টিম ম্যানেজমেন্ট দেখলে মনে হয় রিহ্যাব সেন্টার: মাশরাফি
২৬ অক্টোবর ২০২১ ১৪:৫০
শ্রীলংকার বিপক্ষে বাংলাদেশের হারের দায় শুধু খেলোয়াড়দের দিতে রাজি নন মাশরাফি বিন মুর্ত্তজা। দলের হারে টিম ম্যানেজমেন্টের অবহেলাকে বড় করে দেখছেন বাংলাদেশের সাবেক এই অধিনায়ক। নিজ সময়ে দেশের অন্যতম সেরা এই পেসারের বক্তব্য— এখন টিম ম্যানেজমেন্ট দেখলে মনে হয় একটা রিহ্যাব সেন্টার, যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকার সব চাকরি না পাওয়া কোচগুলো একসঙ্গে আমাদের রিহ্যাব সেন্টারে চাকরি করছে। এদের বাদ দেওয়া আরও বিপদ, কারণ চুক্তির পুরো টাকাটা নিয়ে চলে যাবে। তাহলে দাঁড়াল কি, তারা যতদিন থাকবে আর মন যা চাইবে, তাই করবে।
নিজের ব্যক্তিগত ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে এসব কথা ছাড়াও নানান প্রশ্নও ছুঁড়ে দিয়েছেন টাইগারদের রঙিন পোশাকের সর্বকালের সেরা অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্ত্তজা।
বিশ্বকাপের সুপার টুয়েলভে লংকানদের বিপক্ষে ম্যাচের ১০ ওভার পর্যন্তও নিয়ন্ত্রণে ছিল বাংলাদেশ দল। এরপরেই ইনিংসের ১২ নম্বরে ওভারে নিজেই বোলিংয়ে আসেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ এবং পরের দুই ওভার করেন যথাক্রমে আফিফ হোসেন এবং মাহমুদউল্লাহ। আর এই তিন ওভারেই ঘুরে যায় ম্যাচের ভাগ্য। ম্যাচ শেষে অধিনায়ক রিয়াদ কেন মূল বোলার নাসুম আহমেদ কিংবা সাকিবকে আনেনি তা নিয়ে চলছে সমালোচনার ঝড়। আর এখানেই মাহমুদউল্লাহর সিদ্ধান্তের পেছনে কোচের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মাশরাফি।
পঞ্চম উইকেটে চারিথ আসালাঙ্কা ও ভানুকা রাজাপাকসার দুর্দান্ত জুটির শুরুতে মাহমুদউল্লাহ নিজে বল করেন দুই ওভার, এক ওভার করান তিনি আফিফ হোসেনকে দিয়ে। ওই তিন ওভারে রান আসে ৩৬। চাপটা তাতে আলগা হয়ে যায়, দুই লংকান ব্যাটার থিতু হয়ে যান। এবং শেষ পর্যন্ত কাল হয়ে দাঁড়ায় এই জুটিই। এর মধ্যে আবার আফিফের কতা ওভারে ক্যাচ ফেলে দেন লিটন দাস। মাশরাফি এখানে দেখছেন দুর্ভাগ্যের ছোঁয়া। আর সামগ্রিকভাবে অধিনায়ক ও ফিল্ডারের পাশাপাশি তিনি দায় দেখছেন কোচেরও।
মাশরাফি বলেন, ‘ম্যাচের ৯.৪ ওভার ৭৯ রানে ওদের ৪ উইকেট, ঠিক তখন আইসিসি’র নিয়ম অনুযায়ী ড্রিংকস ব্রেক। তার মানে কোচ মাঠের ভিতর আসবে। আমাদের কোচও এসেছিল। তাহলে উনি এসে রিয়াদের (মাহমুদউল্লাহ) সাথে কি কথা বলেছিল? যদি বলে থাকে, তাহলে কি সব দায় রিয়াদের?’
‘মানলাম, অন ফিল্ড ক্যাপ্টেন’স কল ইজ ফাইনাল। তবে গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের ক্রাঞ্চ মোমেন্টে কি কোচ ডিসকাশন করে না? ক্যাপ্টেন তখন বিভিন্ন বিষয়ে চাপে থাকে। তার প্ল্যান কী, এটা কি জানতে চেয়েছিল কোচ? আর যদি কথা হয়ে থাকে, তাহলে কি কোচের প্রেস হ্যান্ডেল (প্রেস কনফারেন্সে) করা উচিত ছিল না? কারণ রিয়াদের ভুলটা ধরা হয়েছে ঠিক ঐ সময় থেকেই।’—প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন মাশরাফি।
আফিফের এক ওভারে ১৫ রান দেওয়ার সময় ক্যাচ ফেলে দেন লিটন। তার ক্যাচ ছাড়ার জন্য কোনো অজুহাত দেখেন না মাশরাফি। তবে আঙুল তুলছেন ফিল্ডিং কোচ রায়ান কুকের দিকে। প্রধান কোচ ডমিঙ্গোর মতো কুকও দক্ষিণ আফ্রিকান। বাংলাদেশের দায়িত্ব পাওয়ার আগে স্রেফ একটি একাডেমির কোচ ছিলেন তিনি, উল্লেখযোগ্য কোনো অভিজ্ঞতা তার ছিল না। এছাড়া দলের ফিজিও জুলিয়ান কালেফাতোও দক্ষিণ আফ্রিকান। ডমিঙ্গো কোচ হওয়ার পর সেই সময়ের বোলিং কোচ শার্ল ল্যাঙ্গাভেল্ট ছিলেন দক্ষিণ আফ্রিকান।
কোচদের দিকে আঙুল তুলে মাশরাফি বলেন, ‘এখন টিম ম্যানেজমেন্ট দেখলে মনে হয় একটা রিহ্যাব সেন্টার, যেখানে সাউথ আফ্রিকার সব চাকরি না পাওয়া কোচগুলো একসাথে আমাদের রিহ্যাব সেন্টারে চাকরি করছে। এদের বাদ দেওয়া আরও বিপদ, কারণ চুক্তির পুরো টাকাটা নিয়ে চলে যাবে। তাহলে দাঁড়াল কি, তারা যতদিন থাকবে আর মন যা চাইবে, তাই করবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘হেড কোচ এক-এক করে নিজ দেশের সবাইকে আনছে, এরপর যারা অস্থায়ীভাবে আছে, তাদেরও সরাবে আর নিজের মতো করে ম্যানেজমেন্ট সাজাবে। তাও মেনে নিলাম কিন্তু রাসেল (হেড কোচ) ম্যানেজমেন্টের জন্য যেভাবে স্টেপ আপ করে, মূল দলের জন্য তাহলে লুকিয়ে কেন? কেন তামিম, মুশফিক, রিয়াদ ভালো থাকে না? এটা ঠিক করা কি তার কাজ না?’
তবে কোচিং স্টাফদের এক হাত নিলেও দলের ক্রিকেটারদের ছেড়ে কথা বলেননি মাশরাফি। তিনি বলেন, ‘তারপরও দায় খেলোড়ারদেরকেই নিতে হয়/হবে। এটাই স্বাভাবিক, কারণ মাঠে তারাই খেলে। কিন্তু একটা বিষয় পরিষ্কার যে, খেলোয়ারদের সেরকম পরিবেশ করে দিতে হবে। তাদেরকে বোঝাতে হবে, তাদের বিপদে কেউ পাশে না থাকুক, অন্তত টিম ম্যানেজমেন্ট থাকবে।’
‘আমি আমার ক্যাপ্টেন্সির শেষ প্রেস কনফারেন্সে বলেছিলাম, এই দলের কোচ যে-ই হোক না কেন, এখন এই দলের রেজাল্ট করার সময়, এক্সপেরিমেন্টের না। কোচের চাহিদা মেটানোর আগে আমাদের দেশের স্বার্থ আগে দেখতে হবে। কারণ, ক্রিকেট দেশের মানুষের কাছে এখন স্রেফ খেলা নাই, রীতিমতো আবেগে পরিণত হয়েছে। ভালো করুক আমার প্রিয় দল। আল্লাহ সহায় হোন আমাদের।’—যোগ করেন মাশরাফি।
ভারতের আয়োজনে সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ওমানে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ২০২১ সালের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এবারের বিশ্বকাপের সবকটি ম্যাচ সরাসরি সম্প্রচার করবে দেশের জনপ্রিয় স্যাটেলাইট চ্যানেল জিটিভি। এছাড়াও বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় অনলাইন প্ল্যাটফর্ম র্যাবিটহোলের ওয়েবসাইটে দেখা যাবে বিশ্বকাপের খেলা। অনলাইনে র্যাবিটহোলে খেলা দেখতে ব্রাউজ করুন https://www.rabbitholebd.com/
সারাবাংলা/এসএস