৪ বলে ৪ উইকেট: রশিদ-মালিঙ্গার স্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন ক্যাম্পার
১৮ অক্টোবর ২০২১ ১৮:৩০
১৪ বছর আগের কথা। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে আগুন ঝরানো বোলিং করে ক্রিকেটবিশ্বকে প্রথমবারের মতো নতুন এক বিস্ময় উপহার দিয়েছিলেন শ্রীলঙ্কান পেস সুপারস্টার লাসিথ মালিঙ্গা। টানা ৪ বলে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। ১২ বছর পর আফগানিস্তানের তারকা স্পিনার রশিদ খান ফিরিয়ে এনেছিলেন সেই স্মৃতি, তবে সেটি টি-টোয়েন্টিতে। এর মাস সাতেক পর মালিঙ্গাই ফের টি-টোয়েন্টিতেও ৪ বলে ৪ উইকেট নেওয়ার নজির গড়েন। চলমান টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় দিনের প্রথম ম্যাচে সেই স্মৃতি ফিরিয়ে আনলেন আয়ারল্যান্ডের মিডিয়াম পেসার কার্টিস ক্যাম্পার।
টানা চার বলে ডাচ চার ব্যাটারকে তুলে নিয়েছেন ক্যাম্পার। এর মাধ্যমে টি-টোয়েন্ট বিশ্বকাপেও অজি সুপারস্টার ব্রেট লি’র পর প্রথম কোনো বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক তুলে নিলেন এই আইরিশ মিডিয়াম পেসার।
টুর্নামেন্টের তৃতীয় ম্যাচে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হয়েছিল আয়ারল্যান্ড। টসে জিতে নেদারল্যান্ডসই ব্যাটিং বেছে নিয়েছিল। ডাচ অধিনায়ক পিটার সিলারের সেই সিদ্ধান্ত যে খুব একটা ভুল ছিল না, ৯ ওভার শেষে ২ উইকেটে ৫০ রান সংগ্রহ করে সেটিই প্রমাণ করার চেষ্টা করছিলেন ব্যাটাররা। তবে দশম ওভারে গিয়েই সব হিসাব পালটে দিলেন ক্যাম্পার।
আরও পড়ুন- ক্যাম্পারের রেকর্ডে ডাচরা অলআউট ১০৬ রানে
ম্যাচে নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলটি ক্যাম্পার ওয়াইড দিয়েছিলেন। দ্বিতীয় বলটি কলিন অ্যাকারম্যান ড্রাইভ করেছিলেন, তবে সেটি থমকে যায় এক্সট্রা কভারে। তৃতীয় বলটি লেগ স্ট্যাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ব্যাট চালিয়েছিলেন অ্যাকারম্যান। কট বিহাইন্ডের জোরালো আবেদনে আম্পায়ার সাড়া না দিলে রিভিউ নেয় আয়ারল্যান্ড। আল্ট্রা এজে ব্যাটের স্পর্শ পাওয়া গেলে ম্যাচে প্রথম উইকেট পেয়ে যান ক্যাম্পার। ব্যাটিংয়ে আসেন নেদারল্যান্ডসের অন্যতম নির্ভরতা রায়ান টেন ডয়েসকেট। প্রথম বলেই এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েন তিনি।
ক্যাম্পারের হ্যাটট্রিক বলের সামনে দাঁড়ান স্কট এডওয়ার্ডস। ফুল লেন্থের বল আঘাত হানে তার সামনের পায়ে। উইকেটের গন্ধে সমন্বরে আবেদন করে আয়ারল্যান্ড, তবে নাকচ করে দেন রড টাকার। তবে আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ক্যাম্পার। ফের রিভিউ নেন। হক আইয়ের রিপ্লেতে ধরা পড়ে, বলটি লেগ স্টাম্পেই আছড়ে পড়ত। আর এরই মাধ্যমে আয়ারল্যান্ডের প্রথম কোনো বোলার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে হ্যাটট্রিক বাগিয়ে নিলেন ক্যাম্পার। শুধু তাই নয়, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপেই এটি মাত্র দ্বিতীয় হ্যাটট্রিক। এর আগে সেই ২০০৭ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেছিলেন অজি পেস মায়েস্ত্রো ব্রেট লি।
হ্যাটট্রিকের পর স্বাভাবিকভাবেই আয়ারল্যান্ড শিবিরে উচ্ছ্বাস। ক্যাম্পার নিজেই ভাসছিলেন সতীর্থদের অভিনন্দনে। তখনো হয়তো ভাবেননি, হ্যাটট্রিক পেরিয়ে আরও এক অনন্য অর্জনের পথেই রয়েছেন তিনি।
ওভারের পঞ্চম বলটিতে ভ্যান ডার মারউই ছিলেন স্ট্রাইক এন্ডে। ক্যাম্পার বল করেছিলেন অফ স্টাম্পের বেশ বাইরে। শট খেলতে গিয়েছিলেন মারউই। তা করতে গিয়ে বল স্টাম্পে টেনে নিয়ে গেলে চার বলে চার উইকেটপ্রাপ্তির অনন্য রেকর্ডের ভাগীদার হয়ে যান ক্যাম্পার।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের যত অঘটন
ক্যাম্পারের বোলিং তোপের পর অবশ্য ডাচদের ইনিংসের শেষ তিন বলেও পড়েছে উইকেট। এর মধ্যে ওভারের চতুর্থ বলে পিটার সিলার আর শেষ বলে বেন্ডন গ্লোভার ক্যাচ তুলে আউট হয়েছেন। তবে মাঝের, তথা ওভারের পঞ্চম বলটিতে লগান ফন বিক রান আউট হলে মার্ক অ্যাডেয়ারের হ্যাটট্রিকটি হয়নি। তবে আইরিশ বোলারদের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ২০ ওভারে ১০৬ রানে অলআউট হতে হয়েছে নেদারল্যান্ডসকে।
আরও ৩ ডাবল হ্যাটট্রিকের নজির
টি-টোয়েন্টির ইতিহাসেই এটি তৃতীয় ঘটনা। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি এই আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেই সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে প্রথম চার বলে চার উইকেট নেওয়ার নজির গড়েন আফগানিস্তানের রশিদ খান। ম্যাচের ষষ্ঠদশ ও নিজের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে কেভিন ও’ব্রায়ানকে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন রশিদ। নিজের পরবর্তী তথা ম্যাচের অষ্টাদশ ওভারের প্রথম তিন বলেই তিনি টানা তুলে নেন জর্জ ডকরেল, শেন গেটকেট ও সিমি সিংকে। এর মধ্যে ডকরেল ক্যাচ তুলে দেন মোহাম্মদ নবির হাতে, গেটকেট ধরা পড়েন উইকেটের পেছনে। আর সিমি সিংকে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে ফেলেন রশিদ।
মাস সাতেক পর, ওই বছরেরই ৬ সেপ্টেম্বর নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে টি-টোয়েন্টি সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে ডাবল হ্যাটট্রিক উপহার দেন লঙ্কান পেস ত্রাস লাসিথ মালিঙ্গা। ম্যাচের তৃতীয় ও নিজের দ্বিতীয় ওভারে তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম ও ষষ্ঠ বলে একে একে তুলে নেন কলিন মুনরো, হামিশ রাদারফোর্ড, কলিন ডি গ্রান্ডহোম ও রস টেলরের উইকেট। মালিঙ্গার মিডল স্টাম্প বরাবর ফেলা বল ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে আছড়ে পড়ে মুনরোর লেগ স্টাম্পে। রাদারফোর্ড পড়েন মিডল স্টাম্পে পিচ করা বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে। মালিঙ্গার তুখোর ইয়র্কার এলোমেলো করে দেয় গ্রান্ডহোমের স্টাম্প, যদিও চুলচেরা বিশ্লেষণে নো-বল থেকে রেহাই পেয়েছিল বলটি। আর শেষ বলটিতে কিউই ব্যাটিং লাইনআপে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য নাম রস টেলরও টিকতে পারেননি। নিখুঁত ইয়র্কারে এলবিডব্লিউয়ের আবেদন হলে আম্পায়ারকে সাড়া দিতে ভাবতে হয়নি দ্বিতীয়বার।
টানা ৪ বলে যে ৪ উইকেট নেওয়া যায়, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেটিও প্রথমবার দেখিয়েছিলেন মালিঙ্গাই। ২০০৭ সালের ওয়ানডে বিশ্বকাপে সুপার এইটে শ্রীলঙ্কার ম্যাচ ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। ম্যাচের শেষ ভাগে ৪৫তম ওভারের শেষ দুই বল এবং ৪৭তম ওভারের প্রথম দুই বলে উইকেট নিয়ে মালিঙ্গা দেখিয়েছিলেন, ডাবল হ্যাটট্রিকও সম্ভব। আর সেটি করতে গিয়ে তিনি একে একে তুলে নিয়েছিলেন শন পোলক, অ্যান্ড্রু হল, জ্যাক ক্যালিস আর মাখায়া এনটিনির উইকেট।
ভারতের আয়োজনে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এবারের বিশ্বকাপের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে দেশের জনপ্রিয় স্যাটেলাইট চ্যানেল জিটিভি। এছাড়াও বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইটে দেখা যাবে বিশ্বকাপের খেলা। অনলাইনে র্যাবিটহোলে খেলা দেখতে ব্রাউজ করুন www.rabbitholebd.com/
সারাবাংলা/টিআর
কার্টিস ক্যাম্পার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ডাবল হ্যাটট্রিক বিশ্বকাপে হ্যাটট্রিক