অবসরের আগে বিশ্বকাপ জিততে চান সাকিব
৩১ আগস্ট ২০২১ ১৭:৫৭
দেশীয় ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান। টেস্ট, ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টি— তিন ফরম্যাটেই অলরাউন্ডার হিসেবে আইসিসি’র র্যাংকিংয়ের শীর্ষে ওঠা একমাত্র ক্রিকেটার। একই সময়েও তিন ফরম্যাটেই র্যাংকিংয়ে শীর্ষ অলরাউন্ডার হিসেবে দীর্ঘ সময় অবস্থান করেছেন তিনি। কত শত রেকর্ড ভেঙে নিজের করে নিয়েছেন, সে হিসাব হয়তো সাকিবের নিজের কাছেও নেই। বাংলাদেশ ক্রিকেটে অবিসংবাদিতভাবে সর্বকালের সেরা অলরাউন্ডার তিনি। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডারদের সংক্ষিপ্ত তালিকাও সাকিব ছাড়া অসম্পূর্ণ। ক্রিকেটীয় নানা অর্জনে সমৃদ্ধ সেই সাকিবের অবসরের লক্ষ্যটা কী?
সাকিব বলছেন, রান-উইকেটের হিসাব নিয়ে তিনি মোটেও ভাবিত নন। ব্যক্তিগত লক্ষ্যও তার কাছে ততটা গুরুত্বপূর্ণ নয়। তবে সাকিব একটি আকাঙ্ক্ষার কথা বলেছেন, যা তিনি অবসরের আগেই অর্জন করতে চান। আর কেউ আকাঙ্ক্ষাটি হলো— বিশ্বজয়। হ্যাঁ, অবসরের আগে বাংলাদেশের হয়ে সাকিব একটি বিশ্বকাপ জয় করতে চান!
সম্প্রতি সারাবাংলা ডটনেটের সঙ্গে একান্ত আলাপচারিতায় এমন ইচ্ছার কথা জানিয়েছেন বাংলাদেশের জান সাকিব আল হাসান। সেই আলাপচারিতাতেই সাকিবের কাছে প্রশ্ন রাখা হয়েছিল— ক্যারিয়ার শেষে নিজের নামের পাশে কত রান আর উইকেট দেখতে চাইবেন? অবসরের আগে সুনির্দিষ্টভাবে কোনো অর্জনের লক্ষ্য রয়েছে কি না— এমন প্রশ্নও রাখা হয় তার কাছে।
এর জবাবেই সাকিবের উত্তর— ‘দেখুন, নিজের নামের পাশে কত রান, কত উইকেট থাকবে— এর জন্য আসলে আমি কখনোই ক্রিকেট খেলিনি। তেমন কোনো টার্গেট আসলে আমার নেই। আর অর্জনের কথা বলতে পারি— যদি কোনো বিশ্বকাপ জিততে পারি, সেটি অবশ্যই আমার জীবনের বড় একটি অর্জন হবে। বিশ্বকাপ জিততে চাই।’
ক্যারিয়ার শেষের আগে একটি বিশ্বকাপ জয়ের ইচ্ছার কথা এর আগেও বলেছেন সাকিব আল হাসান। মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ— এই পঞ্চপাণ্ডব অনেক বছর ধরে টানছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটকে। মাশরাফির ক্রিকেট অধ্যায় এরই মধ্যে শেষ। বাকি চার জন অবসরের আগে বাংলাদেশকে একটি বিশ্বশিরোপা এনে দেবেন— এমন প্রত্যাশা দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের তো রয়েছেই। তবে এমন প্রত্যাশা কতটা বাস্তবসম্মত, সে ভাবনাও প্রশ্নাতীত নয়।
তবে বিশ্বমঞ্চে টাইগার ক্রিকেটকে সেই বিশ্বসেরার প্রতিযোগিতায় নামার সুযোগ আসছে মাস দুয়েক পরই। সংযুক্ত আরব আমিরাতে বসছে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। ক্রিকেটের এই নবীন ফরম্যাটে বাংলাদেশের অতীত রেকর্ড ভালো না হলেও সাম্প্রতিক ফর্ম আশা জাগাচ্ছে টাইগার ভক্তদের। দলের সাম্প্রতিক পারফরম্যান্সে এই বিশ্বকাপ নিয়ে সাকিবও বেশ আশাবাদী।
সাকিব সারাবাংলাকে বলছিলেন, ‘এই ফরম্যাটে আমরা কখনোই খুব বেশি ভালো করিনি। তবে এবারের চিত্র একটু অন্যরকম। আমি বিশ্বাস করি, এবারে আমাদের যে দল আছে তাদের বেশ ভালো করার সম্ভবনা আছে বিশ্বকাপে।’
জিম্বাবুয়ের মাটিতে স্বাগতিকদের হারিয়ে আসার পর এ মাসেই প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে দ্বিপাক্ষিক সিরিজে প্রতিযোগিতায় নেমেছিল বাংলাদেশ। দেশের মাটিতে পাঁচ ম্যাচের এই সিরিজ ৪-১ ব্যবধানে জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। ব্যাটে-বলে নির্ভরতার প্রতীক সাকিবই ছিলেন এই সিরিজেও সেরা ক্রিকেটার।
অজিদের বিপক্ষের এমন জয় দলের আত্মবিশ্বাস অনেকটা বাড়িয়ে দিয়েছে বলে মন্তব্য করছেন সাকিব। তিনি বলেন, ‘যেকোনো দলের বিরুদ্ধে জয়ই একটি দলকে অনেক আত্মবিশ্বাস দেয়। আর সেই জয় যদি হয় অস্ট্রেলিয়ার মতো বড় দলের বিপক্ষে, তাহলে আত্মবিশ্বাসটা আরও বেড়ে যায়। এরপর আমাদের নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে খেলা আছে, সবাই ওটাতে ফোকাস করছে এখন। আমি মনে করি অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয় আমাদের অবশ্যই আত্মবিশ্বাসী করবে। সেটি নিউজিল্যান্ড সিরিজের জন্য এবং বিশ্বকাপের জন্যও।’
অবসরের আগেই দেশের হয়ে বিশ্বজয়ের লক্ষ্য পূরণের সুযোগ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে পাচ্ছেন সাকিব। সে সুযোগ কাজে লাগলে দেশের ক্রিকেট আরও একধাপ এগিয়ে যাবে, তা বলাই বাহুল্য। আর এই বিশ্বকাপে পূরণ না হলেও নিশ্চয় পরবর্তী বিশ্বকাপগুলোর জন্য সাকিব নিজেকে আরও শাণিত করে তুলবেন। আর সাকিবের মতো ক্রিকেটপ্রেমী সব বাংলাদেশিও নিশ্চয় চাইবেন— সাকিবের লক্ষ্যটা অপূর্ণ না থাকুক।