অষ্টাদশী ব্রিটিশ তরুণীর ইউএস ওপেন জয়
১২ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১০:৫৯
পেশাদার টেনিসে তার যাত্রা শুরু মাত্র তিন মাস আগে। এখনো টেনিসের ট্যুর বিভাগের কোনো ম্যাচ খেলেননি এবং মেয়েদের টেনিস অ্যাসোসিয়েশনের কোনো ম্যাচেও এখনো জয় পায়নি। বলা হচ্ছিল অষ্টাদশী ব্রিটিশ তরুণী এমা রাদুকানুর কথা। প্রথমবার ইউএস ওপেনে অংশগ্রহণ করেই বনে গেলেন সেখানকার রাণী। বিশ্বকে চমকে ‘জায়ান্ট কিলার’ হয়ে ওঠা লায়লা ফার্নান্দেজকে ফাইনালে উড়িয়ে দিয়ে ইউএস ওপেন জিতেছেন এমা রাদুকানু। বাছাইপর্ব পেরিয়ে ইউএস ওপেন খেলতে আসা রাদুকানু রূপকথার জন্ম দিলেন।
মেয়েদের এককে ১৮ বছরের এমা রাদুকানু আর ১৯ বছর বয়সী লায়লা ফার্নান্দেজ ফাইনালে উঠেই সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন গোটা বিশ্বে। আর ফাইনালে ৬-৪, ৬-৩ সেটে ফার্নান্দেজকে উড়িয়েই দিয়ে ইউএস ওপেনের মুকুট জয় করেছেন রাদুকানু।
১৯৭৭ সালে ভার্জিনিয়া ওয়েডের পর মেজর কোনো নারী এককের গ্র্যান্ডস্ল্যাম জয়ের স্বাদ পেল গ্রেট ব্রিটেন। এতেই ৪৪ বছরের আক্ষেপ ঘুচল ব্রিটিশদের। এই যাত্রায় এমা রাদুকানু বাছাইপর্ব পেরিয়ে ইউএস ওপেনে অংশগ্রহণ করার পর মূল টুর্নামেন্টে এক সেটও হারেননি। অর্থাৎ কোনো সেট না হেরেই নিজের প্রথম গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতে নিলেন এই অষ্টাদশী তরুণী।
রাদুকানু কেবল ৪৪ বছর ব্রিটিশদের ঘরে নারী এককের মেজর শিরোপায় এনে দেননি সেই সঙ্গে গড়েছেন আরও কিছু তাক লাগান রেকর্ড। পুরুষ কিংবা নারী উভয় এককের ইতিহাসে বাছাইপর্ব পেরিয়ে এসে এবারই প্রথম কেউ গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতল। ২০০৪ সালে ১৭ বছরে সবচেয়ে কম বয়সী নারী খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জিতেছিলেন রাশিয়ান ‘গ্ল্যামার গার্ল’ মারিয়া শারাপোভা। তার পর এমা রাদুকানুই সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের এই কীর্তি গড়লেন। শারাপোভা জিতেছিলেন সে বছরের উইম্বলডন।
ইউএস ওপেনের বাছাইপর্বে ২৫ আগস্টে অংশগ্রহণ করেন রাদুকানু আর তার পাঁচ দিন পরে ৩০ আগস্ট থেকে যাত্রা শুরু আরেক ফাইনালিস্ট লায়লা ফার্নান্দেজের। ফার্নান্দেজ বাছাইপর্ব না খেলে প্রথম রাউন্ড থেকেই যাত্রা শুরু করেন। অন্যদিকে বাছাইপর্বের তিনটি ম্যাচে থেকে শুরু করে ফাইনাল পর্যন্ত মাত্র ১৭ দিনে ১০টি ম্যাচ জিতে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয় করলেন রাদুকানু। কেবল জয়ই করেননি গোটা টুর্নামেন্ট জুড়ে প্রতিপক্ষকে এক প্রকার বিধ্বস্ত করেই এসেছেন রাদুকানু।
ফাইনালের প্রথম সেটে তখন রাদুকানু ৫-৩ গেমে এগিয়ে। ঠিক সে সময় হাঁটুতে আঘাত পান তিনি। এক মুহূর্তের জন্য গোটা ব্রিটেনের শ্বাস-প্রশ্বাসই যেন থমকে গিয়েছিল তখন। তবে মেডিকেল টাইম আউট নিয়ে ফেরার পর আর বেশি সময় নেননি, দুর্দান্ত একটি ‘এইস’ মেরে নিশ্চিত করেন শিরোপা। জিতেই দুই হাতে মুখ ঢেকে কোর্টে শুয়ে পড়েন রাদুকানু, যেন বিশ্বাসই হচ্ছিল না তার! সবচেয়ে কম বয়সী ব্রিটিশ খেলোয়াড় হিসেবে গ্র্যান্ড স্ল্যাম জয়ের ইতিহাসও লেখা হয়ে গেল তাতে।
গল্পের অপরজন হচ্ছেন আরেক বিস্ময়। কানাডার ১৯ বছর বয়সী লায়লা ফার্নান্দেজ ইউএস ওপেনে যার নাম করণ করা হয়েছে ‘জায়ান্ট কিলার’ হিসেবে। ফাইনালের পথে নাওমি ওসাকা, আঞ্জেলিক কেরবারদের মতো তারকাদের হারিয়েছেন এই কানাডিয়ান তরুণী। রাদুকানুর সঙ্গে মিলে জন্ম দেন গ্র্যান্ড স্ল্যামের ইতিহাসে নারী-পুরুষ মিলে প্রথম এমন ফাইনালের, যেখানে দুই প্রতিদ্বন্দ্বীই অবাছাই খেলোয়াড়!
অবাছাই লায়লা ফার্নান্দেজ র্যাংকিংয়ে ৭৩তম থেকে শুরু করেন ইউএস ওপেন। যেখানে তৃতীয় রাউন্ডে গতবারের চ্যাম্পিয়ন ওসাকা, চতুর্থ রাউন্ডে আঞ্জেলিক কেরবার, কোয়ার্টার-ফাইনালে পঞ্চম বাছাই এলিনা সলিতোলিনাকে, সেমিফাইনালে হারান দ্বিতীয় বাছাই আরিনা সাবালেঙ্কাকে। টুর্নামেন্টের সব হেভিওয়েটদের বিদায় করে গ্র্যান্ডস্ল্যামের স্বপ্নই দেখছিলেন ফার্নান্দেজ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ফাইনালে পেরে ওঠলেন না ফার্নান্দেজ। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে অচেনা ফার্নান্দেজ এখন যেন টেনিস বিশ্বের মধ্যমণি। টুইটারে তাকে অভিনন্দন জানান রড লেভার, মার্তিনা নাভ্রাতিলোভার মতো কিংবদন্তিরা।
এই শিরোপা জয়ে ১৫০ নম্বর থেকে এক লাফে র্যাঙ্কিংয়ে ২৩ নম্বরে উঠে আসবেন রাদুকানু। হয়ে যাবেন ব্রিটেনের এক নম্বর। আর টুর্নামেন্টের প্রাইজমানি হিসেবে রাদুকানুর পকেটে ঢুকবে ১৮ লাখ পাউন্ড।
সারাবাংলা/এসএস
১৮ বছরে গ্র্যান্ড স্ল্যাম ইউএস ওপেন এমা রাদুকানু লায়লা ফার্নান্দেজ