আফগানিস্তানের নারী ফুটবলারদের বাঁচাতে ফিফার আকুতি
২২ আগস্ট ২০২১ ১৪:১৮
তালেবানরা নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর থেকে দ্রুত রং পাল্টাচ্ছে আফগানিস্তানের। তালেবান শাসনে দেশটি কীভাবে চলবে, রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক-অর্থনৈতিক চেহারা কেমন হবে, নারীদের কেমন মর্যাদায় রাখা হবে- ইত্যাদি আলোচনা ঘুরছে চারপাশে। দেশটির ক্রীড়াঙ্গন নিয়েও উঠছে বিভিন্ন প্রশ্ন। তবে সবচেয়ে আতঙ্কে আছেন আফগানিস্তানের নারী ফুটবল দলের খেলোয়াড়রা। এদিকে আন্তর্জাতিক ফুটবলের সর্বোচ্চ সংস্থা ফিফাও নারী ফুটবলারদের বাঁচাতে আকুতি জানিয়েছে। তাদের সঙ্গে আকুতি জানিয়েছে ফুটবলারদের সংগঠন ফিফপ্রো, দেশটির নারী দলের সাবেক অধিনায়ক খালিদা পোপাল এবং সাবেক সহকারী কোচ হেইলি কার্টার।
এদিকে নারী ফুটবলারদের এমন আকুতির পর ফিফা ইতোমধ্যেই বিশ্বের নানান দেশের সরকারের কাছে আবেদন জানিয়েছে। কেবল ফিফায় নয় সেই সঙ্গে বিশ্ব ফুটবলারদের সংস্থা ফিফপ্রোও আফগান নারী ফুটবলারদের বাঁচাতে সাহায্যের চেয়েছে।
ফিফপ্রো আফগান নারী ফুটবলারদের দেশটি থেকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়ার আবেদন জানিয়েছে। এবং যতদ্রুত সম্ভব তাদের দেশটি থেকে সরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে।
এদিকে ফিফা বলেছে, ‘আফগানিস্তানের অবস্থা এখনো ভয়াবহ। আমরা অনেক দুঃশ্চিন্তায় আছি।’
দেশটির নারী ফুটবলাররা এখন নানান জায়গায় পালিয়ে আছে। তারা নিজেদের জীবন ভয়ে দেশটির নানান জায়গায় লুকিয়ে আছে বলে জানিয়েছেন আফগান নারী দলের সাবেক অধিনায়ক খালিদা পোপাল। তিনি ফুটবলারদের জীবন বাঁচানোর আকুতি জানিয়েছেন। কারণ তিনি ভয়ে আছেন যারা দেশে থেকে গেছেন তারা আফগান শাসনামলে শাস্তির মুখোমুখি হবে।
পোপাল বলেন, ‘আমি তখন থেকে ঘুমাতে পারছি না। আমি সাহায্যের জন্য কাঁদছি সকলের দ্বারে দ্বারে। আমার নিজেকে খুব অসহায় মনে হচ্ছে।’
২০ বছর আগে তালেবানরা যখন আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণে ছিল তখন তারা নারীদের শিক্ষা বন্ধ করে দিয়েছিল। নারীরা তার পুরুষ কোনো স্বজন ছাড়া ঘরের বাইরে যেতে পারত না। নারীদের জোরপূর্বক পুরো শরীর ঢেকে রাখা বোরকা পরতে হত। আর যারা এই নিয়ম অমান্য করত তারা সম্মুখীন হতেন কঠিন শাস্তির।
আফগান নারী ফুটবল দলের সাবেক সহকারী কোচ হেইলি কার্টারের সঙ্গে অনেক খেলোয়াড় যোগাযোগ করে তাদের অসহায় অবস্থা এবং জীবন হারানোর ভয়ের কথা জানিয়েছেন।
কার্টার বিবিসিকে বলেন, ‘যদি কেউ জানতে পারে যে তারা বাইরের কারো সঙ্গে যোগাযোগ করছে তাহলে তারা আরও বেশি বিপদে পড়বে। কয়েকজন খেলোয়াড় আমার সঙ্গে যোগাযোগ করে বলেছে যে তালেবানরা তাদের হত্যা করবে। তারা চায় না নারীরা ফুটবল খেলুক। আমরা অনেক বিপদের মধ্যে আছি।’
আমেরিকার এই ফুটবল কোচ আফগান নারী ফুটবলারদের শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘তোমরা বিচক্ষণ থাকো এবং ধৈর্য্য ধরো।’
এদিকে ফিফা একটি বিবৃতিতে জানিয়েছে, আমরা আফগান ফুটবল ফেডারেশনের সঙ্গে সর্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছি। এবং দেশটির ফুটবলারদের থেকেও আমরা প্রতিনিয়ত সংবাদ গ্রহণ করছি।
উল্লেখ্য, গত রোববার (১৫ আগস্ট) কাবুল দখলের মাধ্যমে গোটা আফগানিস্তানের নিয়ন্ত্রণ হাতে তুলে নেয় তালেবান। এদিন আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট আশরাফ গনি দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। কাবুল দখলের পর নিজেদের ব্যাপারে ইতিবাচক বার্তা দিতে চাইছে তালেবানরা। তবে তাদের আচরণে ইতিবাচকতার কোনো ছাপ লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আফগানিস্তানে তালেবান আতঙ্কে হাজারো মানুষ দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এছাড়া নারীদের প্রতিও তারা আগের মতোই খড়গহস্ত।
এদিকে আফগানিস্তানে ন্যাটো বাহিনী বা পূর্ববর্তী আফগান সরকারের পক্ষে যারা কাজ করেছেন, তাদের খুঁজতে তালেবান ঘরে-ঘরে অভিযান চালাচ্ছে বলে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তালেবান জঙ্গিরা আগে থেকেই নজরে রাখা করা মানুষজনকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজছে এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের হুমকি দিয়ে আসছে।
সারাবাংলা/এসএস
আফগান নারী ফুটবল আফগান-তালেবান আফগানিস্তান নারী ফুটবল ফিফা ফিফার আকুতি