Saturday 23 Nov 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কোচ নিয়োগের প্রক্রিয়া নিয়ে মাশরাফির প্রশ্ন


৭ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৭:৩০

ক্রিকেটে কোচের ভূমিকা একজন অভিভাবকের মতো। ক্রিকেটারদের সেরাটা বের করে নেওয়ার পাশাপাশি দলের সকল সদস্যকে আগলে রাখার দায়িত্বও তার। সেই কোচ যদি বৈষম্য আচরণ করেন তাহলে গোছালো দল অগোছালো হয়ে পড়ে, বলেছেন মাশরাফি বিন মুর্ত্তোজা। বাংলাদেশ দলের কোচ নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন সাবেক সফল অধিনায়কের। মাশরাফির অভিযোগ, হাই প্রোফাইল দেখে বিদেশি কোচ নিয়োগ দেওয়া হলেও যাচাই করা হয় না বাংলাদেশের ক্রিকেট সংস্কৃতি সম্পর্কে কতোটা ধারনা আছে সেই কোচের, যেটা পরবর্তিতে বড় সমস্যা সৃষ্টি করে।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি সিনিয়র তিন ক্রিকেটার মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, মুশফিকুর রহিম ও তামিম ইকবালের তিন সিদ্ধান্ত নিয়ে নানান প্রশ্ন উঠছে। শ্রীলংকা সফরে হঠাৎ করেই টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসরের ঘোষণা দেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। চলতি নিউজিল্যান্ড সিরিজে টি-টোয়েন্টিতে আর কিপিং না করার সিদ্ধান্ত নেন মুশফিকুর রহিম। এই দুই সিদ্ধান্তের পেছনে কোনো কারণ আছে কিনা তা নিয়ে বিভিন্ন গুঞ্জন আছে। তামিম ইকবাল আসন্ন টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন। তামিমের সিদ্ধান্তের পেছনের কারণ খোঁজার চেষ্টাও করেছেন অনেকে। এসবের মধ্যেই কোচিং নিয়ে প্রশ্ন তুললেন মাশরাফি।

বিজ্ঞাপন

সাবেক অধিনায়ক ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজে লম্বা এক স্ট্যাটাস দিয়েছেন। সারাবাংলা ডটনেটে’র পাঠকদের জন্য তা তুলে ধরা হলো-

কোচ নিয়োগের সময় যে ইন্টারভিউ নেওয়া হয়, সেখানে আসলে তাকে কি প্রশ্ন করা হয়? বা আদৌ কি করা হয় কোনো প্রশ্ন? নাকি শুধু জানতে চাওয়া হয়, ‘তোমার কি করার ইচ্ছা?’ হয়তো তখন সে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরে। ওখান থেকে নতুনত্ব কিছু পেলে চিন্তা করা হয়, ‘দারুণ কোচ, কী সুন্দর পরিকল্পনা, এর মতো কোচই হয় না। আমার তো মনে হয়, ভুল ওখানেই হয়ে যায়। কারণ, মানুষকে বোঝাতে আমরা সব সময় হাই প্রোফাইল কোচ খুঁজি, যা পরে আর কোনো কাজে আসে না।

আমাদের প্রয়োজন, যে আমাদের ক্রিকেট ফলো করে বা আমাদের ম্যাক্সিমাম খেলোয়াড়কে নিয়ে স্টাডি করে এসে ইন্টারভিউ দিচ্ছে (এরকম কোচ)। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে ন্যূনতম ধারনা নিয়ে আসা। তা না হলে তো সে বুঝবেই না, একজন সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ তৈরি করতে কত দিন লেগেছে, বা অতীতে তাদের অবদান কী, একজন মুস্তাফিজ কীভাবে উঠে এসেছে।

বারবার বলেছি, আবারও বলছি, দলের আগে কখনোই কোনো খেলোয়াড় হতে পারে না। ভালো না করলে বাদ পড়তেই হবে। অফ ফর্ম সব খেলোয়াড়ের জীবনেই যায়। বাদও পড়ে। কিন্তু ম্যানেজমেন্ট থেকে অপমানিত শুধু আমাদের দেশেই বেশি হয়। পারফর্ম না করলে বাদ দেবেন স্বাভাবিক। আবার তাকে তো সহযোগিতা করতে হবে, কীভাবে ফর্মে আনা যায় বা তাকে মেন্টালি কীভাবে সাপোর্ট করা যায়। কোনোভাবেই আপনি বুঝতে দিতে পারেন না যে, আপনি তাকে আর আপনার সময়কালে দেখতে চান না। এটার কারণ একটাই, কোনো কোচই আমাদের দেশে কাজ করার আগে আমাদের দেশের ক্রিকেটের ফলোয়ার থাকে না। চাকরির জন্য আসে, শেষ হলে চলে যায়।

এ যাবৎকালে প্রায় ৯/১০ জন কোচের সাথে কাজ করেছি আমি। প্রত্যেকটা কোচ তার নিজের মতো করে কাজ শুরু করে, যেটা করাটাও স্বাভাবিক। কারন একেকজনের কাজের ধরন একেকরকম। কিন্তু সব সময় দেখেছি, প্রত্যেক কোচ তার নিজস্ব একজন বা দুইজন প্রিয় খেলোয়াড় বানিয়ে নেয়। পরে সিলেক্টর, ক্যাপ্টেন বা অন্য কেউ তাকে আর কিছুই বুঝাতে পারে না। বরং সম্পর্কগুলো জটিল হতে থাকে। ওই পছন্দের জন্য সে আবার দুইজনকে এমন অপছন্দ করা শুরু করে যে, তাদের আর দেখতেই পারে না। এক পর্যায়ে এমন জিদ শুরু করে যে, প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দেব, এমন কথা প্রকাশ্যেও শুনেছি কয়েকবার কোচের মুখে।

আমার পয়েন্ট হলো, কোচের পছন্দ কিছু খেলোয়াড় হতেই পারে। সেটা সব কোচেরই হয়। অন্যান্য দেশেও হয়। তবে সেখানে কখনও সেটা প্রকাশ্যে বুঝতে দেয় না, অনুমান করতে হয়। কারণ দলের সেরা ৩/৪ জন খেলোয়াড়ই শুধু ম্যাচ জেতায় না। জেতালেও আপনি একজনের জন্য আরেকজনকে ছোট করতে পারেন না। দর্শক বা সাংবাদিক অনেক কিছু লিখতেও পারে, বলতেও পারে। যেটা একদম নরম্যাল ব্যাপার। কোচকে বলা হয় ফাদার অফ দ্যা সাইড। সে সবাইকে দেখে রাখবে, প্রয়োজনে কঠোর হবে। আবার দলের স্বার্থে যাকে প্রয়োজন তাকে ব্যবহার করবে। তার সব কিছুই হতে হবে পজিটিভ। কারও প্রতি কঠোর, কারও প্রতি নমনীয়, এটা এক রকমের বৈষম্যতে রূপ নেয় আমাদের দেশে। যা গোছানো দলকে অগোছালো করে ফেলে।

এক পর্যায়ে তারা (বিদেশি কোচরা) নিজেদের দেশে, না হলে আই পি এল বা আরও ভালো কোনো অফার পেয়ে চলে যাবে। কারণ এত দিনে সে আমাদের দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট করে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছে, নিজের প্রোফাইলও ভারি করেছে। বেতন তো নিয়েছে মাসে ১২/১৫ লাখ টাকা আর আমাদের কোচরা না খেয়ে মরে। গালিও দেখি আমাদের কোচরাই হজম করে।”

পরে উনারা চলে গেলে আমরা পড়ি বিপদে। আবার নতুন কোচ, নতুন পরীক্ষা, নতুন দাবি মেটানো। এভাবেই চলছে বাংলাদেশে কোচদের যাওয়া-আসা। তাই আমার মনে হয়, হাই প্রোফাইল কোচ নয়, আমাদের প্রয়োজন আমাদের কোচ, বাংলাদেশের কোচ।

বাংলাদেশ ক্রিকেট বিসিবি মাশরাফি বিন মুর্ত্তোজা

বিজ্ঞাপন

মাদকের টাকার জন্য মা'কে খুন
২৩ নভেম্বর ২০২৪ ০৮:৫৭

আরো

সম্পর্কিত খবর