় দলের বিপক্ষে জিতলে আত্মবিশ্বাস বাড়ে, যেটা আবারও জিততে সহায়তা করে- খেলাধুলায় এটা প্রচলিত কথা। ২০০৫ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম জয়টা বাংলাদেশেরও আত্মবিশ্বাস হয়তো বাড়িয়ে দিয়েছিল। তবু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে আরেকটা জয় পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে পাক্কা এক যুগ!
২০১৭ সালে দুটি টেস্ট খেলতে বাংলাদেশ সফরে আসে অস্ট্রেলিয়া। মিরপুরে সিরিজের প্রথম টেস্টে অজিদের বিপক্ষে বাংলাদেশকে আরেকটা জয় এনে দেন সাকিব আল হাসান। স্টিভ স্মিথ, ডেভিড ওয়ার্নার. গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, প্যাট কামিন্স, নাথান লায়ন, জস হ্যাজেলউডদের নিয়ে সেবার পূর্ন শক্তির দল নিয়েই বাংলাদেশে এসেছিল অস্ট্রেলিয়া। প্রথম ইনিংসে ২৬০ রান তোলে বাংলাদেশ। তামিম ইকবালের ৭০ এর সঙ্গে তাতে বড় ভুমিকা সাকিব আল হাসানের ৮৪ রান। সাকিব বল হাতে ৫ উইকেট নিয়ে প্রথম ইনিংসে অজিদের আটকে গেন ২১৭ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাট হাসে তামমের। তার ৭৮ রানের ওপর ভর করে প্রথম ইনিংসে ২২১ রান তোলে বাংলাদেশ। লিড দাঁড়ায় ২৬৫। সাকিব আবারও স্পিন বিষ ঢালেন। দ্বিতীয় ইনিংসেও পাঁচ উইকেট নেন সাকিব আল হাসান। অস্ট্রেলিয়াকে ২৪৪ রানে গুটিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ ম্যাচ জিতে ২০ রানে।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটের জয়টা অধরা ছিল, ধরা দিল গতকাল। ব্যাটিংয়ের বেশ কয়েকজন তারকা ক্রিকেটারকে রেখে বাংলাদেশে এসেছে অস্ট্রেলিয়া। কন্ডিশনও বাংলাদেশের পক্ষে। ফলে মনে করা হচ্ছিল, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টি-টোয়েন্টিতে জয়ক্ষরা ঘুচানোর এটা বড় সুযোগ। প্রথম দফাতেই সুযোগটা কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশ।
কাল মিরপুরে পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের প্রথমটিতে প্রথমে ব্যাটিং করতে নেমে ১৩১ রান তুলেছিল বাংলাদেশ। মিরপুরের উইকেট স্বাগতিকদের পক্ষেই ছিল তবুুও আধুনিক টি-টোয়েন্টিতে ১৩১ রান তেমন কিছু না। তবে সাকিব আল হাসান, নাসুম আহমেদ, মোস্তাফিজুর রহমানরা এই রানের পুঁজি নিয়েই অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দিল ২৩ রানে। তাতে একটি চক্রপূরুণ। টেস্ট, ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে দেওয়ার তৃপ্তি।
বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়ার মধ্যকার পাঁচ ম্যাচ টি-টোয়েন্টি সিরিজের সবগুলো ম্যাচই দেশে এবং দেশের বাইরে থেকে দেখা যাবে র্যাবিটহোলে। লাইভ দেখতে Rabbitholebd Sports Youtube Channel -এ সাবস্ক্রাইব করুন। সাবস্ক্রাইবের জন্য ক্লিক করুন এই লিংকে র্যাবিটহোলবিডি স্পোর্টস।