ক্ষেপেছেন মাশরাফি
৩১ আগস্ট ২০২১ ১৭:৪৬
একদিন আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের হেড কোচ রাসেল ডমিঙ্গো জানান, আসন্ন নিউজিল্যন্ড সিরিজে ভাগাভাগি করে উইকেটকিপিং করবেন মুশফিকুর রহিম ও নুরুল হাসান সোহান। প্রথম দুই ম্যাচ কিপিং করবেন সোহান, পরের দুই ম্যাচ মুশফিক। এই পারফরম্যান্সের ওপর ভিত্তি করে পঞ্চম ম্যাচের উইকেটরক্ষক বেছে নেওয়া হবে! হেড কোচের এমন কথায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা উঠেছে। ক্ষেপেছেন সাবেক সফল অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্ত্তোজাও।
দীর্ঘ ১৬ বছর যাবত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে আসা মুশফিক সম্প্রতি বছরগুলোতে বাংলাদেশ দলের সেরা ব্যাটার। ক্যারিয়ারের সেই শুরুর সময় থেকে উইকেটকিপিং করেছেন তিনি। তার মতো একজনকে প্রমাণের জন্য দুই ম্যাচ নির্দিষ্ট করা অপমানের মনে করছেন মাশরাফি। বিষয়টি তরুণ সোহানের জন্যও চাপের বলছেন তিনি। মাশরাফির মতে, এটা প্রকাশ্যে না বলে ড্রেসিংরুমেই সীমাবদ্ধ রাখা উচিত ছিল।
সোমবার (৩০ আগস্ট) রাতে নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক পাতায় লম্বা একটি পোস্ট করেছেন মাশরাফি। যাতে এসবের কারণে দলে বাজে প্রতিযোগিতার শঙ্কাও প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের সফলতম অধিনায়ক।
মাশরাফির ফেসবুকে লিখেছেন-
১৬টা বছর যে মানুষটা বাংলাদেশ ক্রিকেটকে সার্ভিস দিচ্ছে তাকে নিয়ে মন্তব্য করার আগে আপনি যতো বড় ক্ষমতাধর মানুষ হোন না কেন একটু জায়গা বুঝে বলা উচিত। মুশফিক কিভাবে জাতীয় দলে এসেছে তা সবাই জানে সিম্পিলি তার ব্যাটিং দক্ষতা। একটা সময় পর্যন্ত বিশ্ব ক্রিকেটে শুধু কিপার হিসাবেই খেলা যেত তার উদাহরণ ভুরি ভুরি। কিন্তু গিলক্রিস্ট আসার পর সব হিসাব পাল্টে যায়। যার সুত্র ধরে ইন্ডিয়া টিমে দেখেছি রাহুল দ্রাবিড়কেও কিপিং করতে। যাতে দল সুবিধা মতো এক্সট্রা একজন ব্যাটসম্যান বা বোলার খেলাতে পারে। অবশ্যই সেটা লিমিটেড ক্রিকেটে।
বিশ্ব ক্রিকেটের দুজন সর্বোচ্চ পর্যায়ের ক্রিকেটারকে সেটা আবার নিজ দলের খেলোয়াড়কে, আপনি যুদ্ধ করে বাঁচতে বলবেন সেটা ড্রেসিং রুম পর্যন্ত থাকাই ভালো। অবশ্যই দলের স্বার্থ সবার আগে। দলের আগে কোন খেলোয়াড় হতে পারে না। কিন্তু যে ক্রিকেটারগুলো দেশের হয়ে খেলতে নামে তারা কোন সহানুভূতি নিয়ে নয় বরং তার শরীরের সর্বচ্চটুকু নিংড়ে দলে জায়গা পায়। আর মুশফিকের সে গল্প আমরা সবাই জানি, তার নিবেদন কি পর্যায়ে। বাংলাদেশের হাজার হাজার উঠতি ক্রিকেটারদের আইডল সে।
সোহান সম্ভবত দলের সেরা কিপার। সাথে লিটন। এক সিরিজ গ্যাপে যোগ হলো মুশফিক। এক দলে এতো কিপার এ তো আনন্দের, তা না হয়ে বের হয় বিষাদ। এতোটুকু সামাল দিতে না পারলে তো সমস্যা। যা এক পর্যায়ে দলের ভিতর অদৃশ্য এক বাজে প্রতিযোগিতা চলে আসবে। টিম ম্যানেজম্যান্টের সিদ্ধান্ত তারা তাদের মতো করে নিবে, এটাইতো স্বাভাবিক এবং অবশ্যই ভালোর জন্য নিবে। সফল হলে তালি না হলে গালি, যা সারা বিশ্বেই হচ্ছে।
কে খেলবে, কোন পজিশনে খেলবে, কার রোল কি এগুলো তো দলের একান্ত পরিকল্পনা যা ড্রেসিং রুমে শুরু আবার ড্রেসিং রুমেই শেষ হয়। বাহিরে বলতে গেলে তো খেলোয়াড়ের ওপর চাপ সৃষ্টি হয় যা তার স্বাভাবিকতাকে বাঁধাগ্রস্ত করবে। আমি শুধু ভাবছি এতে কি সোহানের জন্যও খুব ভালো হলো যে ছেলেটা দুই ম্যাচে সব দেখিয়ে টিকে থাকতে হবে, তাহলে বিগত দুই সিরিজ সে যা করলো তার কি হবে? আর লিটন কি বলবে? এখন ও তো কিপিং ভুলেই যাবে। আর মুশফিক কে পারফর্ম করতে হবে ১৬ বছর খেলার পর! এটা বলে দেওয়ার কিছু নাই সে খুব ভালো করেই জানে বরং বাহিরে এভাবে বললে তার নিবেদনকে অসম্মানিত করা হয়। যা তার প্রাপ্য না।
সে সেরা ব্যাটসম্যান বলেই ১৬ বছর দেশকে সার্ভিস দিছে। আবার দলের প্রয়োজনে তাকেই কিপিং করতে হতে পারে। তখন যদি সে না বলে সেটা কি ভালো শোনাবে? দলে প্রতিযোগিতা সব সময় দলের সেরাটা বের করে আনে। তবে সেটা সুস্থ হতে হবে। কাউকে আঘাত করে নয়। বাংলাদেশ ক্রিকেটের একজন আউটসাইডার হিসাবেই কথাগুলো লিখলাম কেউ পার্সোনালি না নিলে খুশি হবো। গুড লাক বাংলাদেশ। ইনশাল্লাহ জয় আমাদেরই হবে।